কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
অনুরাধা কাপুর
কথাটা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। টানা লকডাউনে মহিলা ও শিশুদের ওপরে পারিবারিক হিংসা ও নির্যাতন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বিশ্বজুড়ে। কলকাতা শহরও তার ব্যতিক্রম নয়। এর কারণটা যদি বলেন...
দেখুন, পারিবারিক হিংসা বরাবরই ছিল। আজ হঠাৎ করে শুরু হয়েছে এমন নয়। তবে মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছে। সারাদিন ঘরের ভেতরে বন্দি অবস্থায় যখন সেই মানুষটির সঙ্গে থাকতে হচ্ছে, যার থেকে হিংসা, নির্যাতনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তখন সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আর কোনও ভাবেই হাতে থাকছে না। সবাই বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতে কাটাচ্ছেন, ফলে মহিলাদের যেসব কাজ করতে হচ্ছে, তার পরিমাণটাও রাতারাতি বেশ বেড়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রত্যাশার মাত্রাও। অর্থাৎ মহিলারা সবটাই করবেন, এবং নিখুঁতভাবে করবেন। ফলে সেটা থেকে যে কোনও মুহূর্তে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হতে পারে।
এর সঙ্গে এই সময়ে শহরে বলুন বা গ্রামে, বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অনেকের ক্ষেত্রে কাজ হারানোর ভয় তাড়া করছে। সেটা আর একটা বড় কারণ। হাতে টাকা নেই। খাবার নেই। বাড়ি থেকে বেরনো যাচ্ছে না। তাই হতাশা থেকে সেই পুরো রাগটা গিয়ে পড়ছে পরিবারের ওপর, বলা ভালো মহিলাদের ওপর। শুধু পুরুষ নয়, মহিলারা যদি কাজ হারান, তাঁদের ওপর পাল্টা চাপটাও এসে পড়ছে, কেন তিনি টাকা আনতে পারছেন না সংসারে?
পাশাপাশি আর একটা বিষয় যোগ হয়েছে। সেটা হল, অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস। অথবা মদ্যপায়ীরা আগের মতো সহজে নেশার জিনিসটি প্রথম দিকে জোগাড় করতে পারছিলেন না, সুতরাং তাই নিয়েও মাথা গরম। এইসব ছোটখাট বিষয় থেকে ট্রিগার করেছে গোটা সমস্যাটা। লকডাউনের মধ্যে সেটা ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছিল। শারীরিক নির্যাতন তো সাংঘাতিক বেড়েছে। সঙ্গে যৌন নির্যাতনও। যার জন্য আমরা জানতে পেরেছি, অন্তত ৩৫% মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাস্তায় একা হেঁটেছেন। কারণ লকডাউনের মধ্যে তখন গাড়ি চলছিল না। কিছু ক্ষেত্রে পুলিস সাহায্য করেছে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিতে— কারও বাপের বাড়ি, বা কারও বন্ধুর বাড়ি অথবা অন্য কোনও সুরক্ষিত জায়গায়। আমরা এমন অনেকের কথা জেনেছি, যাঁরা এই অসহায়তার মধ্যে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন। পুরো অবস্থাটা অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চারা দেখতে পেয়েছে, তাদের ওপরেও অসম্ভব মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে।
এ ধরনের নির্যাতনের কথা জানার পরে আপনারা কীভাবে সাহায্য করেছেন?
অবশ্যই কাউন্সেলিং। নির্যাতিতা কী চান, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি আমরা। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের কাউন্সেলিং-ও হয়েছে। যদি মহিলা স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে চান, পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, সেক্ষেত্রে ফোনেই তাঁকে সাহায্য করা হয়েছে। আমাদের সংস্থার (স্বয়ম) তরফে পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। প্রয়োজন পড়লে আইনি পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মানসিক দিক থেকে যতটা সাহায্য করা যায়, আমরা করেছি। মহিলা এবং শিশু, দুই ক্ষেত্রেই দরকারি যে কোনও ধরনের থেরাপির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাছাড়া এই লকডাউনে বহু ডিভোর্সি মহিলা বিপদে পড়েছেন। প্রাক্তন স্বামীর কাছ থেকে যে খোরপোষ নিয়মিত পেতেন, এখন রোজগার নেই বলে অনেকে হাত তুলে দিয়েছেন। মহিলারা কোর্টেও যেতে পারছেন না। তাই দৈনন্দিন চলার জন্য যেটুকু লাগে, সেই রেশনের ব্যবস্থা করেছি আমরা।
যারা নির্যাতনের কথা সরাসরি জানাতে পারেননি, তাঁদের খবর আপনারা পেয়েছেন কীভাবে?
অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিবেশীরা সাহায্য করেছেন। ফোন করে আমাদের খবর দিয়েছেন। আবার কারও ক্ষেত্রে পরিবারেরই অন্য কেউ খবর দিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে তাঁদেরই আমরা জানিয়েছি, কী করা উচিত। এরপরেও বলব, আমরা যতটুকু করেছি, তা হিমশৈলের চুড়ো মাত্র। কারণ অনেক মহিলাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি। অনেকের কাছে ফোন নেই, বা থাকলেও সেটা স্বামীর জিম্মায়। কেউ কেউ শুধু মেসেজে জানাতে পেরেছেন। আমরা সেখানে যোগাযোগ করতে গিয়েও কিছুটা আটকে গিয়েছি। কারণ সেই মহিলাই হয়তো বলেছেন, ফোনটা তাঁর কাছে থাকবে না। লকডাউনের জন্য ততটা ভালো করে কিছু করা যাচ্ছিল না। এখন একটু একটু করে সব খোলায় আমাদের অফিসে অনেকেই আসতে শুরু করেছেন। আমরাও যতটা সম্ভব পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
পুরুষদের মধ্যে যাঁরা অত্যাচার করছেন, তাঁদের কোনওভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন?
গোটা পরিবারের কাউন্সেলিং-এর মধ্যেই পড়ছে সেটা। শুধু শ্বশুরবাড়ির লোক নয়, অনেকসময় মেয়েরা নিজের বাবা-মায়ের বাড়িতেও নিপীড়ন সহ্য করেন। সেই বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলা হয় আমাদের তরফে। যাঁরা কথা বলতে আগ্রহী, তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। আর সেটা সামান্য মাত্রায় হলেও কাজ দেয়। তবে এসব করলেও তা যথেষ্ট নয় অনেক ক্ষেত্রেই। শিশুদের ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং করানো হয়। যারা চোখের সামনে দেখছে মায়ের নির্যাতন, সেই শিশু এবং তার মা, প্রত্যেকের কাউন্সেলিং-ই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।