যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
নারকেল দিয়ে তেল বানিয়ে তা থেকে নানারকম প্রসাধনী বানান বিদিশা বসু। পাশাপাশি নারকেলের খোলা দিয়ে বানিয়ে ফেলেন অন্দরসজ্জার বিভিন্ন সামগ্রী।
একটা জিনিস দিয়ে অনেক কিছু বানানোই বিদিশা বসুর নেশা। ফেলে দেওয়া জিনিস রিসাইকেল করে তাতে নতুন রূপদান, এটাই তাঁর গৃহসজ্জার মন্ত্র। আর সেই থেকেই এবার নারকেল নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। অন্দরসজ্জা বিদিশার পেশা। সেই সূত্রে নারকেলের খোলা নিয়ে কাজ করছেন তিনি বহু বছর। সেই কাজ করতে গিয়ে দেখেন প্রচুর পরিমাণে নারকেল নষ্ট হয়। তাঁর কথায়, ‘নারকেলের খোলা বাদ দিয়ে যখন নারকেলটা কুরিয়ে রেখে দেওয়া হয় তখন তা খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যায়। আমরা বাড়িতে রান্নায় তার কিছুটা ব্যবহার করার চেষ্টা করতাম। খানিকটা দিয়ে মিষ্টি বানিয়ে ফেলতাম, কিছুটা আবার বাড়ির পরিচারিকাদের দিয়ে দিতাম। কিন্তু তাতেও অপচয় খুব একটা আটকানো যাচ্ছিল না। কীভাবে নারকেলের অপচয় আটকানো যায়? এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মনে হল নারকেলের খোলা দিয়ে যখন অন্দরসজ্জার কাজ হচ্ছে, তখন নারকেলের পাল্প দিয়ে তেল বানালে কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই এই কাজটা শুরু করেছিলাম।’
প্রথমে ব্যাপারটা একটা এক্সপেরিমেন্টের মতো ছিল। তাই মাত্র তিনটে নারকেল ভেঙে তার পাল্প ফুটিয়ে তেল বার করার চেষ্টা করেন বিদিশা। খুবই অল্প পরিমাণে তেল বেরল, কিন্তু যেটা বেরল সেটা এতই খাঁটি যে তাঁর মনে হয় এই তেল আরও বেশি পরিমাণে বার করতে পারলে অনেকের কাজে লাগবে। বিদিশা বললেন, ‘আজকাল অনেকেই দাঁতের ও মাড়ির সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের জন্য নারকেল তেলের হালকা মাসাজ খুবই উপকারী। অল্পবয়সি মেয়েদের অ্যাকনে, ব্ল্যাক স্পট সারাতে এই তেলের ব্যবহার জরুরি। মুখে শুধু মেখে রেখে দিলেই হল, আর কিচ্ছু করতে হয় না। ত্বকে র্যাশ বেরলে রাতে এই তেল মেখে শুলে উপকার পাওয়া যায়। ঠোঁট ফাটলে যে কোনও বাম বা ক্রিমের তুলনায় এই তেল বেশি কার্যকর। এছাড়া যাঁরা রান্না করতে ভালোবাসেন তাঁদের বেলায় বেকিংয়ের জন্য এই তেল অনবদ্য।’ মাথার চুলের ক্ষেত্রেও নারকেল তেলের প্রচুর উপকার, বললেন বিদিশা। বিশেষত ড্রাই স্ক্যাল্প বা চুলের ডগা ফাটার সমস্যা থাকলে এই তেল রাতে মাসাজ করে শুয়ে পরের দিন ধুয়ে ফেললে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। পুরুষরাও দাড়ি কামানোর পর ময়েশ্চারাইজিং লোশনের বদলে নারকেল তেল লাগাতে পারেন। আর যাঁরা ঘরোয়া উপায়ে বডি স্ক্রাবিং করতে চান তাঁরাও এই তেলের সাহায্য নিতে পারেন। নারকেল তেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন মাস্ক হিসেবে ভালো কাজ করবে। এরপর একটু অন্দরসজ্জার কথাও বললেন তিনি। ঘর সাজানোর জন্য যাঁরা প্রাকৃতিক জিনিস পছন্দ করেন তাঁরা নারকেলের খোলা দিয়ে ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন ঘরে। এছাড়া নারকেলের দড়ি দিয়ে ওয়াল হ্যাঙ্গিং, বা ওয়াল ডেকরও বানানো যায়। নারকেলের দড়ি ফ্রেম করে কাঠের প্যানেলিং করে লাগাতে পারেন দেওয়ালে। এইভাবে একটা নারকেল থেকে তিন চার রকম জিনিস বানানো হয়। এবং সব কিছুই নিজে ডিজাইন দিয়ে, নিজের তত্ত্বাবধানে বানান বিদিশা। শুধু তাই নয়, নারকেলের পাল্প থেকে নারকেল তেল কীভাবে বানানো হয় সেই পদ্ধতিটাও ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের শেখান বিদিশা।
যোগাযোগ: ৯৮৩১৩০৮৭৮৪
হাতে তৈরি প্রসাধনী সুচির
সবরকম কেমিক্যাল বাদ দিয়ে হ্যান্ডমেড প্রসাধনী। এভাবেই ক্রেতাদের মন জয় করছেন সুচেতা চক্রবর্তী।
