বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
সঙ্গীত শেখান মিনু মার্ডি ও কাকলি মার্ডি এবং নৃত্য শেখান চিত্রলেখা ভট্টাচার্য। এই আদিবাসী মেয়েরা পড়াশোনা শেখার সঙ্গে সঙ্গে গভীরভাবে অনুধাবন করছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাহাত্ম্য। রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আমাদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত যে জড়িয়ে রয়েছে তা তাদের এই গানের মাধ্যমেই শেখানো হচ্ছে। বিশেষত রবীন্দ্রসংস্কৃতির সঙ্গে তাদের পরিচয় করানো হচ্ছে।
বসন্ত উৎসবের প্রাক্কালে এমনই এক ফাগুনের সকালে উপস্থিত হয়েছিলাম এই সঙ্গীত শিক্ষার আসরে। সেখানে গিয়ে আদিবাসী মেয়েদের দেখে ও তাদের গান শেখার আগ্রহ লক্ষ করে মন্ত্রমুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। আদিবাসী মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম তাদের উৎসাহ দিলে তাদের এই প্রচেষ্টা আরও অনেকগুণে সফল করা সম্ভব হবে।
আমার বিশ্বাস এই প্রচেষ্টা মেয়েদের শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। মেয়েরা হয়ে উঠবেন আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী।
একজন মনোবিদ হিসেবে আমি উপলব্ধি করি যে, মেয়েদের শান্ত স্বভাবের এবং নম্র মানসিকতার অন্তরালে সুপ্ত আছে এক এমন আগুন ও তেজ যা উত্তরিত হবে দিনে দিনে কালে কালে।
আদিবাসী মেয়েদের সহজে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাব বোঝানোর জন্য তা প্রথমে সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন বড়কা সরেন। যে সব রবীন্দ্রসঙ্গীত মেয়েরা পরিবেশন করেন তা হল, ‘আবো সানাম গিরাজ’ (আমরা সবাই রাজা), ‘এনাইলা বারহড়’ (সেদিন দুজনে), ‘যদি আমা হইতে’ (যদি তোর ডাক শুনে), ‘মেদায় রেথাক মারি কাথা’ (পুরানো সেই দিনের কথা)।
মেয়েদের সঙ্গে বসন্ত উৎসবের মহড়ায় উপস্থিত হয়ে ওদের গানে গলা না মিলিয়ে উপায় ছিল না। সেই উৎসবে ‘ওরে গৃহবাসী’, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’, ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’, ‘মোর বীণা ওঠে’ প্রভৃতি গান পরিবেশন করা হয়। দেখলাম আদিবাসী মেয়েদের বাংলা উচ্চারণ কী সুস্পষ্ট! শুধু সঙ্গীত, নৃত্যই নয়, আবৃত্তি শেখানোও আরম্ভ হয়েছে এখানে। যাঁর নিরলস অধ্যবসায়ের ফলে এই প্রয়াস সার্থকতার রূপ নিচ্ছে তিনি হলেন শ্যামল ভট্টাচার্য।
আদিবাসী মেয়েদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ফুলে ফুলে পল্লবিত হয়ে মহীরুহে পরিণত হোক। জয় হোক নারী ক্ষমতায়নের। শুভকামনা রইল।