পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
লকডাউন বলেই শুধু উপমন্যুর সঙ্গে লম্বা সময় কাটাচ্ছি, ব্যাপারটা এমন নয়। বরাবরই আমি বেছে কাজ করি। একটা প্রোজেক্ট শেষ না হলে কিছুতেই আর একটা প্রোজেক্ট করি না। সেই ব্রেকটা খুব লম্বা হয়। মেগাসিরিয়ালের শ্যুটিং অনেক সময় ধরে চলে। তেমন প্রোজেক্টের পরে সবসময় নিজের জন্য অন্তত একবছর ব্রেক নিই। এতে আমি অভ্যস্ত। ওই সময় হয়তো ছোটখাট কাজ করি। ১০-১৫ দিন। কিছু দিন আউটডোর। শর্ট ফিল্ম বা টেলিফিল্ম। তাই উপমন্যুকে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। ওকে সময় দেব বলে আলাদা করে কিছু করতে হয় না। আর নিজের জন্য সময় বার করা মানেই ওর সময় তো বটেই। আমি আর ঋত্বিক (চক্রবর্তী) যেভাবে কাজ করি, তাতে সপ্তাহে দিন পাঁচেক ও আমাদের একজনকে অবশ্যই পায়।
বেড়াতে যেতে ভালোবাসি খুব। তবে এখন তো সেটা সম্ভব নয়। বাড়িতে গাছগাছালির যত্ন, ছবি দেখা, বই পড়া আর চুটিয়ে সংসার করতে ভালো লাগে। আর রান্নাবান্নাটা শিখিয়ে দিল লকডাউন! সংসার বলতে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, সাজানো-গোছানো— এগুলো আমার বেশি পছন্দ। রান্নাবান্না করতে দারুণ লাগত, এমন নয়। তবে এখন তো করতেই হচ্ছে। ধীরে ধীরে দেখছি ভালো লাগছে। প্রশংসা জুটছে! সুইটডিশে হাত পাকিয়েছি। আমি মিষ্টির পোকা!
ছেলেকে দেখার জন্য যিনিই থাকুন, তাঁর সঙ্গে বাড়ির লোক থাকবে, সেটা সবসময় খেয়াল রাখি। এবার লকডাউন শুরু হওয়ার দিন সাতেক আগে থেকেই বাড়িতে কোনও পরিচারিকাকে আসতে বারণ করে দিয়েছিলাম। তাঁর জন্যও ওটা সেফ নয়, আর আমাদের জন্যও। তাই আপাতত আমি আর ঋত্বিকই সব সামলাচ্ছি। অন্য রকমের কাজ করতে হচ্ছে, যেটা রোজ করে অভ্যস্ত নই। বিরক্ত হচ্ছি বলব না, কোভিড পরিস্থিতিতে বরং কিছুটা হতাশ। ছেলেকে যেমন বোঝাচ্ছি ও একা নয়, তেমন নিজেকেও বোঝাচ্ছি। সারা পৃথিবীতেই তো লড়াইটা চলছে। বাড়িতে থেকে সব মেনে চলা ছাড়া উপায় তো নেই। যা-ই হোক, কমপ্লেন করার জায়গায় আমরা নেই। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমে কোভিড, তারপরে ঝড়, সবদিক থেকেই মনে হচ্ছে, আমরা অনেক ভালো আছি।
খুব সম্প্রতি উপমন্যুর বৃষ্টি ভালো লাগছে। উম-পুন আসার আগে যে দু একদিন ঝড়বৃষ্টি হয়েছে, ও খুব মন দিয়ে বৃষ্টি দেখেছে। ঝড়ের তাণ্ডব বা প্রকোপ ও খুব বুঝতে পেরেছ বলে মনে হয় না। এত দুর্যোগেও আমাদের অসীম ভাগ্য যে আমরা পাওয়ার কাট থেকে বেঁচে গিয়েছি। ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা ছাড়া তেমন কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি।
লকডাউনের গোড়ার দিকটা ছেলেকে নিয়ে দিব্যি চলছিল। কারণ বাড়িতে আমার আর ঋত্বিকের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, গল্পের বই পড়ে, খেলে, লেখাপড়া করে কেটে যাচ্ছিল উপমন্যুর। কিন্তু মুশকিলটা হল তখন, যখন ওর মনে হতে শুরু করল, কেন আর বেরোতে পারছি না। বিশেষ করে দাদু-দিদা বা ঋত্বিকের বারাকপুরের বাড়িতেও যেতে পারছে না। তখন বলছে, আমি ম্যাজিক শিখতে চাই। ভূতের রাজাকে বলব, ম্যাজিক করে যেন করোনাভাইরাসকে নিয়ে চলে যায়। জানি, লকডাউন উঠে গেলেও আমাদের লাইফস্টাইল পাল্টে যাবে। ছেলেকে একটু একটু করে সামাজিক দূরত্বের অর্থ বোঝাচ্ছি। যদিও সেটা খুবই কঠিন। চোখে-মুখে-নাকে হাত দেবে না থেকে শুরু করে সবটা বোঝানো! তবে ও যে খুব হতাশ বা দুঃখ পেয়েছে, সেটা একেবারেই নয়। আমি আর ঋত্বিক ওকে যেভাবে সঙ্গ দিই, সেটা ও খুব এনজয় করে বলেই মনে হয়। তবে অনেক কিছু মিস করছে। অনলাইন স্কুল চলছে। তা হলেও স্কুলের পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব, খেলা সব কিছু তো মিস করছেই। তাছাড়া আমার আর ঋত্বিকের পায়ের তলায় সর্ষে। সঙ্গে সঙ্গে ও-ও বেড়াতে ভালোবাসে। সেই আউটিংগুলোও হচ্ছে না। এটা ওর খারাপ লাগছে। ওকে বলছি, একমাস পরে আমরা দাদু-দিদার কাছে যাব। তারপরের মাসে বারাকপুরে। এইভাবে বোঝানো হচ্ছে। বেড়ানো ছাড়া ও গল্পের বই পড়তে, ছবি আঁকতে ভালবাসে। নানা সময়ে আবদার করে, আমাকে ডাকাত সাজিয়ে দাও। কখনও বলে, আমাকে গুপি গাইন বাঘা বাইনের মতো রাজা সাজিয়ে দাও। তার মানে বুঝতে হবে, মুকুট পরা রাজা নয়, পাগড়ির সঙ্গে মাথায় কিছু একটা দেওয়া রাজাই চাই। কখনও বলে গোঁফ এঁকে দাও। মেকআপ বক্স থেকে কাজল বার করে আমায় আবদার পূরণ করতে হয়। আবদারে সাড়া না দিলে কান্নাকাটি করে না, ঘাড় বেঁকিয়ে বসে থাকে। মানে যতক্ষণ গোঁফ আঁকা না হচ্ছে!
আমার মনে হয়, ওদের বয়সি অনেক বাচ্চাই একটু যেন বড় হয়ে গেল। উপমন্যু এমনিতেও খুব একটা বায়না করে না। আর এখন টিভিতে সব কিছু দেখে ও বুঝেছে, মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে। ও সেটা বলছে। ও ওর মতো করেই বুঝছে। বা রাস্তায় হেঁটে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ছবি। সবাই খেতে পাচ্ছে না। এগুলো বুঝতে পারা এ বয়সে, এ সব দেখেই মনে হয়, ওরা তো বড় হয়ে গেল।