নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে হুগলি জেলার তারকেশ্বরের পার্শ্ববর্তী মুক্তারপুর গ্রামের পঞ্চদশী বৃষ্টি মণ্ডল। এবছর ১৬ আগস্ট ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া এম জি বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিত ৬৫তম চন্দননগর মহকুমা স্কুল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ানশিপে মেয়েদের বিভাগে (অনূর্ধ্ব ১৭) দ্বিতীয়স্থান দখল করে মহকুমা ক্রীড়া মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে সে। এর আগে সে নিজের স্কুলের ১৯১৫ সালের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ইন্টার মিডিয়েট স্কিপিং রেসে তৃতীয় স্থান লাভ করে। তখন বৃষ্টি গ্রামের স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত। এরপর সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে হুগলির কাপাসডাঙায় ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তৃতীয় রাজ্য ক্যারাটে ট্রেনিং ক্যাম্পে অভাবনীয় পারফরম্যান্স দেখিয়ে তারিফ কুড়িয়েছিল বৃষ্টি । ২০১৮ সালের ৬ মে সিঙ্গুর স্টারল্যান্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অনুষ্ঠিত ইন্টার স্কুল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ানশিপে বৃষ্টি ব্রোঞ্জ পদক পায়। এছাড়া ২০১৮ সালে ২৯ জুলাই জাঙ্গিপাড়া লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত ইন্টার ক্লাব ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় সে রুপোর পদক লাভ করে। ক্যারাটের সঙ্গে সে ১০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌড়েও সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে তার স্কুল পানিশেওলা ইন্দিরা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েদের সুপার সিনিয়র বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে সে প্রথম স্থান অধিকার করে। ২০১৯ সালে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েদের সিনিয়র গার্লস বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ও ৪০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থানের অধিকারিণী হয় বৃষ্টি। তাছাড়া ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রাজ্যস্তরে যথাক্রমে ইয়েলো বেল্ট ও অরেঞ্জ বেল্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয় বৃষ্টি।
তার কোচ সৌরভ ঘোষ (ক্যারাটে) ও রাজদীপ কারক (দৌড়) সদা সর্বদা বৃষ্টিকে ঐকান্তিক প্রেরণা জুগিয়ে তার সাফল্যের বিজয় রথকে উত্তরোত্তর শিখরে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে খেলাধুলোর সঙ্গে পড়াশুনোটাও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। বর্তমানে সে হরিপাল ব্লকের পানিশেওলা ইন্দিরা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বৃষ্টির বাবা শিশির মণ্ডল লরি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা শুক্লা মণ্ডল গৃহবধূ। তাঁরা সবসময়ই মেয়েকে জীবনে আরও এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। কিন্তু সংসারে আর্থিক অনটন তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবুও তাঁরা মেয়ের আশাপূরণ করার সংকল্পে অনড়। মেয়ের সাফল্যে তাঁরা যেন সবকিছু কবেই ভুলে গেছেন। তারকেশ্বরের গর্ব বৃষ্টির মধ্যে জেতার খিদে প্রবল। সেই জেতার খিদেকে পাথেয় করে বৃষ্টিকে আরও অনেক দূর স্থির সংকল্পে এগিয়ে যেতে হবে। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যে বাংলার ক্রীড়াজগৎ উজ্জ্বল ও বর্ণময় হবে এমনই আশা করছে ক্রীড়ামহল।
বিদ্যুৎ ভৌমিক