বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
নতুন জীবনের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেব আমরা?
এখন সবই খুলে যাবে। প্রশাসনিক স্তরে আমরা সেই ইঙ্গিত পেয়েছি। রোগটারও যা গতিবিধি, তাতে বুঝেছি, এখনই করোনা আমাদের জীবন থেকে যাচ্ছে না। যতদিন না ভ্যাকসিন আসে। জীবাণু যতদিন উধাও হবে না, ততদিন আমরা সব কাজ ফেলে অনির্দিষ্টকাল বসে থাকব, সেটাও হয় না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। অবশ্যই আমাদের আশঙ্কা-আতঙ্ক থাকবে। তেমনই মনের জোর নিয়ে এগোনোর একটা পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে।
সেই প্রক্রিয়াটা কীরকম?
যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিষয়টাকে দেখি, করোনা সম্পর্কে অনেক সচেতনতা কিন্তু গড়ে উঠেছে। আমরা এখন জানি, এটা থেকে কীভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি এভাবে ভাবি, যখন আগে বেরোতাম, তখনও আমাদের চারপাশে অনেক জীবাণু থাকত। তার দ্বারা কখন কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, অত বুঝতাম না। কিন্তু আমরা অসুস্থ হতাম না, তা তো নয়। করোনা সম্পর্কে এতটা জেনেছি বলে অনেক সাবধানতা নিয়ে বেরনোর অবকাশ পাচ্ছি। এটা ভাবলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
বাইরে গেলে
আমাদের মতো জনঘনত্বের দেশে প্রচুর টেস্টিং হলেও ফাঁকফোকর থেকেই যাবে। অনেকে অ্যাসিম্পটোম্যাটিক। এগুলো তো বোঝা সম্ভব নয়। তাহলে বাঁচব কীভাবে? এটা অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’-এর মতো। আমি পৃথিবীটাকে তো চামড়া দিয়ে মুড়তে পারব না। বরং পা-টাকেই চামড়া দিয়ে মুড়ে দিই না কেন? এক্ষেত্রেও আমার সাবধানতা আমার হাতেই। মাস্ক ঠিকভাবে পরতে হবে। গরম লাগছে বলে গলায় ঝুলিয়ে রাখা নয়, বা নাকের নীচে পরা— এগুলো চলবে না। পরতে পরতে অভ্যাস হবে। বেরনোর সময় স্যানিটাইজার মাস্ট। দূরত্ব মেনে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় হাতের আড়াল— এগুলো যিনি বেরোবেন, তাঁরই ভাবনায় থাকবে। আমার জন্য যেন কেউ সমস্যায় না পড়ে। বাড়ি ফিরেও অনেকে বলছেন, ‘বয়স্ক বাবা-মায়ের ঘরে ঢুকছিই না।’ এটা তো করা যায় না। স্নান করে পুরোপুরি স্যানিটাইজড হয়ে দূরত্ব রেখে কথা বলাই যায়। প্রয়োজনে ঘরেও মাস্ক পরা যায়। গোটা প্রক্রিয়ায় একটু সময় যাবে। তাতে সুস্থতার সঙ্গে আপস করতে হয় না। নিজের ব্যাপারে দায়িত্ব বাড়াব। ভিড় বাড়াব না। ভিড়ের মধ্যে যাব না। যেমন কোনও দোকান যদি দু’জনের বেশি অ্যালাও না করে, জোর করে ঢুকতে যাব না। এখানে সহিষ্ণুতা বাড়াতে হবে। অফিসেও তাই। কখনও ভাগ করে খেতে গেলে আলাদা চামচ এবং প্লেট ব্যবহার করা ভালো। একসঙ্গে খাওয়াই যাবে না, এমন তো কেউ বলেনি। সামাজিক দূরত্ব নয়, বজায় থাক শারীরিক দূরত্ব।
বাড়িতে থাকলে
যাঁরা বেরোচ্ছেন, তাঁদের প্রতি অচ্ছুৎ মনোভাব দেখাব না, এটা খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির লোক এমন করলে পাড়ার লোকের চড়াও হতে বেশি সময় লাগবে না। একটা সময় নার্সদের যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছিল...। বরং ভাবতে হবে আজ যাঁর সঙ্গে এই আচরণটা করছি, পরশু তাঁর জায়গায় আমি নিজেই থাকতে পারি। আর এখন অসুস্থ হলে বেশির ভাগ লোক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। তাঁকে কি পাড়াছাড়া, বাড়িছাড়া করব? কাল আমার হলে তখন? বাড়াবাড়ি না হলে তো এ রোগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। সব সাবধানতার পরেও যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাঁর প্রতি এমন মনোভাব দেখানোর মধ্যে কিন্তু একটা অশিক্ষা আছে। এইখানেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর একটা কথা, একটু শরীর খারাপ হলেই আতঙ্কিত হওয়া বন্ধ করতে হবে। আমার এক ডাক্তারবন্ধু মজা করেই বলছিলেন, রান্না করতে গিয়ে শুকনো লঙ্কার ঝাঁঝেও কাশতে ভয় পাচ্ছেন গৃহিণী। পাশের বাড়ির জানলা দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে! সামনে বর্ষা আসছে। এমনিই সর্দি কাশি বাড়বে। গোড়াতেই অনেক দূর যেন ভেবে না ফেলি। যদি দেখা যায়, কমছে না, তখন প্রথমে অনলাইনে কনসাল্ট করা, বেসরকারি জায়গাতেও টেস্ট হচ্ছে। বাড়ি এসে সোয়াব নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো তো হয়েছে এখন। তাহলে হাসপাতালে সত্যিই যার যাওয়ার দরকার, তাকে সুযোগটা দেওয়া যায়।
স্বাভাবিক হওয়া
আমরা প্রত্যেকে এখন সাবধান হয়ে সুস্থ জীবনে ফেরার চেষ্টা করব। এটা ছাড়া উপায় নেই। সব রোগের জীবাণু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এই প্রথম একটা রোগ আমাদের অনেক স্বাস্থ্য সচেতন করেছে। ঠিকমতো হাত ধুচ্ছি। বাইরে থেকে এসে ওই হাতেই খাচ্ছি না। ওই পোশাকে বিছানায় শুয়ে পড়ছি না। তাই অন্য কিছু রোগ কিন্তু কম্পারেটিভলি কমছে। এছাড়া বুঝতে হবে, মিডিয়ায় শুধু খারাপ খবর থাকেনা। পজিটিভ খবরটাও দেখুন। একপেশে নেগেটিভ দিকটা দেখা বন্ধ করুন। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। পাড়ার লোক স্বাগত জানাচ্ছে। এটাও
মনে রাখুন।