কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
যে কোনও উৎসবে মেতে উঠতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। ভিন্ন সংস্কৃতিকে আপন করে নিতেও তারা ভীষণ পটু। তাই তো পুজো থেকে ক্রিসমাস সর্বত্র বাঙালিকে খুঁজে পাবেন। আজ অবশ্য আমাদের আলোচনা বিদেশে বাঙালিদের নিয়ে। সেখানে মহিলারা কেমনভাবে ক্রিসমাস কাটান? প্রশ্ন রেখেছিলাম বিদেশে বহুকাল বসবাসকারী কয়েকজন বাঙালি নারীর কাছে। সকলেই একবাক্যে বললেন, বিদেশে থাকতে থাকতে তাঁরা সবাই বিদেশি সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছেন। ফলে ক্রিসমাসের জন্য অনেকেই সারা বছর প্রতীক্ষা করেন। বাড়ি সাজান, উপহার কেনেন, ভালোমন্দ রান্না করেন এবং উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন।
আলো দেখে ঘোর লেগেছিল: আলোলিকা মুখোপাধ্যায়
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আমেরিকায় রয়েছেন আলোলিকা মুখোপাধ্যায়। বিদেশে ক্রিসমাস উদ্যাপনের কথা শুনে বললেন, ‘সেই কোন ছোটবেলায় এদেশে প্রথম ক্রিসমাসের সাজগোজ আর আলো ঝলমলে পরিবেশ দেখে ঘোর লেগেছিল চোখে।’
হাড় কাঁপানো শীতের সেই সন্ধ্যায় তাঁরা রক ফেলার বিল্ডিংয়ের সামনে জমায়েত হয়েছিলেন বড় ক্রিসমাস ট্রি-তে আলো দেখার জন্য। ওভারকোটের উপর বরফ পড়ছে। আর আলোলিকা মুগ্ধ চোখে সান্তাক্লজ আর ক্রিসমাস ট্রি-তে সাজানো আলো দেখছেন। গাড়ি কোথায় রেখেছেন সেদিকেও খেয়াল ছিল না। এমনই প্রচণ্ড মুগ্ধতা ঘিরে ধরেছিল তাঁকে।
তারপর শীতের রাতে গাড়ি খুঁজে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিরে ডিনারে যাওয়া— সেও এক গল্পই বটে। এরপর বহু বছর কেটে গিয়েছে। তাঁরাও ক্রমশ খ্রিস্ট উৎসবের জাঁকজমকের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েছেন। বাড়িতে বাচ্চাদের জন্য কেক আর কুকিজ বানানো শিখেছেন আলোলিকা। ক্রিসমাস ‘উইশ লিস্ট’ থেকে উপহার কিনেছেন, ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছেন। তবু আজও ক্রিসমাস বলতে তাঁর কাছে সেই মনোমুগ্ধকর স্মৃতিই উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়েছে। ‘তবে এখন আর ক্রিসমাসকেই এদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব বলা যাবে না,’ বললেন তিনি। ‘আমেরিকায় এখন সর্বধর্ম সমন্বয়। ফলে হোয়াইট হাউস তো দেওয়ালিতেও সেজে ওঠে। রীতিমতো উৎসব পালিত হয় ওই সময়।’ কিন্তু গত দু’বছর ধরে কোথায় উৎসব? কী-ই বা উদ্যাপন? সবাই কোভিড আতঙ্কে দিশাহারা। এই ক্রিসমাসে তাই সান্তাক্লজের কাছে একটাই উপহার চান আলোলিকা, ‘এই ঝড় থেমে যাক, পৃথিবী আবার নিজ মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠুক।’
হোয়াইট ক্রিসমাসের আশায় থাকি: সুস্মিতা গিরি
বিবাহসূত্রে আপাতত মার্কিন দেশের ইস্ট কোস্টের নিউ জার্সি শহরের বাসিন্দা সুস্মিতা গিরি। বললেন, আমেরিকায় আসা ইস্তক তাঁর হ্যালোউইন থেকে নিউ ইয়ার বেশ আনন্দে উৎসবে কেটে যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই ক্রিসমাস। সুস্মিতাদের গোটা পাড়াটাই তখন আলোয় আলো হয়ে ওঠে। ছোট বড় সব বাড়িতেই আলোর সাজ। রীতি অনুযায়ী সুস্মিতাও স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির জন্য বিভিন্ন ডেকরেশন কিনে ফেলেছেন। প্রতি বছরই সেই অন্দরসাজের জিনিস বাড়তে থাকে।
ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকেই পাড়ায় পাড়ায় অস্থায়ী ক্রিসমাস স্টোর বা দোকান বসে যায়।
সেখানে আলো, চকোলেট, কেক, পুডিং, পাই থেকে শুরু করে উপহারের বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। শুধুই যে ছোটখাট দোকান তা নয়, এলাকা জুড়ে বিশাল ক্রিসমাস মার্কেটও সাজানো হয়। নানা ধরনের উপহারে ঠাসা সেইসব মার্কেট। প্রথম দিকে বাড়ির জন্য যখন মনখারাপ লাগত তখন তা ভুলতে ক্রিসমাসের আনন্দমুখর সময়ের প্রহর গুনতেন সুস্মিতা।
এখন বাড়ি সাজানো, ক্রিসমাস ট্রি কেনা ও সাজানো আত্মীয় বন্ধুদের জন্য উপহার কেনা, সবই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন তাঁরা পরিবারসহ। একবার ওহায়োতে গিয়েছিলেন বন্ধুর বাড়ি। আট ঘণ্টার ড্রাইভ শেষে বন্ধুর বাড়ি পৌঁছেছিলেন ক্রিসমাস উদ্যাপনের জন্য। গোটা পথেই সাজগোজের প্রাচুর্য। এমন সুন্দর সাজগোজ দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছিল টেরও পাননি সুস্মিতা।
‘বিদেশে ক্রিসমাসের কথা যখন উঠলই তখন যে জায়গাটার উল্লেখ অবশ্যই করা উচিত তা হল নিউ ইয়র্কের ডাইকার হাইটস,’ বললেন সুস্মিতা। এই অঞ্চলে প্রতিটি বাড়িই যেন ছবির মতো সাজানো থাকে। প্রতি বছর তাই সুস্মিতাদের ক্রিসমাস ট্র্যাডিশন ডাইকার হাইটস ভ্রমণ। আগের চেয়ে সাজের ধরন কতটা বদলাল, কোন বাড়িতে কত বেশি আলো লাগানো হল— পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি তুলে ডকুমেন্টেশন করে রাখেন সুস্মিতা। এছাড়া বাড়িতে একটু ভালোমন্দ রান্না হয়।
বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা আর ক্রিসমাসের এভারগ্রিন সিনেমা দেখা সবই ওঁদের ক্রিসমাস ট্র্যাডিশন। যে ছবিটি প্রতি বছর ক্রিসমাসে ওঁরা সবাই মিলে অবশ্যই দেখেন, তা হল ‘ইট’স আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ।’ আর আছে ফ্রুটকেক বানানোর তোড়জোড়।
ক্রিসমাসের অনেক আগে থেকেই কেকের সাজসরঞ্জাম কেনেন সুস্মিতা। আর একটু তুষারপাতের পর যদি ভোরে উঠে চারদিক সাদা বরফের আচ্ছাদনে ঢাকা দেখতে পান তাহলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। বললেন, ‘হোয়াইট ক্রিসমাসের সৌন্দর্য যেন অপার্থিব। কোনও কিছুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। তাই তারই আশায় থাকি প্রতি বছর।’
প্রতিটা বছর একে অপরের চেয়ে আলাদা: রূপাঞ্জনা দত্ত
‘আমরা কেউ ক্রিশ্চান নই। তবু অদ্ভুত এক উত্তেজনা হয় ক্রিসমাস এলেই। আর প্রতি বছরই আগেরটির চেয়ে আলাদা হয়ে ওঠে আমাদের ক্রিসমাস উদ্যাপন। অন্তত গত পনেরো বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে।’ ইংল্যান্ডে ক্রিসমাস বিষয়ে বলতে গিয়ে এমন কথাই বললেন রূপাঞ্জনা দত্ত। এক বছর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনের সঙ্গে গতানুগতিক ক্রিসমাস ডিনারের আয়োজন করেছিলেন রূপাঞ্জনা। বাড়িতেই বানানো হয়েছিল সেসব পদ।
