মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
রানি কি ভাও— বিশালাকার এই কুয়ো বা স্টেপওয়েল-এর অবস্থান গুজরাতের পাটান জেলায়। আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড, ভরত ভাইয়ের মুখে ইতিহাসের কাহিনি শুনতে শুনতেই পৌঁছে গেলাম রানিদের খাসমহলে। সে প্রায় ১১০০ শতাব্দীর কথা। রানিদের মহলের সামনের প্রকৃষ্ট চাতাল সংলগ্ন এই বিশালাকার কুয়ো তৈরি হয়েছিল জল সংরক্ষণের জন্য। তারই ধার দিয়ে ধাপে ধাপে নেমে গিয়েছে সিঁড়ি। আর সেই সিঁড়ির ধাপ ডিঙিয়ে জলের সাম্রাজ্য। সেখান থেকেই জল পৌঁছত রানিদের স্নানকক্ষে। নিভৃত বেলায় নানা সুগন্ধির সম্ভারে সাজানো হতো স্নানকক্ষের জল। মরশুম অনুযায়ী কখনও চন্দন, কখনও জুঁই ফুলের সুবাস কখনও বা গোলাপের সুগন্ধ ভেসে বেড়াত জলে। তাতেই গা ডুবিয়ে চলত রাজারানির আমোদ প্রমোদ। ভরত ভাই বললেন, কখন কোন সুগন্ধি জলে মেশানো হবে তার আবার প্রচুর নিয়ম ছিল। পূজাপর্বের আগে স্নানের জলে ভাসানো হতো চন্দনের গুঁড়ো। আর তার আগে রানিদের গায়ে মাখানো হতো হলুদ আর চন্দনের মিশ্রণ। চন্দনের সঙ্গে ভক্তির এক অমোঘ সম্পর্ক। এরপর গ্রীষ্মের দুপুরে রানিরা যখন দিনের গ্লানি শরীর থেকে মুছে ফেলে সুগন্ধে সুরভিত হতে চাইতেন, তখন স্নানের জলে মেশানো হতো লেবুর সুবাস। আর সন্ধের সাজের আগে রানিদের স্নানের জল সেজে উঠত মরশুমি ফুলের সুগন্ধে।
নির্যাসের সুগন্ধ
রাজারানি থেকে বর্তমান যুগের পুরুষ ও মহিলা সকলেই সুগন্ধে সুরভিত থাকতে চান। বিশেষত শীতের শেষে গ্রীষ্ম যখন জাঁকিয়ে পড়ে ঘাম আর ক্লান্তি পেয়ে বসে আমাদের। এই সময় নিজেদের সুরভিত রাখাটা খুবই জরুরি, জানালেন রূপ বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ। তিনি বললেন এক এক সময় এক এক রকম সুগন্ধ ব্যবহার করলে শরীর ও মন দুই-ই ভালো থাকে। আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তাই বসন্তে প্রকৃতি শিমূল, পলাশ বা কৃষ্ণচূড়ার মতো রাঙা নেশায় মেতে উঠলেও বাতাস থাকে রুক্ষ। আর সেই রুক্ষতার সঙ্গে গ্রীষ্মের প্রথম হলকা মিশলে তা নিমেষেই অসহনীয় হয়ে ওঠে। এমন দিনে তাই সুগন্ধে ভরে রাখুন নিজেকে। এযুগে আমরা বিভিন্ন ধরনের পারফিউম, ডিও ইত্যাদি ব্যবহার করি। তবু সুরভিত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় এসেনশিয়াল অয়েল, জানালেন কেয়া শেঠ। তাঁর কথায়, ‘পারফিউমে যে ধরনের সুগন্ধ কেমিক্যালের সাহায্যে মেশানো হয় তা-ই যদি নির্যাসের রূপে ব্যবহার করি তাহলে সেই গন্ধ দীর্ঘক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকে। আগেকার দিনে আমাদের মা ঠাকুরমারা নানা ফুল, ফল ও প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তেল বার করে তা মাখতেন। আধুনিক যুগে সেইসব তেলেরই পোশাকি নাম হয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল।’
সুরভিত মনপ্রাণ
এসেনশিয়াল অয়েল কিন্তু সরাসরি ত্বকে লাগানো যায় না। হয় তা স্নানের জলে মেশাতে হয়, না হলে বডি অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে গায়ে মাখতে হয়। প্রত্যেক দিন স্নানের সময় বিশেষ কিছু সুগন্ধি যদি আমরা জলে মিশিয়ে নিই তাহলে সেই সুবাস আমাদের সঙ্গ ছাড়বে না সহজে। সকালে স্নানের সময় কমলালেবুর নির্যাস থেকে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল জলে মিশিয়ে নিলে একটা সাইট্রাস ফ্রেশ ভাব আমাদের রোমকূপে মিশে যাবে।
নানারকম
এসেনশিয়াল অয়েল প্রসঙ্গে একটা কথা প্রথমেই বলা দরকার। এই অয়েলে সুগন্ধ দু’ভাবে আমাদের শরীরে মেশে, ‘টপ নোড’ ও ‘বেস নোড’। যে গন্ধ টপ নোডে থাকে, সেটা আমাদের সঙ্গে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। অর্থাৎ সেই সুগন্ধ ব্যবহার করে আমরা যেখানেই যাব সেখানকার হাওয়ার মধ্যেও তা সঞ্চারিত হবে। এবং অন্যরাও সহজেই সেটা অনুভব করবেন। আর বেস নোড তুলনায় মৃদু। এই সুগন্ধ আমাদের গায়েই মিশে থাকে। লেবুর সুবাস আমাদের কাজ করার এনার্জি দেয়। এর মধ্যে একটা চিরস্থায়ী এফেক্ট রয়েছে। সারাদিনের নামে বেরনোর আগে তাই এই সুগন্ধ খুবই কার্যকর।
