কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
সাহিত্যিক নিরুপমা দেবী দু’জন ছিলেন। নিরুপমা দেবী (১) ও নিরুপমা দেবী (২)।
নিরুপমা দেবী (১)— ইনি হৃদয়গ্রাহী সিনেমা অন্নপূর্ণার মন্দির, বিধিলিপি, শ্যামলীর লেখিকা। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে ১৮৮৩ সালে ৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন ও ৭ জানুয়ারিই ১৯৫১ সালে মারা যান। বৈধব্যের পরই তিনি জ্যেষ্ঠভ্রাতা বিভূতিভূষণ ভট্ট ও সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হন। বিভূতিভূষণ ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে লেখা পত্রিকায় তাঁর সাহিত্য রচনার হাতেখড়ি হয়েছিল। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘উচ্ছৃঙ্খল’। স্বদেশি যুগে তাঁর রচিত বহু গান এবং কবিতা খ্যাতিলাভ করেছিল। প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাঁর উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। ১৩১৯-২০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘দিদি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে স্বীকৃত। ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভূবনমোহিনী স্বর্ণ এবং ১৯৪৩ সালে ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৪৩-এ বর্ধমান সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মানিত হন।
নিরুপমা দেবী (২)— ইনি বাল্যকাল থেকেই বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হন। ১৯২৩ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত তিনি একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন। তাঁর রচিত কবিতাগুচ্ছ ‘ধূপ’ ও ‘গোধূলি’ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। বিশের দশকে শান্তিনিকেতনে থাকার সময় তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেন ও রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের নাট্যরূপ দেন। চল্লিশের দশকে তিনি কিছুদিন গান্ধীজির সান্নিধ্যে ছিলেন। ১৯৪৩-এ গঠিত ‘কংগ্রেস সাহিত্য সংঘ’-এ যোগ দেন এবং ১৯৪৫ সালে সংঘ পরিচালিত অভ্যুদয় গীতিনাট্যের কাহিনীসূত্র গানের মালায় ছন্দিত করার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪২ সালের আন্দোলনে ডায়মন্ড হারবার খাদি মন্দিরের অধিকাংশকর্মী যখন কারারুদ্ধ তখন স্বামীর সঙ্গে তিনি মধুসূদনপুর আশ্রমে এসে বসবাস শুরু করেন।
অনুরূপা দেবী—১৮৮২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। অনুরূপা দেবীর স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে যথেষ্ট অবদান থাকলেও মূলত তিনি ছিলেন মহিলা সাহিত্যিক। তাঁর চলচ্চিত্রায়িত উপন্যাসগুলির বিষয়বস্তু বিশেষভাবে মহিলাদের অবসরের আবেগঘন আলোচনা। তাঁর সৃষ্ট উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মন্ত্রশক্তি’, ‘মা’, ‘মহানিশা’, ‘পোষ্যপুত্র’, ‘বাগদত্তা’, ‘পথের সাথী’ প্রভৃতি। তিনি মোট তেত্রিশটি উপন্যাস ছাড়াও বেশ কিছু নাটকও রচনা করেন। ‘জীবনের শ্রুতিলেখা’ নামে আত্মজীবনীমূলক একটি লেখা ‘মাতৃভূমি’ পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন, কিন্তু তা সমাপ্ত করেননি।
শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চার পরিবেশের মধ্যে তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন। অনুরূপাদেবী রাণীদেবী ছদ্মনামে প্রথম গল্পটি লিখে ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার পান।
প্রভাবতী দেবী (সরস্বতী)— প্রভাবতী দেবী অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলার খাটুয়ায় ১৯০৫ সালের ৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বামীর নাম বিধুভূষণ চৌধুরি। মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁর বিবাহ নয়।
গৃহে পিতার সাহায্যেই তিনি শেলি, কিটস, বায়রন প্রভৃতি কবিদের কাব্যের সঙ্গে পরিচিত হন।
কোনও প্রথাগত শিক্ষা তাঁর ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে ‘টিচার্স ট্রেনিং’ করে তিনি শিক্ষকতাও করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বিজিতা’। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে ভারতবর্ষে বিজিতা বাংলায় ‘ভাঙাগড়া’, হিন্দিতে ‘ভার্বী’ ও মালায়লামে ‘কুলদেবতা’ নামে চিত্রায়িত হয়। তাঁর ‘পথের শেষে’ উপন্যাসটি ‘বাংলার মেয়ে’ নামে নাট্য রূপায়িত হয়ে দীর্ঘকাল সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়। ছোটদের জন্যও তিনি ‘কৃষ্ণা রোমাঞ্চ সিরিজ’ প্রকাশ করেন। মহিলা গোয়েন্দা হিসাবে কৃষ্ণার বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব। এছাড়াও তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল সার্কাস’ লিখেছেন। প্রায় তিনশো উপন্যাস রচনা করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘লীলা’ পুরস্কারে সম্মানিত করে ও নবদ্বীপের পণ্ডিত সমাজ তাঁকে সরস্বতী উপাধি প্রদান করে।
১৯৫২ সালে তিনি ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’-র সভাপতি হয়েছিলেন।
রাণু ভৌমিক— তাঁর কর্মের পরিসরই ছিল লেখা। এই পথেই চলে তিনি বিশিষ্ট লেখিকা হয়ে উঠেছিলেন। পাচেঁর দশক থেকে আটের দশক পর্যন্ত লেখনীর মাধ্যমে তিনি মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তাঁর লেখা কলকাতার বহু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ‘ঊর্বশী’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদিকা ও প্রকাশিকা ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হচ্ছে, ‘মৌনমন’, ‘গোধূলি বসন্ত’, ‘শীত সেজে বসন্তের দূত’, ‘সবুজ গ্রহের শকুন’, ‘একটি কলেজের চারটি মেয়ে’ প্রভৃতি।
রাজিয়া খাতুন চৌধুরি—রাজিয়া খাতুন শুধুমাত্র বাড়িতে পড়াশোনা করেই সৃষ্টি করেছিলেন সাহিত্য। হয়ে উঠেছিলেন কবি, গল্পকার, প্রবন্ধকার। অনুবাদকর্মও তিনি করেছিলেন। সওগাত, মোহাম্মদী, নওরোজ প্রভৃতি বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর রচনা পাওয়া যায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হল ‘পথের কাহিনি’। তিনি ১৯০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৩৪ সালে মাত্র সাতাশ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন।
ফুলকুমারী গুপ্ত—ফুলকুমারী গুপ্তের ‘সৃষ্টি রহস্য’ গ্রন্থটি বাঙালি মহিলার প্রথম রহস্য রচনা বলে অভিহিত হয়। তৎকালীন সমসাময়িক বহু মাসিক পত্রিকায় তাঁর মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। শাস্ত্র ও দর্শনে ইনি পণ্ডিত ছিলেন। পণ্ডিত ও সাধক বিনায়ক শাস্ত্রীর ছাত্রী ছিলেন। ১৮৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ‘শ্যামাচরণ সেন ও স্বামীর নাম শ্রীশচন্দ্র গুপ্ত। ১৯৩১ সালের ২ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।