তাঁদের প্রত্যেকের সন্তান অল্প বয়সেই সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছে জীবনে। তার পিছনে মায়েদের অবদান কতটা? মাদার্স ডে উপলক্ষে সেই মায়েদের কথা লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
করোনাকালের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের মতো যত্ন দেওয়ার চেষ্টা করছেন চার কন্যা। তাঁদের কথা লিখেছেন রজত চক্রবর্তী।
শ্রমিক ধর্মঘট অথবা আন্দোলন। আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি। শব্দগুলো সব আমাদের চেনা ও জানা। মে দিবস কী, তা কাউকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয় না। কিন্তু হতাশার বিষয় একটাই, আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের সেই আন্দোলনের ১৩৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, অথচ শ্রমিক বলতে এখনও আমরা শুধু পুরুষদের কথাই ভাবি।
ইন্দোরের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে অনীতা বর্মার জন্ম। অভাব আর অনটনের মাঝে তাঁকে পড়াশোনা শেখানোর স্বপ্নও দেখতে পারেননি বাবা মা। অল্প বয়সেই বরং মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন দিনমজুরের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পরেও বিধি বাম।
ব্রাজিলের মেয়ে ফতিমা ওয়েলহ্যাম গতানুগতিক পেশায় যেতে চাননি কখনওই। তাঁর বরাবরই শখ ছিল দু’হাত কাজে লাগিয়ে রোজগার করবেন। তাই ২০০৮ সালে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শেখায় মন দিলেন।
স্বামী শিল্পী। তবু সচ্ছলতা নেই তাঁর জীবনে। স্বামীর রোজগারের কোনও ঠিকঠিকানা নেই। কখনও কাজ পান, কখনও পান না। আর না পেলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে ওঠে ইন্দোর নিবাসী যমুনা সাগোরের। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। কিন্তু নিদারুণ দারিদ্র্যর হাত থেকে বাঁচার জন্য একদিন পথে নেমে পড়লেন।
নয়ের দশকের গোড়ার দিকেও চিত্রটা বেশ অন্যরকম ছিল। মেয়েরা ততদিনে অনেকাংশেই ঘর সামলে রোজগেরে হয়ে উঠেছিল বটে, কিন্তু সেই রোজগারের কিছু নির্দিষ্ট গণ্ডি ছিল। সেই গণ্ডিগুলো আজও যে খুব একটা বদলে গিয়েছে তা নয়, তবু মেয়েরা নিজেদের কর্মদক্ষতার কারণে এখন নির্দিষ্ট বেড়া ডিঙিয়ে অনেকক্ষেত্রেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
অঞ্জলি সুদ-এর ধরনধারণ বরাবরই একটু ভিন্ন। ছোট থেকে তিনি বড্ড একরোখা। নিজে যা করবেন বলে মনে করেন সেটা করেই ছাড়েন। শুধুমাত্র ঝোঁকের বশে তিনি ম্যাসাচুসেটস বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন ১৪ বছর বয়সে।
নানা সাফল্য সত্ত্বেও মেয়েরা এখনও সমাজে ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’। মেয়েদের উন্নতির জন্য সব স্তরেই সামাজিক ভাবনার বদল দরকার। কীভাবে সেই বদল আনা যায় সে বিষয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘স্বয়ম’-এর প্রধান অনুরাধা কাপুর। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কমলিনী চক্রবর্তী।
ইন্দোনেশিয়া, মিশর ও তানজানিয়া এতদিনে নারী স্বাধীনতার মর্ম বুঝেছে। সম্প্রতি এই দেশগুলির সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এখানে বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে। এমনকী, মেয়েদের শিক্ষা, স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার প্রসার ও প্রচার করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
নাসার মার্স মিশনের প্রধান পদে রয়েছে আফ্রো-মার্কিন নারী বারবারা ব্রাউন। স্পেস সায়েন্স নিয়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণা। বস্তুত, স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে গবেষণায় রীতিমতো দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা, সেখানে যাওয়ার উপযুক্ত স্পেসক্রাফ্টের অন্দরসজ্জার নকশা ইত্যাদি নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক আগ্রহ।
‘টেসি টমাসের নাম বলিউডের যে কোনও অভিনেতার চেয়ে অনেক বেশি ছড়ানো উচিত। তাঁর উজ্জ্বল মুখই হয়ে উঠবে নতুন প্রজন্মের মেয়েদের অনুপ্রেরণা।’— এমন কথাই বলেছেন মহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রা। টেসি টমাস ‘অগ্নিপুত্রী’ নামেই বেশি পরিচিত।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
পেপসির তিনি সিইও ছিলেন। এখন অ্যামাজন কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরের অন্যতম। তিনি ইন্দ্রা নুয়ি। ভারতীয় এই মহিলার জন্ম চেন্নাইতে। সেখানকার স্কুলেই পড়েছেন। তারপর ১৯৭৮ সালে ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য মার্কিন দেশে পাড়ি জমান। সেখানেই শুরু হয় তাঁর পেশাদারি জীবন। পেপসি কোম্পানিতে যোগ দিয়ে সংস্থার ব্যবসা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনেন ইন্দ্রা। এই পরিবর্তন অবশ্যই সংস্থার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয় এবং তাতে লাভ হয় প্রচুর। তাঁর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা নজরকাড়ার মতো। তিনি মনে করেন ব্যবসায় সফল হতে গেলে ক্রেতাদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নজর দিতে হবে। তাদের মনোভাব বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনে কোম্পানির মতো করে ক্রেতাদের ভাবাতে হবে। এই ধরনের ব্যবসায়িক কৌশল এর আগে সেভাবে কেউ ভাবেননি। ইন্দ্রা প্রথম ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ব্যবসার বিভিন্ন দিক জোড়ার চেষ্টা করেন। তাতে বিজ্ঞাপন, প্যাকেজিং, স্বাদ ইত্যাদি বিষয়ে নানা বদল আসে। আঞ্চলিক সমীক্ষার মাধ্যমে ব্যবসায়িক পদক্ষেপ করা হয়। এবং এর ফলে ব্যবসা বাড়ে। এই বদল এবং ব্যবসায়িক বৃদ্ধির ফলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে নাম ওঠে ইন্দ্রার। তাঁর ভিন্নধর্মী চিন্তার জন্য তাঁকে অ্যামাজনের মতো বহুজাতিক সংস্থা নিজেদের ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এবং এহেন ক্ষমতার কারণে ইন্দ্রা ফোর্বসের প্রথম ১০০ জন ক্ষমতাধর মহিলার অন্যতম। তালিকার ১৫ নম্বরেই নাম তাঁর। ইন্দ্রার কথায়, ‘ভাবনার ধরনটা একটু বদলানো দরকার। গতে বাঁধা চিন্তার মাধ্যমে খানিক দূর এগনো যায় ঠিকই, কিন্তু বেশি দূর যাওয়া যায় না। তার জন্য চাই নতুন চিন্তা, নতুন পদক্ষেপ।’