কিন্তু সান্ধ্যকালীন নেমন্তন্নে যখন বেরচ্ছেন তখন আবার একটু কড়া গন্ধ ব্যবহার করতে পারেন। সেইক্ষেত্রে ফুলের গন্ধ সবচেয়ে উপযুক্ত। গোলাপ বা জুঁই সান্ধ্য জমায়েতে আদর্শ। তবে গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় জুঁইয়ের সুরভি যতটা মাতাল করবে, আপনার হৃদয় ও মন সারা বছর কিন্তু তেমনটা হবে না। শীতের নাইট পার্টিতে বরং গোলাপসুন্দরী হয়ে উঠুন। আবার রাতে শোওয়ার আগে যখন স্নান করছেন তখন স্নায়ুকে ঠান্ডা রাখা জরুরি। এমন সুগন্ধ মেশান স্নানের জলে যা আপনার মনে আরামের প্রলেপ লাগাবে। সেক্ষেত্রে আদর্শ ল্যাভেন্ডারের সুবাস। ল্যাভেন্ডারের মধ্যে একটা মিষ্টত্ব রয়েছে। নরম, স্নিগ্ধভাব যা আপনাকে দেবে মনের আরাম।
একটু ভিন্ন সুবাস
ফুলের গন্ধ যদি ভালো না লাগে তাহলে সান্ধ্যকালীন পার্টিতে নেরোলি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা যায়। এই সুগন্ধে মাদকতা আছে। বসন্তের দিন শেষে কারও মন রাঙাতে চাইলে এই তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। এই সুগন্ধের সঙ্গে সাজেও একটু লাস্য ধরে রাখুন। চুলে একটু এলো ভাব থাক, ঠোঁট রাঙান গাঢ় রঙে। তার সঙ্গে নেরোলি এসেনশিয়াল অয়েল। এ যেন রাজযোটক। এই সাজেই পার্টির শো স্টপার আপনি।
তেলে না জলে
জলের সঙ্গে মেশালে সুগন্ধির সুরভি বেশি কাজ করে। কারণ স্নানের সময় আমাদের শরীর যখন ভেজা থাকে, তখন এসেনশিয়াল অয়েলের সুগন্ধ রোমকূপে সহজে মিশে যায়। তারপর সারাদিনের রোদে জলে ধুলোয় ঘর্মাক্ত দেহও সেই সুগন্ধে ভরপুর থাকে। স্টিম বাথের মাধ্যমেও যদি এসেনশিয়াল অয়েলের সুগন্ধ আমরা শরীরে নিতে পারি তাহলে তা আবার দ্বিগুণ কাজ করবে।
চন্দনের সৌরভ
গ্রীষ্মে তো বটেই, এমনকী বসন্তকালেও অনেকের মাথা অতিরিক্ত ঘামে। তাঁদের জন্য মেহেন্দি পাতা বাটা উপযুক্ত। এই পাতা আমাদের স্নায়ু ঠান্ডা রাখে। চুলে কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং মাথায় একটা সুগন্ধ বজায় রাখে যা ঘামের গন্ধকে ছাপিয়ে যায়। চন্দনের সুবাস যদি ভালো লাগে, তাহলে শরীরের ঢাকা অংশে তা ব্যবহার করুন। যেমন আন্ডারআর্মস, হাঁটুর পিছন, পায়ের আঙুলের ফাঁক ইত্যাদি। এই সুগন্ধ খুবই দীর্ঘস্থায়ী। ফলে তার ব্যবহার আমাদের অনেকক্ষণ সুরভিত রাখে। যদি এই তেল দিয়ে প্যাক বানিয়ে তা গায়ে মাখতে চান তাও সম্ভব। প্যাকের ক্ষেত্রে স্যান্ডাল এসেনশিয়াল অয়েল সবচেয়ে কার্যকর। সেক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম মুলতানির মাটির সঙ্গে সমপরিমাণে কেওলিন পাউডার মিশিয়ে তার সঙ্গে ১৫-২০ ফোঁটা রোজ ও একই পরিমাণে স্যান্ডাল অয়েল মেশান। তারপর সেই প্যাক লাগিয়ে মিনিট কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকও ভালো থাকবে আর আপনি থাকবেন সুরভিত।
ঘরোয়া টোটকা
ঘরোয়া সুগন্ধির প্রসঙ্গে কর্পূরের কথা বললেন কেয়া শেঠ। কর্পূর মেশানো জলে স্নান করলেও তা সুগন্ধি হিসেবে কাজ করবে। বিশেষত যাঁদের অতিরিক্ত ঘামের প্রবণতা থাকে তাঁরা স্নানের জলে কর্পূর মেশাতে পারেন। ফুলের সুগন্ধ যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা ফুলের পাপড়ি জলে বা তেলে ফুটিয়ে নিন। তারপর তা ঠান্ডা করে ছেঁকে সেই তেল বা জলটা গায়ে লাগান। অনেক সময় শরীরের ঢাকা অংশে ঘাম অতিরিক্ত হয়। সেটা যদি কমাতে চান তাহলে রসুন, পেঁয়াজ বা আদার রস সেখানে লাগিয়ে মিনিট কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন। তারপর সেখানে সুগন্ধি লাগিয়ে নিন। আবার অনেকে লেমনগ্রাসকেও সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করেন। এটা থেঁতো করেও গায়ে সরাসরি লাগালেও সুরভিত থাকা যায় অনায়াসে।