বাড়তি অর্থ পাওয়ার যোগ রয়েছে। পদোন্নতির পাশাপাশি কর্মস্থান পরিবর্তন হতে পারে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পক্ষে থাকবে। ... বিশদ
পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য যেমন অসম, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও সহ অন্যান্যরা যাঁরা এদের নিয়ে কাজ করছেন এবং সমাজতত্ত্ববিদ ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
এই আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বয়ঃসন্ধিতে দাঁড়িয়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যে যৌনতা দেখা যায় সেটা আইন কীভাবে দেখছে। আঠারোর আগে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতাও নাকি বাড়ছে। মুশকিল এইটাই যে, যখনই এই সমস্ত বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবার আইনের দ্বারস্থ হয় তখনই মেয়েটিকে তুলে এনে হোমে রাখা হয় আর ছেলেটিকে পকসো আইনের ধারা অনুযায়ী সেস্কুয়াল অ্যাবিউজার হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই সঙ্গে এটাও আমাদের ভাবনায় রাখা দরকার যে আঠারোর আগে যৌন সম্পর্ক মানে অ্যাবিউজার, তাই বা কেন? সবসময়ই যে জোর জবরদস্তি করা হচ্ছে তা তো নয়। প্রেম, ভালোবাসার ক্ষেত্রে পালিয়ে বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক সেটা তো ছেলে-মেয়ের সম্মতিতেই হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন এটাই, এই যে এতটা জোরালো আইন এতে বেশ কিছু পরিবার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনার পর্যালোচনার জন্যই এই সভার আয়োজন।
কথা হচ্ছিল প্রাজক নামক একটি সংস্থার ডিরেক্টর দীপ পুরকায়স্থর সঙ্গে। জানালেন, গণ্ডি কেটে যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে দেখানোর যে প্রয়াস এবং তার জন্য যে আইন, সেটাতে সমাজের নানা সমস্যার উদ্রেক হচ্ছে। সমস্যা থেকে বেরনোর উপায় হিসেবে এজ অব কনসেন্ট কি আঠারোই থাকবে? নাকি কমিয়ে ষোলো করা দরকার? নাকি আরও অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়েই এই সেমিনার।
পার্টনারস ইন ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, প্রাজক আর স্বয়ম, এই তিনটে সংস্থা আয়োজন করেছিল ৪ এবং ৫ ফেব্রুয়ারির এই কর্মশালা তথা আলোচনা সভার।
পিএলডি সংস্থাটি মূলত আইনের প্রয়োগ ও প্রসার নিয়ে কাজ করে। এছাড়া নতুন আইনের উপযোগিতা ও তার বিস্তারের ভালোমন্দও তাদের কাজের মধ্যে থাকে।
স্বয়ম সাধারণত নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। নারীর নির্যাতন ও হিংসা রোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এই সংস্থা। শিশুদের আত্মবিকাশের ক্ষেত্রেও কাজ করে স্বয়ম। আর প্রাজক শিশু ও কিশোরদের অধিকার, লিঙ্গ বৈষম্যর বিরুদ্ধে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে দীর্ঘসময় ধরে।
এই তিনটি এনজিও ছাড়াও এরকম বহু গোষ্ঠী অবহেলিত শিশু, কিশোর ও নারীর সুরক্ষা, সচেতনতা ও সমানাধিকার নিয়ে কাজ করছে। চেষ্টা করছে কীভাবে এদের প্রাপ্য সুযোগ, সুবিধা, অধিকার দেওয়া যায়। এই সংস্থাগুলোর কাজ বহুমুখী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গিয়েছে, সব সংস্থাগুলো যে একই কথা বলছে তা নয়। অথচ নারীদের জীবন এবং শিশু-কিশোরদের জীবনের সমস্যা কোনও না কোনও ভাবে এক জায়গায় রয়েছে। এ নিয়ে একই ছাদের তলায় একযোগে আলোচনার মাধ্যমে শিশুর অধিকার, বাল্যবিবাহ আইন, পকসো আইনের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের চেষ্টায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে সরকারকে জানানো এবং তা থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের সূচনা ফলপ্রসু হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
অসম্ভব ভালো বক্তব্য রাখলেন প্রাজকের ডিরেক্টর দীপ পুরকায়স্থ, পার্টনারস ইন ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও স্বয়ম থেকে যথাক্রমে মধু মেহেরা ও অনুরাধা কাপুর। উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাদির পাথেরিয়া সহ অন্যান্য বিশিষ্ট মানুষজন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বারে বারে মনে হচ্ছিল, আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা যখন ছোট হতে হতে ক্রমশ ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্স আর মুঠোফোনে বন্দি হয়ে রয়েছে তখন শপিং মল আর মাল্টিপ্লেক্সের বিনোদনে গা ভাসানো চলমান জনজীবনের মাঝে এই সমস্ত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য কতটা আন্তরিক ও জরুরি। তাঁদের ভাবনার জগতে একটাই কথা, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’