পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বেড়ানোর মরশুম চলছে। ঘরের কাছে অথবা একটু দূরে ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকেই। কেউ বা পিকনিকের আনন্দে মশগুল। কিন্তু তারপরেই চাই ত্বকের যত্ন। বেরিয়ে ফিরে রোদে পোড়া ত্বক কীভাবে স্বমহিমায় ফেরাবেন? পরামর্শে রূপবিশেষজ্ঞ দিব্যা সিং। তাঁর কথায়, ‘বেড়ানোর একটা বড় সমস্যা স্কিন ট্যান। কিছু ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিন এবং ট্যান তাড়ান।’ রইল সেসব উপায়।
দইয়ের প্যাক
টক দইয়ের মতো ত্বকের বন্ধু বড় একটা পাবেন না। যে কোনও ত্বকেই কাজে দেয়। ঘরে পাতা টক দইয়ের জল ঝরিয়ে নিন। তারপর পরিমাণমতো দই একটা বাটিতে নিয়ে ফেটিয়ে নিন। এবার এই ফেটানো দই মুখে, হাতে, ঘাড়ে সমানভাবে মাখিয়ে রাখুন। মিনিট পনেরো রেখে তা হালকা হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। অনেকেই দইকে ফেস স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে একটু চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এতে মুখ থেকে তা ঘষে তোলার সময় ট্যান রিমুভ ও স্ক্রাব, দুটোই একসঙ্গে হয়ে যাবে। ত্বকের ট্যান তাড়ানোর পাশাপাশি দই ত্বককে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধও করে।
লেবুর রস ও মধু
লেবুর রস খুব ভালো ট্যান রিমুভার। বলাই বাহুল্য এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাতে ত্বকের জেল্লা বাড়ে। তবে কখনওই লেবুর রস সরাসরি ত্বকে মাখা উচিত নয়। সেনসিটিভ স্কিন হলে তা পুড়ে যাবে। অন্য ক্ষেত্রেও লেবুর রস সরাসরি প্রয়োগে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। ফলে লেবুর রস জলে গুলে নিতে পারেন। না হলে তাতে সমপরিমাণে মধু মিশিয়ে তা মুখে, হাতে, ঘাড়ে লাগান। পনেরো মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে তিনদিন লেবু ও মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ট্যান খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে। হাতের কাছেই রয়েছে এই সহজ সমাধান।
আলুর রস
আলু ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী। এতে ত্বক উজ্জ্বল হয়। তবে এই রস ব্যবহার করলে ত্বকে একটা সাময়িক জ্বালাভাব হতে পারে। সেটা উপেক্ষা করুন। জ্বালা অর্থাৎ ডি-ট্যানিং শুরু হয়ে গিয়েছে। কীভাবে রস করবেন আলুর? দিব্যা জানালেন, আলু খোসা ছাড়িয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। গরম জলে ধুতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এরপর তা গ্রেটারের সাহায্যে কুরিয়ে নিন।
তারপর এই কোরানো আলু একটা পাতলা সুতির কাপড়ে রেখে তা হাতের সাহায্যে চিপে রস করে নিন।
এই রস একটু ঠান্ডা করে মুখে সরাসরি লাগান। পনেরো মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন স্কিন ট্যান গায়েব।
পেঁপের সঙ্গে দুধের মিশেল
পাকা পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে দানা ফেলে দিন। এবার তা টুকরো করে কেটে বেটে নিন। তাতে ১ বড় চামচ মধু আর দু’চামচ দুধ মেশান। মিশ্রণটা মোটামুটি থকথকে হবে। এবার তা মুখে ও ঘাড়ে মাখুন। আধ ঘণ্টা রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল হবে। চামড়াও টানটান থাকবে।
টম্যাটো আর দই
স্কিন ট্যানের ক্ষেত্রে টম্যাটোর জুরি মেলা ভার। আর তার সঙ্গে যদি একটু দই মেশানো যায় তাহলে তো কথাই নেই, জানালেন দিব্যা। তাঁর কথায়, দই ত্বকের ভেতর থেকে তাকে পুষ্টি যোগায়। আর টম্যাটো বাইরে থেকে পোড়াভাব তাড়ায়। ফলে দুটো যখন মিশে যায় তখন সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাত্র দু’দিনেই সেক্ষেত্রে স্কিন ট্যান তাড়ানো সম্ভব হয়।
