বাড়তি অর্থ পাওয়ার যোগ রয়েছে। পদোন্নতির পাশাপাশি কর্মস্থান পরিবর্তন হতে পারে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পক্ষে থাকবে। ... বিশদ
একটা সময় আমার সন্তানরা প্রশ্ন করত, মা তুমি আমাদের কেন সময় দাও না? কেন এতক্ষণ ধরে বাইরে থাকো? আমার দুই সন্তান। এক মেয়ে আর এক ছেলে। ওদের ক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়ে খুব অসহায় মনে হতো। কী উত্তর দেব ওদের?
একদিন ওদের নিয়ে চলে গেলাম হাসপাতালে। এমনকী আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে ওদের দেখালাম মুমূর্ষু রোগী, অসুস্থ শিশুকে। এভাবে মাঝেমধ্যেই ওদের হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। ওরা দেখল, কীভাবে ওদের মা শারীরিক পীড়ায় পীড়িত মানুষের চিকিৎসা করছে! আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছে। কচি হৃদয়েও ওরা কিন্তু ঠিক বুঝল মা কী করে! মা সারাদিন কেন বাড়িতে থাকতে পারে না! কেন রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় মাকে। মায়ের বিরুদ্ধে রাগ কমতে শুরু করেছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এখনও প্রত্যেক মহিলা চিকিৎসক এবং কর্মরত যে কোনও মহিলাকেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিজের কাজের পর সংসার সামলাতে হয় প্রত্যেক মহিলাকেই। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে জটিলতা হয়তো একটু বাড়ে, যখন চিকিৎসকের বাড়িতেই কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে! যেহেতু আমি চিকিৎসক, তাই পরিবারে কেউ অসুস্থ হলেই আমার উপর সবাই একটু বেশিই নির্ভরশীল হয়ে পড়ত। অসুস্থ স্বামী, মা, বাবা, শ্বশুর, শাশুড়ি তো বটেই, সঙ্গে অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের অসুখ হলেই আমার খোঁজ পড়ত। এখনও পড়ে। তবে ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আত্মীয়স্বজনের রোগভোগে সেবা সকল চিকিৎসকেরই করা উচিত। কারণ, নিজের কাছের মানুষের অসুখ হলে তবেই সমস্যার গভীরতা বেশি করে অনুভব করা যায়। সেক্ষেত্রে অনাত্মীয় যে রোগী, তার প্রতিও সংবেদনশীল হয়ে ওঠা যায়। রোগীকে বোঝানো সম্ভব হয় অসুখ সম্বন্ধে। একইসঙ্গে রোগীও বোঝেন, চিকিৎসকও অসুস্থকে সুস্থ করার লড়াইয়ে নেমেছেন। সেই লড়াইয়ে কোনও খামতি নেই। আমার মনে হয়, রোগীর এই বোধের জায়গা উন্মোচন করার ক্ষেত্রে মহিলা চিকিৎসকরা সিংহভাগ ক্ষেত্রেই সফল। তাছাড়া এখন সমাজও যথেষ্ট বদলেছে। প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সময়কে অনেকটা পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে এসেছি। মহিলা চিকিৎসককে কেউ আর অসমর্থ ভাবেন না। বরং চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা এখন অনেক বেশি এগিয়ে আসছেন। আর যেহেতু মহিলারা একইসঙ্গে সংবেদনশীল ও যুক্তিবাদী, তাই চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও তাঁরা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছেন ক্রমশ।