তারপর বিদেশিদের অনুকরণে ক্রিসমাস মুভি চালিয়েও বসেছিলেন তাঁরা সদলবলে। আবার কোনও এক বছর একটু অন্যরকম স্বাদ নিতে ক্রিসমাসের দিন বেরিয়ে পড়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। সে আবার আর এক ধরনের আনন্দ। দোকানপাট, শপিং মল, রেস্তরাঁ তো বটেই, এমনকী, সিনেমা হল-ও বন্ধ! সবাই যে যার বাড়িতে ক্রিসমাসের আনন্দ উপভোগ করতে ব্যস্ত। ‘ইংল্যান্ডে ক্রিসমাস পুরোপুরিই ঘরোয়া উৎসব,’ বললেন রূপাঞ্জনা। ‘ওই দিন কেউ বাড়ির বাইরে বিশেষ একটা বের হয় না। ফলে দোকান বাজারও সব বন্ধই থাকে। গোটা দেশ জুড়ে একটা ছুটির মেজাজ। সারাদিন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর পর কেউ হয়তো বা রাতের শহরে গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরন আলো দেখার জন্য। কিন্তু তাঁরাও আবার আলো দেখে বাড়ি ফিরে যান। ডিনারের আয়োজন আবারও বাড়িতেই জমে ওঠে।’ তাঁর কথায়, ‘গত বছর অবশ্য ক্রিসমাসের গোটা আনন্দটাই মাটি হয়ে গিয়েছিল কোভিড পরিস্থিতির জন্য। সবাই ভয়ে আতঙ্কে গৃহবন্দি।’ তার আগে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ক্রিসমাসের সময় ঘুরেছেন তিনি। ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, সুইৎজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালির মতো শহরে ক্রিসমাসের সময় কাটিয়েছেন রূপাঞ্জনা। এবং প্রতিটি শহরেই দেখেছেন ক্রিসমাসের বিভিন্ন রূপ। সব দেখে তাঁর মনে হয়েছে বিদেশিদের কাছে ক্রিসমাস একটা উৎসব। অনেকটা আমাদের দুর্গাপুজোর মতো। সেখানে ধর্ম ছাপিয়ে সংস্কৃতি বড় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি পরিবার তাঁদের নিজস্ব ট্র্যাডিশন তৈরি করে এই উৎসবকে ঘিরে। তাই এক এক জায়গায় ক্রিসমাস এক একরকম। কোথাও হয়তো ক্রিসমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই ক্রিসমাস উদ্যাপন শুরু হয়ে যায়। তখনই সবাই দেখা করেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন একসঙ্গে। কোথাও বা ক্রিসমাসের দিন একটা বাড়িতে জমায়েত হয়ে আড্ডা বসে। কিন্তু খাবার বানিয়ে নিয়ে আসেন সকলে। তবে ক্রিসমাস মার্কেটের কথা যদি ওঠে তাহলে রূপাঞ্জনার দেখা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্রিসমাস মার্কেট আয়োজিত হয় কোপেনহেগেনের ট্রিভোলি শহরে। ফুল, মাংস, মদ, উপহার সবই যেন অফুরন্ত সেখানে। ‘আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার মার্কেট ঘিরে একটা অদ্ভুত আত্মীয়তার পরিবেশ থাকে। সম্পূর্ণ অচেনা লোকও একে অপরের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যায়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন একটা গভীর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ সবাই। সেই আত্মীয়তায় চেনা অচেনা সকলেই মিলিত। এও এক ঐতিহ্য, ভিন্ন স্বাদের এক রীতি,’ ক্রিসমাসের গতানুগতিকতা ছাপিয়ে সেই ঐতিহ্য রূপাঞ্জনার মনে গেঁথে গিয়েছে।
যস্মিন দেশে যদাচার: বিদিশা বাগচী
