গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
এখন সবাইকে নিরাপত্তার জন্য বাড়িতেই থাকতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরনো যাবে না। এটা মেনে-বুঝে চলা ছাড়া গতি নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাচ্চাদেরও সেটা ভালো করে বোঝানোটা খুব জরুরি। হঠাৎ এসে বললাম, লকডাউন হয়েছে, সবাই বাড়িতে থাকো। সোশ্যাল মিডিয়া বা নিউজ থেকে যতটা জলদি আমি বুঝব, বাচ্চারা তো পারবে না। সহজকে প্রথমে বলেছিলাম, এখন আর পার্কে যেতে পারবে না, স্কুল যেতেও হবে না। বাড়িতেই থাকবে। শুনে ও কনফিউজড হয়ে গিয়েছিল। কেন বাড়িতে থাকছি, সেই কারণটা ওকে বোঝাতে হল। বললাম, করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। সহজ নিজের মতো করে বুঝল যে আমরা যেসব জিনিস বাইরে ফেলে দিই, মানে সব আবর্জনাগুলোই ভাইরাসে পরিণত হচ্ছে! জানি না এটা ও কোথা থেকে ভাবল! তবে বাইরেটাও যে নোংরা করা উচিত নয়, আশা করি এই ভাবনাটা ওর মনে রয়ে যাবে। শুধু নিজেকে পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, আশপাশটাও সাফসুতরো রাখতে হবে, এই বোধটা থাকা দরকার।
পরিস্থিতিটা বোঝাতে আর একটা কাজ করেছিলাম। যখনই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে কিছু বলেছেন, টিভি চালিয়ে সেটা সহজকে শুনিয়েছি। তাতে ও খানিকটা ইনভলভড হয়েছে। দেশের সবাইকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী। ও নিজেও যে নাগরিক, সেটা বুঝিয়েছি। আর ও-ও বুঝেছে, শুধু ওর মাম্মা ওকে পার্কে যেতে বারণ করছে, এমন নয়। প্রধানমন্ত্রীও সবাইকে বারণ করেছেন। আগে তবু ও বলছিল, ‘মাম্মা আজ একটু খেলতে যেতে পারি, একটুখানি?’ প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার পরে ও আর এই বায়নাগুলো করেনি! বরং আমি যখন বেরিয়েছি, ধরো বাজার বা জরুরি কিছুর জন্য, ও তখন আমায় বলেছে, ‘মাম্মা তাড়াতাড়ি চলে এস, দেরি করো না। বাইরে পুলিস ঘুরছে!’ ফলে ও সব মিলে বুঝে গিয়েছে ভালোই।
ওকে যতটা স্বাভাবিক রাখা যায়, তার চেষ্টা করছি। অনলাইন ক্লাস চলছে। ওয়ানে ভর্তি হওয়ার পরে আর স্কুলে যাওয়াই হল না সহজের। টিচাররা খুব সাহায্য করছেন। বন্ধুবান্ধবদের ওইভাবেই দেখছে। নানা রকম অ্যাক্টিভিটিজ রয়েছে। ক্রাফ্ট, পেইন্টিং। প্রচুর গল্পের বই পড়ছে। আর আমরা দু’জনে অনেক অনেক সিনেমা দেখছি। চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি, মাটিল্ডা, লায়ন কিং, হীরক রাজার দেশে, আলাদিন— সব। পড়াশোনার বাইরে এই সময়গুলোও ভালো কাটছে। লেগো নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসে। লেগো মুভিও দেখে। ওগুলো দেখে নিজে নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করে।
উম-পুনের সময়েও ওকে আগে থেকে বুঝিয়েছি। ঝড় ওঠার পরে যখন বারান্দা থেকে গাছগুলো সরিয়ে ভেতরে রাখছি, দরজা জানলা বন্ধ করছি... ও সব দেখেছে। ওকে বলেছি, ‘দেখো এরপর আমি যখন বাড়িতে থাকব না, তখন যদি ঝড় ওঠে, কী কী করতে হবে?’ ও বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমি বুঝেছি।’ জীবনের এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারলে ভবিষ্যতে খুবই কাজে দেয়। তাই সবসময় বোঝানোর দিকে গুরুত্ব দিই। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভিডিও কল, গেম খেলা, কার্টুন দেখা, এগুলোও চলছে পুরোদমে। আমার পার্সোনাল স্পেস যখন লাগছে, ওকে একটু কার্টুন দেখতে দিচ্ছি। ঝড়ের পরে পাওয়ার কাট হয়েছিল। তবে কমপ্লেক্সে থাকার জন্য জেনারেটরের সুবিধা ছিল। ২৪ ঘণ্টা পাইনি। আসছে-যাচ্ছে, সেভাবেই ম্যানেজ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি, যথেষ্ট কষ্ট করে সব ঠিকঠাক করতে হয়েছে। যখন কারেন্ট ছিল না, সেই সময়টাও মজা করে কাটানোর চেষ্টা করেছি। মোমবাতি জ্বালিয়ে সবাই মিলে বসে ভূতের গল্প বলেছি। গল্পগুলো একটু পাল্টেও দিয়েছি, যাতে সহজ বেশি ভয় না পায়!
লকডাউনের পর কাজে ফিরলে সাবধান তো থাকতেই হবে। ভয়টা মানুষের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। স্যানিটাইজেশন ছাড়া চলবে না। এগুলোই অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। আমাদের কাজের জায়গাও অনিশ্চিত। লকডাউন উঠলেও কবে পুরোপুরি শ্যুটিং শুরু হবে, সেটা ঠিক নেই। আশা করি, সব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। নিজেদের মতো সচেতন থাকা, সেফ আর পজিটিভ থাকা, এটাই দরকার। নিজের যে ভালো লাগার জায়গাগুলো আছে— সিনেমা দেখা, বই পড়া, ছবি আঁকা, এগুলোর মধ্যে দিয়ে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। চারদিকে শুধু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই হয়তো চেক করাও ছেড়ে দিয়েছি কেউ কেউ। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি। বাড়িতে সব সময়ে দেখাশোনার জন্য যিনি থাকেন, তিনি আছেন। ওটা খুব সুবিধা হয়েছে। বাকি সবাই ছুটিতে। এখন মনে হচ্ছে, তাড়াতাড়ি সব খুললেই মঙ্গল। ভয়টা নিয়ে তো বাঁচা যায় না। যত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়, ততই ভালো।