পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
সাধারণভাবে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ-রা তেমন উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন না। কিন্তু মান্য ওমপ্রকাশ সিংকে নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে। কারণটা তাঁর পারিবারিক পরিচয়। তাঁর বাবা অটোচালক, মা গৃহবধূ। তবু সামাজিক বাধা পেরিয়ে তিনি নিজের স্বপ্নকে সার্থক করতে সক্ষম। যাঁরা মনে করেন বিউটি কনটেস্ট শুধুমাত্র সমাজের ওপরতলার মেয়েদের জন্য, তাঁদের ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কন্যা মান্য সিং। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে খুবই দারিদ্রের মধ্যে। মান্য নিজের ইনস্টাগ্রাম পেজে সেই কথা লিখেওছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ছোটবেলার সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলো ভাবলে আমার রানার্স আপ হওয়ার সাফল্য আরও বেড়ে যায়। আমার পড়াশোনার জন্য মাকে গয়না বেচতে হয়েছে। কিন্তু আমার স্বপ্নে ইতি টানতে দেননি।’ মান্যর যখন মাত্র ১৪ বছর বয়স তখন একবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিজেই সে কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বাবা অটো চালাতেন বলে স্কুলে বন্ধুরা ঠাট্টা করত। বাড়িতে এসে সেই ঠাট্টার কথা বাবাকে জানালে তিনিও দুঃখে-বিরক্তিতে আমারই ওপর রেগে যেতেন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে একবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝে আবার ফিরেও এসেছিলাম। এইভাবেই পড়াশোনা শেষ করে একটা হোটেলে বাসন ধোয়ার কাজ নিয়েছিলাম। তাতে যা উপার্জন হতো তা জমাতাম বিউটি কনটেস্টে নাম লেখানোর আশায়। ক্রমশ একটা কলসেন্টারে কাজ পেলাম। এবং সেখান থেকেই ভিএলসিসি ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া কনটেস্টে নাম লেখানোর সুযোগ।’ মান্য মনে করেন চেষ্টায় সব কিছু সম্ভব। সমাজের পিছিয়ে পড়া লোকদের পাশে দাঁড়াতে চান মান্য সিং। জানালেন, বাবা-মাকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্যই তাঁর যাবতীয় সাধনা।
শ্যুটিং স্টার মনু ভাকার
২০১৮ সালের পর থেকেই মনু ভাকার খেলার জগতের বিখ্যাত নাম। তাঁর কর্মকৃতিত্ব তাঁকে ক্রীড়া জগতের শিরোনামে পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি শ্যুটিং চ্যাম্পিয়ন। শুধু তাই নয়, একেবারে গোল্ড মেডেলিস্ট! শ্যুটিং বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সোনার মেডেল জিতেছিলেন মনু। বিশ্বকাপ ছাড়াও কমনওয়েলথ গেমসেও মনু সোনা জিতেছেন ভারতের হয়ে। মাত্র ১৬ বছর বয়স তখন তাঁর। আর সেই বয়সেই ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সোনা জেতেন তিনি। বিশ্বকাপে মেক্সিকোর আলেকজান্দ্রা জাভালাকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন মনু। খেলাধুলোর প্রতি অবশ্য মনুর আগ্রহ একেবারে ছোটবেলা থেকেই। হরিয়ানার এই কন্যাটির বাবা মার্চেন্ট নেভিতে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। চোদ্দো বছর বয়স পর্যন্ত মনু মার্শাল আর্টসে দারুণ পারদর্শী ছিলেন। তাছাড়াও বক্সিং, টেনিস, স্কেটিং ইত্যাদিতেও তাঁর ছিল দারুণ দখল। আর সেই কারণেই ছোট থেকেই বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নানা সময় পদক জিতেছেন মনু। কিন্তু নাম হল তাঁর বিশ্বকাপে সোনা জেতার পর। আসন্ন টোকিও অলিম্পিকেও তিনি এয়ার পিস্তল প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
জনসেবার কাজে স্বাতীলগ্না বোল