মার্কিন দেশের মিশিগান শহরের বাসিন্দা বিদিশা বাগচি। বহু বছর প্রবাসে থাকলেও তাঁর কাছে কিন্তু আজও ক্রিসমাস বা বড়দিন পার্ক স্ট্রিটময়। পার্কস্ট্রিটের আলো, জাঁকজমক ইত্যাদিই তাঁর স্মৃতি জুড়ে রয়েছে এখনও। বিদিশার কথায়, ‘মিশিগানকে বরফের স্বপ্নপুরী বললেও ভুল হবে না। তাই ক্রিসমাস এখানে শ্বেতশুভ্র। আর সেই হোয়াইট ক্রিসমাসের সৌন্দর্যই আলাদা।’ ক্রিশ্চানদের জন্য ক্রিসমাস এক মিলন উৎসব। ২৪ তারিখ দুপুরের পর থেকেই তাই তাদের ফ্যামিলি টাইম শুরু হয়ে যায়। আর ২৫ তারিখ তো যে যার নিজের বাড়িতে ব্যস্ত। তবে বিদিশাদের মতো হিন্দু বাঙালিদের কাছে ক্রিসমাস এক নিছক ছুটির দিন। বাইরে সব দোকান বাজার রেস্তরাঁ বন্ধ থাকে বলেই তাঁরাও এই দিনটা বাড়িতেই কাটান। আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, হইচই কিছুরই অভাব থাকে না। সঙ্গে বাড়তি থাকে আলোর সাজ। গোটা বাড়িটাই আলো দিয়ে সাজান বিদিশা। আবার রান্নাঘরের চিমনি দিয়ে সান্তাক্লজের আসার ব্যবস্থাও করেন। বাচ্চা থেকে বুড়ো, বাড়ির সব সদস্যের জন্য কিছু না কিছু উপহার আনেন প্রতি বছর। বিদিশা সাজাতে ভালোবাসেন। ফলে তাঁদের বাড়ির ক্রিসমাস ট্রি-ও প্রতি বছর নতুন সাজে সেজে ওঠে। আর সেই নতুন সাজে মুগ্ধ হয়েই নাকি সান্তা ক্লজ তাঁর উপহারের ঝুলি উপুড় করে দিয়ে যান বিদিশার বাসস্থানে! শুধু তা-ই নয়, বাড়ির সকলের পছন্দ ও ইচ্ছের কথা মাথায় রেখে চলে বিদিশার ক্রিসমাস শপিং। জামাকাপড় তো থাকেই, থাকে জুতো, বই, ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র, ডিভিডি ইত্যাদি। বিদিশা বললেন, ‘প্রথম প্রথম এই দেশের উৎসবের বহর দেখে অবাক লাগত। এ আবার কেমন উৎসব যেখানে বাইরে খাওয়া নেই, শপিং করতে যাওয়া নেই, সিনেমা দেখা নেই— শুধুই বাড়িতে আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া! কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আমরাও তাই সারাবছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। বৎসরান্তে একটা দিনের ফ্যামিলি টাইম। এখন এটাই আমাদেরও রীতি হয়ে গিয়েছে। যস্মিন দেশে যদাচার। তাই না?’
দুই ভাগে ক্রিসমাস: সুতপা মুখোপাধ্যায়
প্রায় দু’দশক মার্কিন দেশের ন্যাশভিলের বাসিন্দা সুতপা মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘আমেরিকায় ক্রিসমাসের দুটো ভাগ। এক ধর্মীয় আর দ্বিতীয়টি সাংস্কৃতিক। বিদেশে হিন্দু বাঙালিরা সেই দ্বিতীয় ভাগটি উপভোগ করেন। প্রতি বছরই একটা বাড়ি বেছে নেওয়া হয়। বন্ধু বা আত্মীর বাড়ি আর সেখানেই বসে আড্ডা।’ নিজের বাড়ি যে তাই বলে অবহেলিত, তা কিন্তু নয়। বরং ক্রিসমাসের আগেই তার সাজগোজ একেবারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্রিসমাস ট্রিতে ঝোলানো হয় অলঙ্কার। আর প্রতিবারই একটা উইশ লিস্ট তৈরি করেন সুতপা। বাড়ির সবার তো বটেই এমনকী বন্ধুদের বাচ্চাদেরও জন্যও চাহিদা অনুযায়ী নানা ধরনের উপহার কেনেন তিনি। কারও বাড়িতে যদি ওই সময় আত্মীয় আসেন তাহলে তাঁদের জন্যও ছোটখাট উপহার নিয়ে যান সুতপা। আর কোনও একজনের বাড়িতে জমিয়ে আড্ডার আসর বসে। প্রায় গোটা দিনটাই ঘুরে ফিরে আড্ডা চলে। তাই বলে বিপুল সমাগমে খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব কিন্তু কারও একার উপর থাকে না, বললেন সুতপা। সেখানে সবাই হাত লাগায়। এক এক জনের উপর এক একটি পদ রান্না করে নিয়ে