কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
ক্যালেন্ডার বলছে আজ মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে। বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের থেকে আলাদা কি? আসলে বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়া ছাড়া আলাদা বিশেষ কিছু হয় না বোধহয়। তবে সচেতনতার পাঠ নেওয়া জরুরি ছোট থেকেই। আর তা মেনে চলা জরুরি বছরের প্রতিটি দিন।
ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা সহ এই সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে ২০১৭ থেকে লাগাতার কাজ করছেন বাঁশদ্রোণীর তরুণ শোভন মুখোপাধ্যায়। ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। পাঁচ বছরে কতটা বদলেছে পরিস্থিতি? শোভন বললেন, ‘পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত, বহু মানুষ যেমন আজও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, তেমনই শুধু গ্রাম বা প্রান্তিক এলাকা নয়, শহুরে মানুষের মধ্যেও মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল নিয়ে নানা সংস্কার রয়েছে। গ্রামে যখন সচেতনতা শিবিরে যাই, প্রাথমিক কথাবার্তার পর বেশিরভাগ মহিলা সমস্যার কথা স্পষ্ট বলতে পারেন। অথচ শহরই কিন্তু এখনও খোলাখুলি কথাবার্তার জায়গায় গ্রামের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। আশার কথা, বহু পুরুষ অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েদের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে অনেকে কাজটা সাময়িকভাবে করছেন। সুদূরপ্রসারী করতে পারছেন না।’
মেয়েদের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়ানোর এই স্বপ্ন যখন দেখেছিলেন শোভন, তখন ঢাল হয়ে ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা। কিছুদিন আগেই মাকে হারিয়েছেন শোভন। তবে লক্ষ্যে তিনি অবিচল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করেছেন ‘মা ফাউন্ডেশন’। সেখানে এই সংক্রান্ত সচেতনতা আরও কয়েক গুণ বাড়াতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। কী সেই নতুন কাজ? শোভন জানালেন, গত এক বছর ধরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কাজ হচ্ছিল। যার পোশাকি নাম ‘ঘরে ঘরে স্যানিটারি ন্যাপকিন’। ‘আমি বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতা শিবির করি। সেটা করতে গিয়ে দেখি, মেয়েরা বলছে ‘ক্যাম্প তো করছ। এর থেকে সুরাহা কী হবে? দোকান থেকে এত দাম দিয়ে ন্যাপকিন কেনা সম্ভব নয়।’ সেখান থেকে কম দামে একই মানের দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস শুরু,’ বললেন তিনি। তবে এটা তাঁর কোনও বিজনেস মডেল নয়। গোটা রাজ্য জুড়ে ১২০টা ইউনিটে মেয়েদের দিয়ে কাজ করান তিনি। গুজরাতের একটি সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়েছে বলে জানালেন শোভন। সংস্থার তৈরি ন্যাপকিন তাঁর বাড়িতে আসে। সেখান থেকে বিভিন্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে মেয়েরা প্যকিং করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন। এভাবে শিলিগুড়ি থেকে সুন্দরবন, পাঁচ লক্ষ মেয়ের কাছে প্রতি মাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন
পৌঁছে যায়।
এই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমেই নতুন করে সচেতনতার পাঠ দেওয়া শুরু করেছেন শোভন। তাঁর কথায়, ‘এতদিন ধরে স্বচ্ছ প্যাকেট করা হতো। প্রত্যন্ত গ্রামে এগুলো যায়। সেই প্রান্তিক জায়গায় মেয়েদের সামাজিক কী কী সমস্যায় পড়তে হয়? পাচার, বাল্যবিবাহ, কন্যা সন্তান জন্মানো মানেই অত্যাচার, পারিবারিক হিংসা, শিশুশ্রমের মতো সমস্যা রয়েছে। এগুলো নিয়ে বার্তা ওই প্যাকেটেই থাকে। ধরুন কোনও নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে, কেউ তা আটকাতে চান। ওই প্যাকেটের উপর বাংলাতেই একটা ফোন নম্বর আছে। সেখানে ফোন করলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা মেয়েটির বিয়ে আটকাতে পারেন। সে আরও পড়াশোনা করতে পারবে, একটা সুন্দর জীবন পাবে। কোনও মেয়ে পাচার হচ্ছে যদি বুঝতে পারেন কেউ, ওই প্যাকেটের উপর লেখা নম্বরে ফোন করবেন। অ্যান্টি ট্রাফিকিং একটি সংস্থার নম্বর আছে সেখানে। তারা সাহায্য করতে সক্ষম।’
এভাবেই নানা দিক থেকে মেয়েদের সচেতন করার চেষ্টায় এই তরুণ। মেয়েদেরও কিন্তু একইভাবে এগিয়ে দিতে হবে বন্ধুত্বের হাত।