অনেক দিন ধরেই নানা হ্যান্ডমেড প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করছেন সুচেতা চক্রবর্তী। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, ত্বকের সমস্যার চেয়েও চুলের সমস্যা নিয়ে মানুষ এখন বেশি জর্জরিত। খুশকি, খসখসে স্ক্যাল্প, কোভিড পরবর্তী সময়ে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা, অসময়ে চুলে পাক ধরা, টাক পড়ার প্রবণতা— এমন নানাধরনের সমস্যা ঘুরে ফিরে আসছে, জানালেন তিনি।
পরপর এধরনের সমস্যার কথা জানতে পেরে সুচেতা তাঁর ব্র্যান্ড সুচি’স থেকে তৈরি করেছেন এমন নানা প্রসাধনী যেগুলিতে কোনও কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার হয় না, তাই তার উপযোগিতাও বেশি। পাঁচ হাজার বছরের পুরনো আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি মেনে তিনি তৈরি করেছেন দু’টি হেয়ার অয়েল। যেমন ফেনুগ্রিক কারি লিভস কোকোনাট হেয়ার অয়েল ও হার্ব-সমৃদ্ধ নারকেল তেল। এই নারকেল তেল কেরলের ওয়েনাড থেকে আনিয়ে তাতে যোগ করছেন ১৩টি উপাদান। সেটিকে রোদ্দুরে এক সপ্তাহ রেখে বাড়িতেই তৈরি করছেন এই বিশেষ তেল। এই তেলে কী কী উপকার পাবেন? সুচেতা জানালেন, স্ক্যাল্পের সুস্থতা বজায় থাকবে, ডেড হেয়ার ফলিকল চলে যাবে, অকালপক্কতা কমবে, চুল হবে আরও উজ্জ্বল, হেয়ারফল কমবে, গ্রোথও ভালো হবে, ফ্রিজি হেয়ার স্মুদ হবে, খুশকি কমবে, কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ
করবে এটি।
তেলের পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছেন কফি স্ক্যাল্প স্ক্রাব। সুচেতা বললেন, স্কিনে ডেড সেল দূর করার কথা তো সবাই জানে, স্ক্যাল্পে ডেড সেল দূর করার কথা কি জানেন? এর জন্যই তিনি বানিয়েছেন কফি স্ক্যাল্প স্ক্রাব যাতে স্ক্যাল্পের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। তেল, ময়লা, খুশকি, ডেড সেল দূর করতে কফি এমনিতেই খুব ভালো উপকরণ। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তো থাকেই, থাকে আরও নানা পুষ্টিকর উপাদান যা চুলের গ্রোথের জন্য উপকারী।
চুলের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে হেয়ার কালারিং নিয়েও অনেকে তাঁর কাছে বিনা কেমিক্যালের প্রসাধনী খোঁজেন। তাঁদের জন্য সুচেতা এনেছেন অর্গ্যানিক হেনা। হিবিসকাস পাউডার আর বিটরুট পাউডার মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই হেনা। কালারিং-এর জন্য এটা দারুণ অপশন, বলছিলেন তিনি। হিবিসকাস পাউডার গোড়া থেকে চুল মজবুত করে, অকালপক্কতা কমায়, গ্রোথও বাড়ে।
তাঁর সংগ্রহে আছে প্যারাবেন এবং সালফেট ফ্রি শ্যাম্পুও। ফ্রিজি ও ড্রাই হেয়ারের জন্য তৈরি করেছেন হাইড্রেটিং শ্যাম্পু, খুশকি রুখতে আছে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু, কেরাটিন ট্রিটমেন্ট ও চুলের গ্রোথের জন্য পাবেন হিবিসকাস শ্যাম্পু। ব্যবহারকারীর চাহিদামতো অর্গ্যানিক হেয়ার মাস্কও তৈরি করছেন তিনি। ড্রাই হেয়ার, খুশকি এবং তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের জন্য আছে অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্ক। এটা তিনি তৈরি করেছেন অ্যালোভেরা জেল, নারকেল তেল, ব্ল্যাক সিড অয়েল, অলিভ অয়েল, মোরোক্কান আর্গান অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, জোজোবা অয়েল এবং আরও কিছু এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে। চুল নরম রাখতে এই মাস্ক দারুণ উপযোগী। কোঁকড়া চুল যাঁদের, বা যাঁদের মনে হয় চুল কিছুতেই বাগ মানানো যায় না, তাঁদের জন্য এই মাস্ক খুবই কাজে দেবে।
যোগাযোগ: ৮৬১৭৭০১৩৬৬