বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
নারী কি পারবে আমাদের এই পৃথিবীকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে? নারী করবে পৃথিবী রক্ষা! সে তো নিজেকেই পুরুষের, পুরুষতন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। এমন অবস্থায় পৃথিবীর ভার নারীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে কি? এমন বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে নিজের বক্তব্য সাজিয়েছিলেন অভিনেত্রী ওপ্রা উইনফ্রে ‘উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর দশম অধিবেশনে। অভিনেত্রী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও এখন তিনি নিজস্ব টক শো ‘দ্য ওপ্রা উইনফ্রে শো’-এর সঞ্চালক।
গত ১০ থেকে ১২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অনুষ্ঠিত হয় উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড-এর দশম অধিবেশন। বক্তব্য রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহিলারা হাজির ছিলেন। আমাদের দেশ থেকে প্রিয়াংকা চোপড়াও হাজির ছিলেন বক্তা হিসেবে। এছাড়াও স্টেসি অ্যাব্রাম, ব্রি লারসন, অ্যাশলে জুড, জিল ও ফেথ সোলোওয়ে সহ ছিলেন আরও অনেকেই। সমাজের নানা স্তর ও পেশা থেকে মহিলারা এই অধিবেশনে অংশগ্রণ করেন। এই যেমন স্টেসি অ্যাব্রাম পেশায় উকিল হলেও তাঁর নেশা গল্প লেখা। রোম্যান্স নভেলের লেখিকা হিসেবে যথেষ্ট নাম ডাক রয়েছে তাঁর। ব্রি লারসন আবার পেশায় অভিনেত্রী। কিছু ছবি পরিচালনার কাজও তিনি করেছেন হলিউডে। অ্যাশলে জুডের আবার দুটি পরিচয় এবং দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে তিনি অভিনেত্রী, অন্যদিকে রাজনীতিবিদ।
এমন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা সকলেই বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিরিখে নারীর স্থান নিয়ে গভীর ও চুলচেরা আলোচনায় মেতে ওঠেন। তাঁদের সেই আলোচনার মাধ্যমে মি টু মুভমেন্ট, নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীর ভূমিকা, সমকামি প্রেম ও সম্পর্ক রক্ষায় নারী, পুরুষতন্ত্র ও তার অগ্রাধিকার রোধে নারীর ভূমিকা ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে আসে।
প্রিয়াংকা চোপড়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, নারী স্বাধীনতা একটা চেতনা। আর সেই চেতনা নারী মনে উদয় না হলে নারী উন্নয়ন অসম্ভব। তাঁর মতে মেয়েরা সর্ব অর্থে পারদর্শী। কিন্তু সেই পারদর্শীতার আন্দাজ মেয়েদের মধ্যে নেই। তাই পুরুষতন্ত্রের অধীনেই চিরকাল নারীর অবস্থান। এমন কি প্রথম বিশ্বের দেশগুলিরও একই অবস্থা। মেয়েরা যে তিমীরে সেই তিমীরেই পড়ে রয়েছে। নাহলে আমেরিকায় এই অধিবেশন হত না। অথচ বিশ্বের উন্নতিতে নারীর অবদান অনেকখানি। নারী যে অর্ধেক আকাশের অধিকারি তা তাকে বুঝতে হবে। নিজের মনে যে ভাবনাগুলির উদয় হয় তাকে কাজে লাগাতে হবে। দৃঢ়ভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই নারী বিশ্বের দরবারে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে। পুরুষতন্ত্র নিজের দাঁতনখ বের করে সব সময়ই নারীকে অবদমন করতে চায়। নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনার প্রয়োগে মেয়েরাই পারে সেই অবদমনের হাত থেকে বাঁচতে। সমাজে মেয়েদের অবস্থান বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রিয়াংকা চোপড়া তৃতীয় বিশ্বের মেয়েদের অবস্থানের কথা বারবার উল্লেখ করেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন যে ইউনিসেফের তরফে গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যখন তিনি নিযুক্ত হন তখনই তিনি দেখেছেন প্রথম বিশ্বের নারীর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। পুরুষতন্ত্র সেখানেও তার দাঁত বসিয়েছে। তবু আত্মবিশ্বাস ও শিক্ষার ওপর ভর করে সেখানে মেয়েরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যা তৃতীয় বিশ্বের মেয়েরা পারেনি।
উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড-এর সি ই ও টিনা ব্রাউন তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘মাত্র কয়েকজন আগ্রহী মহিলাকে দিয়ে যে দলটি দশ বছর আগে গড়ে তুলেছিলাম তা যে আজ এত বড় হয়েছে এবং গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে তা ভেবে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। মেয়েরা আরও এগিয়ে যাবে এই আশা করব।’ গত বছর এই সংগঠনের নবম সামিটে অন্যতম বক্তা ছিলেন হিলারি ক্লিন্টন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আজকের মেয়েরা অনেক বেশি সাবলীল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে তারা ভয় পায় না। এটা নারীর উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন।’ দশম অধিবেশনে সেই অগ্রসর ও সাহসী মেয়েদের জন্য একটি ‘ডিফেন্স ফান্ড’ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই অধিবেশনে এমন বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয় যেখানে নেতৃত্বে পাওয়া গিয়েছে নারীকে। মেয়েরা কীভাবে সমাজের উন্নতির জন্য এগিয়ে এসেছেন এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন সে বিষয়ে ভিডিও ক্লিপও দেখানো হয়।
প্রিয়াংকা চোপড়া নিজের বক্তব্যের শেষে বলেছেন ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশও যে এই ধরনের নারী কেন্দ্রিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে এটাই আশার কথা। তিনিও আরও বলেন ভবিষ্যতে আরও অনেক ভারতীয় মহিলা এমন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করুক এটাই আকাঙ্ক্ষিত।