তার জন্য একটা গোটা টম্যাটোর খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর তা বেটে নিন। ইতিমধ্যে ২-৩ চা চামচ দইয়ের জল ঝরিয়ে নিন। তারপর তা টম্যাটোর সঙ্গে মিশিয়ে একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে মিনিট কুড়ি রেখে দিন।
তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এছাড়া হলুদ বাটা, বেসন গোলা ও মসুর ডাল বাটা মুখে লাগালেও ট্যান চলে যায়, জানালেন দিব্যা। বেসন যদি সাবানের বদলে সারা বছরই স্নানের সময় ব্যবহার করা যায় তাহলে ত্বক নরমও থাকবে।
কফি দই হলুদের যত্ন
ট্যান তাড়াতে কফিও খুবই উপকারী। তবে ঠিক পরিমাণে কফি ব্যবহার করতে হয়। দই আর হলুদ বাটার সঙ্গে কফি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে এক বড় চামচ কফি, এক বড় চামচ কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে মোটামুটি দেড় থেকে দুই বড় চামচ দই মেশাতে হবে। দই মেশানোর সময় খেয়াল রাখবেন যেন তার পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি না হয়ে যায়। মোটা মিশ্রণ তৈরি করতে যতটা দই লাগে ততটাই মেশান। এবার এই মিশ্রণ মুখে, ঘাড়ে ও হাতে মেখে কুড়ি মিনিট রেখে দিন। প্যাক শুকিয়ে গেলে তা শুকনো হাতে তুলুন। তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এই প্যাকটা সপ্তাহে প্রতিদিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন। তবে এই প্যাকটি রোজ ব্যবহার করলে ত্বকে একটু শুষ্কভাব আসতে পারে। ফলে এই প্যাক তোলার পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
তবে শুধুই ট্যান নয়, বেড়িয়ে ফেরার পর অনেকেরই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রেও কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন।
সারা বছর নারকেল তেল
দিব্যা বললেন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময়ই ত্বকে তেল মালিশ করা ভালো। সব মরশুমের জন্য উপযুক্ত নারকেল তেল। এই তেল হাতের তালুতে নিয়ে মালিশ করলে শুষ্ক
ত্বক নরম হবে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে নারকেল তেলে এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। ফলে এই তেল সারা বছরই ত্বকের পক্ষে ভালো।
স্নানের সময় ওটমিল
ওটমিল বা ওটস ত্বকের পক্ষেও খুবই ভালো। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে সতেজ রাখে, রুক্ষ হতে দেয় না। এটি গুঁড়ো করে অল্প দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন।
তারপর সেই প্যাক মুখে, হাতে ও পায়ে লাগিয়ে অল্পক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলবেন। বেশি না ঘষাই ভালো। ওটমিলের গুঁড়ো স্নানের জলে ফেলে সেই জল দিয়ে স্নান করুন, ত্বক ভালো থাকবে।
অ্যাভোকাডো মাস্ক
অ্যাভোকাডো মাস্ক রুক্ষ ত্বক সতেজ করে তুলতে সাহায্য করে। তবে তার সঙ্গে একটু মধু বা অলিভ অয়েল মেশানো দরকার। দিব্যা বললেন, অলিভ অয়েলের দু’টি ধরন হয়। একটা গায়ে মাখার, অন্যটা রান্না করার। বলাই বাহুল্য এক্ষেত্রে গায়ে মাখার তেলটাই ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক তৈরি করার জন্য একটা অ্যাভোকাডো কুরিয়ে নিতে হবে। তার সঙ্গে ২ চা চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ চা চামচ মধু মেশাতে হবে। তারপর তা মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে মিনিট কুড়ি। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মাস্ক সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
ট্যান হলেই ত্বকের যত্ন নেবেন তা নয়, নিয়ম করে যত্ন নিন। বছরভর সতেজ রাখুন ত্বক।