সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
পুজো মানেই নিত্যনতুন ভোজ। পুজো মানেই খাওয়াদাওয়ার উৎসব। আর বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো হলে তো কথাই নেই! চারদিন দু’বেলা খাওয়াদাওয়ার নানা মেনু নিয়ে সেজে ওঠে বাঙালির রান্নাঘর। অনেকে আবার হোটেলে রেস্তরাঁতেও ঢুঁ মারেন এই সময়। উদ্দেশ্য, আড্ডা সহযোগে জমাটি ভোজ। এমন দিনে বাঙালির পাতে দু’টি বিশেষ রান্নার রেসিপি সাজিয়ে দিলেন আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলের শেফ প্রমোদ সিংহ। সঙ্গে জানালেন রান্না নিয়ে নিজের নেশার কথা । তাঁর প্রিয় খাবার ও রাঁধুনি হয়ে ওঠার গল্পও শোনালেন।
উৎসবের রান্না বললে প্রথমেই আপনার কী মনে পড়ে?
আমি নেপালি। আমাদের এই ঘরানায় উৎসবের দিনে আমরা বাড়িতে ফক্স ব্রেড বা শেয়াল রুটি বানাতাম। অনেক ছোটবেলা থেকেই এটা আমার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। আজও আমার কাছে উৎসবের মরশুমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফক্স ব্রেড বানানোর স্মৃতি। তবে তাছাড়াও উৎসব বলতেই রান্নার কথা মনে হয়। দেওয়ালির সময় গোটা বাড়িটা নানা ধরনের রান্নার গন্ধে ম ম করত। মায়ের হাতের সেসব রান্না আজও আমার উৎসবের স্মৃতি জুড়ে রয়েছে।
ফক্স ব্রেড বা শেয়াল রুটি কী?
নামে ব্রেড হলেও এটা কিন্তু ময়দা দিয়ে বানানো হয় না। বরং চালের গুঁড়ো দিয়ে বানাতে হয়। তবু এটাকে আমরা ব্রেড বলি। এই রুটির বিশেষত্ব এর মিষ্টি স্বাদ। দারচিনির গুঁড়ো আর চিনি মেশানো হয় চালের গুঁড়োর সঙ্গে। তারপর তা আভেনে বেক করে বানানো হয় ফক্স ব্রেড। খুব ভিন্ন স্বাদ এই ব্রেডের।
আপনার রান্নার ঝোঁক হল কেন?
ছোট থেকেই রান্নার নেশা ছিল আমার। মাকে দেখতাম নানারকম রান্না করতে। আমিও তাঁর দেখাদেখি সেই খাবারগুলোই বানানোর চেষ্টা করতাম। এই রান্নার নেশা থেকেই আমি হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। রান্নার মশলা বা অন্যান্য উপকরণের গন্ধ আমায় টানত। আর সেই কারণেই আজ আমি শেফ হতে পেরেছি।
রান্নার কোন জিনিসটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে?
রান্নার পদ্ধতি ও স্বাদ আমায় সবচেয়ে আকৃষ্ট করে। আমি দেখেছি সামান্য উপকরণের অদলবদলে গোটা রান্নার স্বাদটাই কেমন বদলে যায়। এটা খুবই মজার ব্যাপার। যেমন মাকে দেখতাম অরিজিনাল রেসিপি মেনে বানানা ব্লসম তৈরি করতে। আমি একদিন তাতেই নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করলাম। কলার পরিমাণ অল্প কমিয়ে তার সঙ্গে একটু দারচিনি মেশালাম। চিনির মাত্রা হালকা বাড়িয়ে দিলাম। ব্যস, বানানা ব্লসমের স্বাদটাই গেল পাল্টে। এমন ছোটখাট বদলে রান্নার স্বাদ পরিবর্তন এটাই আমার দারুণ লাগত। আজও লাগে।
পাঁচতারা হোটেলে কাজ করছেন এতদিন। উৎসবের মরশুমে প্রতি বছর অন্য ধরনের মেনু তৈরি করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
চ্যালেঞ্জিং তো বটেই, তবে একই সঙ্গে আনন্দও হয় প্রতি বছর একাধিক উৎসবে মেনু প্ল্যান করতে। আর ওই যে বললাম একই পদের স্বাদ বদল— এই পদ্ধতিও কাজে লাগাই মাঝেমধ্যে। চেনা স্বাদেই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। বেশ ভালো লাগে।
উৎসবের মেনু প্ল্যানিংয়ের সময় কী কী মাথায় রাখেন?