যাওয়ার ভার পড়ে। খাওয়াদাওয়ার ধরন মোটামুটি আমেরিকান। অর্থাৎ স্যালাড, পাই, কিশ, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি থাকে। আর মিষ্টির মধ্যে সেলিব্রেশন কেক তো থাকেই, তাছাড়াও থাকে, কাপকেক, প্লাম কেক, ফ্রুট কেক ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের রুটিও থাকে। কেউ হয়তো বা ক্রিসমাস ট্র্যাডিশন অনুযায়ী স্টোলেন-এর আয়োজন করেন। এটি একটা বিশেষ রুটি তার ভিতর মণিমাণিক্যের মতো বিভিন্ন ধরনের ফল, বাদাম ইত্যাদি ভরা। মোটামুটি নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ থ্যাংকস গিভিং উৎসব দিয়ে শুরু হয় মার্কিন দেশে ছুটির আমেজ। চলে নিউ ইয়ার পর্যন্ত। আর এই সময়টা মার্কিন মুলুকে সকলের বাড়ি ফেরার সময়। এখানে সবাই ভীষণ গতানুগতিকতায় বিশ্বাসী, বললেন সুতপা। যুগ যুগ ধরে যেমনটা চলে আসছে তার বড় একটা বদল এঁরা সহ্য করতে চান না। তাই ক্রিসমাস এখানে ঘরোয়া উৎসব। আত্মীয়দের সঙ্গে অলস দিনযাপনের নিরিবিলি অবসর।
ক্রিসমাসে ছুটি নেই, আছে শুধু উদ্যাপন: অনিন্দিতা দত্ত
জাপানে থাকেন অনিন্দিতা দাস। ক্রিসমাস নিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন ‘ক্রিসমাসে ছুটি কই? অফিস, স্কুল, কলেজ সবই তো খোলা থাকে। এখানে শীতের ছুটি শুরু হয় ৩০ ডিসেম্বর থেকে। মোটামুটি ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি থাকে। ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকেই উৎসবের ভাব আবহাওয়ায় মিশতে শুরু করে। তা জমে যায় ২৫ তারিখে এসে। অফিসে ওইদিন পুরোদমে সেলিব্রেশনের মুড। ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। টুকটাক উপহারের আয়োজনও থাকে। আর থাকে নানাবিধ খাওয়াদাওয়া।’ তিনি বললেন, ‘জাপানে যেটা সবচেয়ে বেশি হয় এই সময় তা হল, ক্রিসমাস ডেকরেশন। লোকে পাগলের মতো আলো আর অলঙ্কার কিনতে থাকে। সব দোকানে, সে তা যত ছোটই হোক না কেন, এই সময় ক্রিসমাস ডেকর বিক্রি হয়। আর সেই ডেকরেশন ক্রিসমাস থিমে হতে হবে। রং হবে সবুজ আর লাল অথবা সোনালি। লোকে প্রচুর কেনাকাটাও করে ক্রিসমাসের সময়, তবে ছুটি যেহেতু থাকে না তাই বাড়িতে আড্ডার আমেজ সেই অর্থে পাওয়া যায় না। জাপানের সব বড় শহরই আলোর সাজে সেজে ওঠে। উল্লেখযোগ্য সৌধগুলোয় আলো দেওয়া হয়। লোকে সেই সাজ দেখতে ভিড় জমায়। অনেকে আবার বৎসরান্তে ছুটির আয়োজনেও মেতে ওঠে এই সময় থেকেই। অর্থাৎ ছুটির সময় যদি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তাহলে ক্রিসমাসের কেনাকাটার সময় সেই বেড়ানোর জন্যও টুকটাক জিনিস কিনতে থাকে তারা।’ ক্রিসমাসে ছুটি না থাকলেও নিউ ইয়ারে যেহেতু ছুটি, তাই জাপানে ১ জানুয়ারি ফ্যামিলি ডে। ওই দিনটা সবাই আত্মীয় এবং পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চায়। অনেকে আবার বছর শুরুর ওই দিনটা মন্দিরে পুজো দেয়। একটা শুভ মুহূর্ত দিয়ে বছর শুরু করতে চায়। অনিন্দিতার কথায়, ‘আমরা বাঙালিরা তো কলকাতার ক্রিসমাসে অভ্যস্ত। তাই ছুটিটা মিস করি। কিন্তু বাড়ি সাজিয়ে আলো লাগিয়ে উৎসবের আমেজ আনি মনে মনে। তাতেই ছুটি না পাওয়ার দুঃখ অর্ধেক চাপা পড়ে যায়।’