বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
কন্যাসন্তান জন্মানো মানে একটি দায়, বিষাদের সুর। তাই আজও কন্যাসন্তান জন্মানোর পরেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই শিশুকন্যাকে হত্যার ঘটনা আমাদের সমাজে সন্তর্পণে ঘটে। বিজ্ঞানের প্রযুক্তির দৌলতে মানুষ সুকৌশলে সন্তান জন্মানোর আগেই জেনে নিতে শুরু করল গর্ভবস্থায় মায়ের গর্ভে যে ভ্রুণ আছে, সেটি কন্যা না পুত্র? যদি কন্যাভ্রুণ হয় তবে তাকে নষ্ট করা হতো বা তাকে হত্যা করা হতো।
প্রথম ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভাবস্থায় মাতৃগর্ভে কন্যা না পুত্রভ্রুণ আছে তা জেনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবং ৮-এর দশকের প্রথম দিকে কিছু পরীক্ষাগারে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ণয় করে কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হতে থাকে।
পরবর্তীকালে এই কন্যাভ্রুণ হত্যা বা নষ্ট করার বিরুদ্ধে PNDT Act চালু করা হয়। কিন্তু এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাবের জন্য এই ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হল না। ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য USG করা হতো কিন্তু PNDT Act চালু হওয়ার পর, ছোট ছোট যন্ত্রের সাহায্যে গোপনে USG করে লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রুণ হত্যা চলতেই থাকল। যদিও ওই মেশিনগুলি রাখার অধিকার একমাত্র সরকারি হাসপাতালগুলিরই ছিল। অন্যায়ভাবে এইসব অবৈধ কাজ বন্ধ করার জন্য গঠন করা হল ডিস্ট্রিক্ট এপ্রোপ্রিয়েট অথরিটি, যাদের কাজ হল এই অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সিজ করা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কোনও ব্যক্তি বা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ হলে এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও কারাবাসও হতে পারে। এছাড়াও গঠন করা হল State Advisiary Committee। এই অপরাধে ধরা পড়লে জামিন পাওয়া যায় না। সরাসরি কেস শুরু হয় ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়া অসম্ভব। তবুও দেখা গেল PCNDT Act-এর তোয়াক্কা না করেই গোপনে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ চলতেই থাকল। ১৯৯৮ সালে দুটি সেচ্ছাসেবী সংস্থা সিহ্যাট ও মাসুম মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে কন্যাভ্রুণ হত্যার বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেন এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যেক রাজ্যের কাছে PNDT Act প্রয়োগের শিথিলতার কারণ জানতে চায়। সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় এই আইন সংশোধন করে ২০০৩ সালে PCPNDT Act (The Preconception and Prenatal Dignostic Techniques Act) চালু করা হল।
এতে বলা হল, বিশেষ কিছু ব্যাপারে ছাড়া কখনই গর্ভাবস্থায় USG করা ও শিশুর লিঙ্গ প্রকাশ করা যাবে না। এইভাবেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে কন্যাভ্রুণ হত্যা বন্ধ করার।
এছাড়াও, সরকার কন্যাদের সমাজে বেড়ে ওঠার ও প্রকৃত বেঁচে থাকার জন্য নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যেমন বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও।
তবে একটি কথা সত্য কন্যাভ্রুণ হত্যা বন্ধ করতে আইন নয়, চাই মানুষের সচেতনতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী। তাই সরকার, বিভিন্ন সমাজ কল্যাণকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলির সার্বিক প্রচেষ্টা থাকলে তবেই হয়তো বন্ধ করা যাবে কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো নিষ্ঠুর, নারকীয় ও বিভৎস প্রক্রিয়া। মাথা উঁচু করে বাঁচবে মেয়েরা।