আমাদের গ্র্যান্ড মার্কেট প্যাভেলিয়নের একটা আলাদা আকর্ষণ এর নর্থ ইস্ট কাউন্টার। আমরা প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় সেই কাউন্টারের মেনুতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। মশলাগুলো বদল করি। উপকরণে তারতম্য ঘটাই। ধরুন রাইস বেসড মেনুতে কখনও একটু ঝাঁঝালো স্বাদ দিলাম। আবার কখনও তাকেই একটু টক মিষ্টি স্বাদে তৈরি করলাম এইভাবেই মেনুতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। এছাড়া কিছু ট্র্যাডিশনাল মেনু থাকে প্রতিবারই। বাঙালি ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে তা তৈরি করা হয়।
হোম শেফদের জন্য কোনও বিশেষ বার্তা আছে?
রান্নাকে উপভোগ করতে শিখতে হবে। প্রতিটি পদে রান্না তার রূপ বদল করে। সেই রূপগুলো খুঁটিয়ে দেখতে হবে। তাতে মন দিতে হবে। যেন কোনও পদ যদি ভাপাতে হয় তাহলে ঠিক কতটা ভাপাবেন, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। রান্না অনেকটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো। প্রতি পদে নজর না দিলে শেষ পর্যন্ত তা ঠিকমতো দাঁড় করানো যায় না। একটা বাড়ি তৈরি করতে গেলে যেমন ইট গাঁথা থেকে সঠিকভাবে নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়, রান্নার ক্ষেত্রেও তেমন। সব্জি কাটা, মশলা বাছা, ফোড়ন দেওয়া, ভাপানো, ফোটানো সব ক’টা ধাপই মনোযোগ সহকারে করতে হয়। তবেই রান্না স্বাদে গুণে অনন্য হয়ে ওঠে।
পর্ক উইথ ব্যাম্বু শুট
উপকরণ: পর্ক বেলি টুকরো করে কাটা ৮০০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, জল ৫০০ মিলি, শুকনো লঙ্কা থেঁতো করে নেওয়া ১০-১২টা, ড্রাই ব্যাম্বু শুট ১০০ গ্রাম, আদা কুচি থেঁতো করে নেওয়া ৫০ গ্রাম, রসুনের কোয়া থেঁতো করে নেওয়া ৫০ গ্রাম, সেচুয়ান পেপার কর্ন পাউডার ৩ গ্রাম, পেঁয়াজ শাক কুচি করা ৫ গ্রাম।
পদ্ধতি: একটা পাত্র গরম করে নিন। পর্কে নুন মাখিয়ে সেই গরম পাত্রে এপিঠ ওপিঠ করে ভাজুন। তেলের বদলে অল্প অল্প করে জলের ছিটে দিয়ে ভাজবেন। পর্ক থেকে যখন তেল ছেড়ে আসবে তখন বাকি জল তাতে ঢেলে দিয়ে তা সেদ্ধ হতে দিন। জল ফুটতে শুরু করলে শুকনো লঙ্কা, ড্রাই ব্যাম্বু শুট, থেঁতো করা আদা, রসুন মিশিয়ে দিন। এইভাবে পর্ক ঢাকা দিয়ে এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট রান্না করুন। মাংস নরম হয়ে গেলে বাকি মশলা মিশিয়ে দিন। উপর থেকে পেঁয়াজশাক ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। সাদা ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।
সিকিমি স্টাইল চিকেন কাউরি
উপকরণ: কাউরি বানানোর জন্য: ময়দা ৫০০ গ্রাম, বেকিং পাউডার চা চামচ, ফেটানো ডিম ২টো, জল প্রয়োজন মতো।
ব্রথ বানানোর জন্য: চিকেন স্টক ১ লিটার, পেঁয়াজ বাটা ৪ টেবিল চামচ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, টম্যাটো পেস্ট ২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো টেবিল চামচ, সাদা তেল ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা ১০ গ্রাম, নুন স্বাদ মতো, বোনলেস চিকেন লেগপিস ২০০ গ্রাম।
টপিং বানানোর জন্য: ধনেপাতা কুচি ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ চা চামচ, চিলি ফ্লেক্স চা চামচ, চিলি অয়েল চা চামচ, চাকা করে কাটা লেবুর টুকরো ৪টে।
পদ্ধতি: কাউরি বানানোর জন্য: সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর তা মেখে নিন। আধ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর তা থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করুন। হাতের সাহায্যে তা চ্যাপ্টা করে গড়ে বাটির মতো করে নিন। তারপর তা গরম জলে ফুটিয়ে নিন। এবং জল ঝরিয়ে রেখে দিন।
স্টক বানানোর জন্য: চিকেনের টুকরোগুলোকে নুন, হলুদ ও লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন। আধ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর কড়ায় তেল গরম করে চিকেন ভেজে নিন। এবার তাতে একে একে স্টকের সব উপকরণ মেশান ও ফোটাতে থাকুন। আধ ঘণ্টা ঢিমে আঁচে রান্না করুন। নুন ও মিষ্টি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
এবার একটা বাটিতে কাউরিগুলো সাজান। তার উপর চিকেন ঢেলে দিন। উপর থেকে টপিংয়ের সব উপকরণ একে একে ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।