স্বাস্থ্য বেশ ভালোই থাকবে। আর্থিক দিকটিও ভালো। সঞ্চয় খুব ভালো না হলেও উপার্জন ভালো হবে। ... বিশদ
লকডাউনের সুযোগে বাড়ির রান্নাঘরকেই রেস্তরাঁর কিচেন বানিয়ে ফেলেছেন স্বনামধন্য শেফ অজয় চোপড়া। ফোনালাপে তাঁর সঙ্গে আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিল আমার। নিজের রান্নার কথা জানালেন। স্বাস্থ্যকর অথচ সুস্বাদু রান্নার টিপসও দিলেন। আর দিলেন ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলার জন্য নতুন ধরনের কিছু রেসিপি। শেফ জানালেন দূরদর্শনের অনুষ্ঠান করার সুবাদে রান্না নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করার সুযোগ তিনি পান। আপাতত লক ডাউনের কারণে বাড়িতেই সেই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন তিনি। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর রেসিপি তৈরির দিকেও মন দিয়েছেন।
এই সময় কেমন খাবার খাচ্ছেন শেফ অজয় চোপড়া? প্রশ্ন করতেই তুরন্ত উত্তর দিলেন, সময়টা ভালো নয়। তাই খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। এমন খাবার খাওয়া উচিত যা ভেতর থেকে শরীরকে শক্তিশালী করে তুলবে। শেফ নিজেও তেমন খাবার খাচ্ছেন। সারাদিনে তিনটি মেন মিল তিনি খান। সকালে একটু ভারী ব্রেকফাস্ট করেন। দুপুরে লাঞ্চ আর রাতে ডিনার। এই তিনটি মিলের মধ্যে ডিনার সবচেয়ে হালকা রাখেন শেফ। সাধারণত স্যুপ খান ডিনারে। সঙ্গে ব্রেড বা রুটি। ব্রেকফাস্ট মেনু নিয়ে একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। যেমন নোনতা মাফিন, গ্রিন স্যালাড ইত্যাদি, লাঞ্চে ভাত, সব্জি, ডাল আর মাছ বা চিকেন থাকে তাঁর মেনুতে। আর ডিনার একপদে।
ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রান্নায় বেশি পরিমাণে রশুন ব্যবহার করতে বলেছেন শেফ। তিনি জানিয়েছেন রশুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট আছে। তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এই সময় ব্রেকফাস্টে গারলিক ব্রেড খাওয়া যেতে পারে। বাড়িতে সহজে তা বানানোও যায়। একসঙ্গে অনেকটা বানিয়ে রেখে দেওয়া যায়। এছাড়া স্যালাডও এই সময়ের পক্ষে খুব ভালো। গ্রিন বিন, ওয়ালনাট স্যালাড ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। রাতের খাবার যদি একটু অন্যরকম করতে চান তাহলে স্যুপ আর ব্রেড খেতে পারেন।
শেফ অজয় চোপড়ার মতে দিনে একটা ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া উচিত। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রোজ সকালে মধু আর লেবুর রসের সঙ্গে এক চামচ কমলা লেবুর জ্যুস খাওয়া খুবই উপকারী বলে জানালেন তিনি। যে কোনও খাবারকে মুখরোচক করে তোলার জন্য একটা স্বাস্থ্যকর ডিপের রেসিপি জানিয়েছেন তিনি। জল ঝরানো টক দই পুদিনা পাতা বাটা, মধু ও লেবুর রস একসঙ্গে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। তাতে স্বাদ মতো নুন ও গোলমরিচ গুঁড়ো মেশান। এই ডিপ যে কোনও খাবারের সঙ্গেই খেতে পারেন।
শেফ অজয়ের মতে রান্নার স্বাদ পুরোপুরি নুন আর মিষ্টির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। স্বাদের সঙ্গে তেল, ঘি বা মশলার কোনও যোগ নেই। ফলে হালকা রান্নাও সুস্বাদু হতে পারে। এই লক ডাউনের সময় সবাই যখন গৃহবন্দি, বাজারেও বিশেষ কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সহজ দুটি রেসিপি জানালেন শেফ যা শরীরকে শক্তিশালী করবে ও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ব্রকোলি ওয়ালনাট স্যুপ
উপকরণ : ব্রকোলি ১টা মাঝারি মাপের, আখরোট ১০০ গ্রাম, ফ্রেশ ক্রিম ১ চামচ, রশুন ৬ কোয়া, পেঁয়াজ ১টা মাঝারি মাপের কুচানো, টম্যাটো ১টা কুচানো, নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, সাদা তেল বা অলিভ অয়েল ১ টেবিল চামচ।
প্রণালী : ব্রকোলির ডাঁটি ছাড়িয়ে ছোট ছোট ফুলে কেটে নিন। তারপর তা ভাপিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। একটা কড়াইতে অলিভ অয়েল নিয়ে কিছুটা রশুন থেঁতো করে ফোড়ন দিন। তাতে পেঁয়াজ ভাজুন। তারপর টম্যাটো দিন। কিছুক্ষণ ভেজে তাতে ভাপানো ব্রকোলি দিন। নুন দিয়ে অল্প আঁচে ভাজুন। আখরোট ভেঙে দিন। বাকি রশুন কুচিয়ে দিয়ে দিন। সব একসঙ্গে মিশে গেলে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ফোটান। নামানোর আগে ক্রিম ফেটিয়ে মিশিয়ে দিন। চাইলে একটু মাখন ছড়িয়ে নামাতে পারেন।
নোনতা ওটস মাফিন
উপকরণ : শুকনো উপকরণ : ওটস ৩০ বা ৩৫ গ্রামের ছোট প্যাকেট, নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো সামান্য, পালং শাক কুচি ১ কাপ, কড়াইশুঁটি ১/২ কাপ, চিজ বা জল ঝরানো টক দই ২ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার ১ চা চামচ।
মাফিন মিক্সচার বানানোর জন্য : ডিম ২টো, নুন স্বাদ মতো, দুধ দেড় কাপ, ময়দা ২ কাপ।
প্রণালী : সব শুকনো উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটি আলাদা পাত্রে ডিম, নুন আর দুধ একসঙ্গে নিয়ে তা ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার দিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর তাতে ময়দা মেশান। হাতা দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে একটা মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণ শুকনো উপকরণের সঙ্গে হাতা দিয়ে মেশান। সব একসঙ্গে মিশে গেলে বেকিং ট্রে বা মাফিনের বাটিতে এই মিশ্রণ ঢালুন। তবে তার আগে বেকিং ট্রে বা মাফিন পট অল্প মাখন দিয়ে গ্রিজ করে নিন। মিশ্রণ ঢালার সময় খেয়াল রাখবেন যেন ট্রেতে একটু জায়গা থাকে। প্রিহিট করা আভেনে এই মিশ্রণ ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ২০ মিনিট বেক করুন। মাফিনে সোনালি রং ধরলে তা আভেন থেকে বার করে পরিবেশন করুন।