মেয়েটি মা বাবাকে হারিয়েছেন বছর তিন-চারেক আগে। শিকার হয়েছেন সামাজিক নৃশংসতার। কিন্তু তিনি এই প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। তাঁর নাম স্বাতীলগ্না বোল। সব হারিয়েও স্বাতীলগ্নার লড়াই থামেনি। ফেসবুকের পেজ ‘ভবঘুরে কলমে স্বাতী বোল’ -এর হাত ধরে তাঁর লেখা প্রথম পাঠকের সামনে আসে। আর সেই থেকেই লেখিকা স্বাতীলগ্নার জন্ম হয়। ২০১৯-এর প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে’। বইটি পাঠকমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে তাঁর বই ‘শেষ থেকে শুরু’ একইভাবে পাঠকমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাতে বিমর্ষ হননি স্বাতীলগ্না। বরং বিক্রি হওয়া বইগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া একশ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লিখতে লিখতেই একসময় তিনি নিজের কথা থেকে বেড়িয়ে গল্প লেখা শুরু করেন। গোয়েন্দা গল্প। গোয়েন্দার নাম অনঘ। প্রথমে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ব্লগ পেজে, পরে সেটি ‘অভিশপ্ত অপ্সরা’ নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়। পাঠকদের মধ্যে এবার সাড়া জাগে। পরবর্তীকালে তাঁর ‘স্বপ্নে ঢাকা বাস্তবতা’ বইটিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই বই থেকে প্রাপ্ত সকল অর্থ স্বাতীলগ্না নিয়োজিত করেন তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘স্বাতী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর কাজে। নিজের ছোট একটা টিম নিয়ে তিনি লকডাউনে প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার পরিবারের হাতে খাবার তুলে দিয়েছেন। বর্তমানে স্বাতীলগ্নার নতুন বই আসছে। নাম ‘ঝড়ের শেষে’। লেখিকা আশাবাদী এই বইটি নিয়েও। বইটি এক নির্যাতিতা নারীর গল্প। ‘স্বাতী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-কে নিজের পরিবার বানিয়ে তুলেছেন স্বাতীলগ্না। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পাশে দাঁড়াতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শ্রীনগরের কমার্শিয়াল পাইলট ইরাম হাবিব
বছর আটেক আগের কথা। শ্রীনগর নিবাসী ইরাম হাবিব স্বপ্ন দেখেছিলেন আকাশে ওড়ার। ইরাম তখন মাত্র বারো ক্লাসের ছাত্রী। কিন্তু তাঁর পরিবার বা সমাজ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। বরং সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে স্বপ্ন দেখায় ইতি পড়েছিল ইরামের। একরাশ মনখারাপ নিয়ে দিন কাটছিল তাঁর। তবু ভেঙে পড়েননি ইরাম। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তবু তিনি নিজের স্বপ্নটা জিইয়ে রেখেছিলেন। তাই তো আজ তিনি শ্রীনগরের প্রথম ও একমাত্র মহিলা যিনি কমার্শিয়াল পাইলট হয়ে উঠেছেন। কাশ্মীর থেকে এর আগেও দু’জন মহিলা বিমান উড়িয়েছেন আকাশে। তবে শ্রীনগর বিমানবন্দরে কর্মরত মহিলা পাইলট হিসেবে ইরাম হাবিবই প্রথম। তার জন্য বহু পরিশ্রম আর সাধনা প্রয়োজন হয়েছিল ইরামের। পারিবারিক ও সামাজিক বাধা পেরিয়ে মার্কিন মুলুকে যখন এভিয়েশন স্কুলে ভর্তি হলেন, তখন ইরামের মনে হয়েছিল রাজ্য জয় করেছেন বুঝি তিনি। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের সেটাই ছিল সূত্রপাত। প্রশিক্ষণের সময় ২৬০ ঘণ্টা আকাশে প্লেন ওড়ালে তবেই পেয়েছিলেন পাইলট লাইসেন্স। তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নার্ভের ট্রেনিং নিতে হয়েছিল তাঁকে। চোখ পরীক্ষা, তীক্ষ্ণতা পরীক্ষার পরেই তাঁকে বিমান ওড়ানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর আমেরিকা ও কানাডা দুই দেশেই চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভারতের আকাশে প্লেন ওড়ানোর স্বপ্ন তাঁকে দেশে টেনে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিগো, গো এয়ার-এর মতো সংস্থা আমায় চাকরি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবু আমি ফিরে আসি দেশকে ভালোবেসে। আমার মা-বাবাও প্রথমে বুঝতে পারেননি আমার এই ফিরে আসার মাহাত্ম্য।’
ইন্দ্রজিৎ আইচ