ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
এ সব কি ননীবালা আজ থেকে সামলাচ্ছেন? সেই যখন ঘোমটা টানা বউ হয়ে এসেছিলেন তখন শাশুড়ি মা নিজে হাতে করে শিখিয়েছিলেন। প্রসাদে ফলমূল, নাড়ু-মুড়কি ছাড়াও থাকে খিচুড়ি, সাত থেকে ন’রকম ভাজা, লাবড়া, চাটনি, পায়েস, লুচি, সুজি। কথিত আছে, লক্ষ্মীপুজোর দিন দেবী রাতে খোঁজ নেন। কে জেগে আছে? আকাশে কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ অকৃপণভাবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সারারাত জেগে ননীবালা দেবীর থেকে আশীর্বাদ চেয়ে নেন। সন্তানসন্ততির দুধে ভাতে থাকার আকূল কৃপা প্রার্থনা তাঁর। অনাগত ভবিষ্যৎ পরিপূর্ণ হোক। ভালো হোক। আলোর হোক।
মালতীর কথা: ‘এসো মা লক্ষ্মী, বসো ঘরে/ আমার এ ঘরে থাকো আলো করে।...’ আপন মনে গুনগুন করে মালতী, আজ আশ্বিনের পূর্ণিমা। কত যে কাজ এই লক্ষ্মীপুজোর দিনে। যদিও সামান্যই আয়োজন তার। স্থানাভাবে ঘরের কোণের ছোট্ট আসনেই মালতী ঘট পাতে। ভক্তিভরে সামান্য উপচারে সাজায় গৃহকোণ। ফুল, একটা দুটো ফল, বাতাসা আর গতবারের চড়কের মেলায় কেনা ছোট পিঁড়িতে ঝাঁপি এঁকে চাল পিটুলির আলপনা দেয়। তবে হ্যাঁ, বড় যত্নে আঁকে সে এই আলপনা, বাবুর বাড়ির কর্তামাকে দেখেছে কেমন সুন্দর করে ধানের শীষ, পেঁচা, ফুল, লতাপাতা আঁকে। বাজার আগুন আর তার টানাটানির সংসারে একটু একটু করে সম্বৎসর জমিয়ে রাখা টাকা দিয়ে এবার প্রথম ভোগ দেবে মা লক্ষ্মীকে। যৎসামান্য আয়োজন। খিচুড়ি, পাঁচভাজা আর পায়েস। মালতী বহুদিনের হেলে পড়া টালির চালটাকে অ্যাসবেসটাসে ছেয়েছে। সবই লক্ষ্মী মায়ের কৃপায়। এখন ভরা শ্রাবণে চাল চুঁইয়ে আর জল পড়ার ভয় নেই। আগে আকাশের মুখ ভার দেখলে মালতীর মুখ কালো হতো। আর এখন বৃষ্টির বাজনা শুনতে তার বেজায় সুখ। পূর্ণিমার আলোয় আজ মালতীর উঠোন ঝলমলে। চাঁদ বাটি উপুড় করে জ্যোৎস্না ঢেলে দিচ্ছে। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে শুধুই আলো। কোথাও এতটুকু আঁধার নেই। দু-হাত জোড় করে প্রার্থনা করে মালতী এসো মা কমলা, হয়ো না হয়ো নির্দয়া, পাই যেন তব অপার করুণা...
নন্দিনীর কথা: ঝাঁ-চকচকে এগারো তলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে বাইরের পৃথিবীটাকে বড় মায়াবী লাগে। সন্ধেবেলায় বারন্দায় দাঁড়িয়ে রবিঠাকুর গুনগুন করে নন্দিনী। ‘গায়ে আমার পুলক লাগে চোখে ঘনায় ঘোর।’ তার উত্তর কলকাতার শ্বশুড়বাড়ির কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠে সে। বারোয়ারি কলতলা, শ্যাওলা ধরা উঠোন আর আরশোলাদের স্বর্গরাজ্য তেল চিটচিটে রান্নাঘর। উত্তর কলকাতার এঁদোগলি থেকে এই বারোতলার স্বর্গরাজ্য। সবই তো কমলে কামিনীর কৃপায়। প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম করে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়লেও কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন বিশেষ আয়োজন থাকে তার। বেতের ছোট ঝুড়িতে ধান ভর্তি করে তার উপর দুটো রুপোর সিঁদুর কৌটো লাল চেলি দিয়ে মুড়ে দেবীর রূপ হিসেবে কল্পনা করা হয়। আড়ি লক্ষ্মী ইনি। নন্দিনীর শ্বশুড়বাড়ির নিয়ম। গোটা ফ্ল্যাট আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। সন্ধের পরে অতিথি অভ্যাগততে তার ঘর ভরে উঠবে। অনেক কিছুর আয়োজন। ভোগে মাছ দেওয়া হয় মা লক্ষ্মীকে দৃষ্টি ভোগ হিসেবে। আনন্দে আবেগে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে নন্দিনী। তবে মুখে থাকছে দেবী বন্দনা।
‘দক্ষিণ হস্তে বরমুদ্রা দিতেছে অভয়
ধ্যান করি তোমায় মাগো, রহ সর্বময়।’
তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক