কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শোনা যায় বলিউড তারকা ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন তাঁর ত্বকের যত্নে নিয়মিত ব্যবহার করেন চাল ভেজানো জল। ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে এই জল একেবারে ওষধির কাজ করে।
কীভাবে পাবেন চাল ধোয়া জল?
এটা তৈরি করার মতো সহজ উপায় আর হয় না। একটা বড় পাত্রে দু’কাপ জল নিন। তাতে এক মুঠো চাল ভিজিয়ে রাখুন। অন্তত আধ ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময়। এরপর চাল ঝরানো জলটা একটা বোতলে ভরে রাখুন। তৈরি চাল ধোয়া জল। এই জলটা দিন পাঁচেক রাখা যায় ফ্রিজে। রাখতে রাখতে একটু জমে যায় যদি, ওতে আবার জল মিশিয়ে একটু পাতলা করে নিতে পারেন। তবে বাজারের খোলা চাল ফিল্টার করা জলে একবার ভালো করে ধুয়ে তারপর ভেজানো বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে চালে থাকা ধুলোবালি আর কীটনাশক জাতীয় জিনিস ধুয়ে যাবে।
কবে থেকে ব্যবহার?
এক হাজার বছরেরও আগে থেকে। অবাক হচ্ছেন? গোড়ার দিকে সুন্দর ঘন লম্বা চুলের জন্য জাপানে নাকি ব্যবহার করা হতো চাল ধোয়া জল। কালে কালে তা ত্বকের যত্নেও দারুণ উপযোগী বলে প্রমাণ মিলেছে। ভেবে দেখুন একবার, জাপানি কন্যেদের মসৃণ ত্বকের কথা। তবেই বুঝবেন চাল ধোয়া জলের গুণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা একপ্রকার বোকামি। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ত্বককে রক্ষা করে এবং কোনওরকম ক্ষতি হয়ে থাকলে সেটাও কমানোর চেষ্টা করে। অন্তত ১২০০ বছর আগে জাপানের রাজপরিবারে চালভেজা জলে চুল ধোয়ার কথা শোনা যায়। শুধু চুল নয়, রাজকন্যেরা মুখ ধুতেও ব্যবহার করতেন এই তরল। বলা হয়, সেযুগে এ জলের জাদুতে নাকি আশি ছুঁয়েও পাকত না চুল! প্রাকৃতিক শ্যাম্পু হিসেবেই এ জলের কদর ছিল। আবার গিনেস বুক অব রেকর্ডস-এ আছে চীনের এক গ্রামের কথা। নাম, হুয়ানগ্লুও। সেখানে সবচেয়ে দীর্ঘকেশ রেড ইয়াও মেয়েদের বাস। রাপুঞ্জেলের গল্পও যেন হার মানবে তাদের লম্বা চুলের কাছে। রেড ইয়াও মেয়েদের লম্বা চুল নাকি গ্রামের সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক— প্রচলিত বিশ্বাস এমনই। সেই মেয়েরাও চুল ধুতে ব্যবহার করেন এই চালভেজা জল। চালভেজা জল দিয়ে ত্বকের যত্নে এখন নাম লিখিয়েছে কোরিয়াও। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া আর ইন্দোনেশিয়াও।
কী কী উপকার?
ত্বকে থাকা ডার্ক প্যাচ বা কালো ছোপ দূর করতে এর জুড়ি নেই। অনেকে আবার বলেন, সামগ্রিকভাবে ট্যান পড়া থেকেও বাঁচায় চাল ধোয়া জল। ফলে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করা যায় এই জল। যদিও তত্ত্বগত প্রমাণ নেই তবু বলা হয়, চাল ধোয়া জলে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। শুষ্ক ত্বকে এই জল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই। বাজারচলতি যেসব কসমেটিক্স আমরা ব্যবহার করি, তা থেকে হঠাৎ যদি কোনও ইরিটেশন হয়, তা দূর করতেও দারুণ কাজ দেয় চালভেজা জল। এই জলের পুষ্টিগুণ অনেক। এতে রয়েছে ট্রাইগ্লিসারাইড, লিপিড এবং স্টার্চ। এই সব মিলেই ত্বকের স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করে। দিনে দু’বার টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন চালভেজা জল। অ্যাকনে বা ব্রণ-র সমস্যা আছে যাদের, তাদের জন্য বেশ উপকারী এই জল। একটা তুলোর বল এই জলে ভিজিয়ে সারা মুখে আলগা মাসাজ করে নিন। সার্বিকভাবে মুখে ঔজ্জ্বল্য আসবে। পছন্দমতো ফেস প্যাক বানানোর সময় তাতেও সাধারণ জলের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন চালভেজানো জল। সারা দেহের পরিচর্যায় কাজে লাগান চালভেজা জল। বাথটাবের জলে দু’কাপ চাল ভেজানো জল মেশান, তার মধ্যে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা ফেলে দিন। এতেও কাজ হবে দুর্দান্ত।
এছাড়া চুলের যত্নেও অব্যর্থ চাল ভেজানো জল। শ্যাম্পু করার পর শেষবার চুল ধোয়ার সময় এই জল ব্যবহার করতে পারেন। এই জল ব্যবহার করলে ফ্রিজি হেয়ার অনেকটা স্মুদ হবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বিউটিশিয়ান সঞ্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তিনটি পদ্ধতিতে রাইস ওয়াটার ব্যবহার করা যায়। সেদ্ধ চাল বা কালো চাল সবেতেই কাজ হয়। তবে সেদ্ধ চালটাই হাতের কাছে থাকে বলে ওটা বেশি ব্যবহার হয়। ব্র্যান্ডেড চাল নিলে আলাদা করে ধোয়ার দরকার নেই, তবে খোলা চাল হলে ধুয়ে নেওয়া উচিত। প্রথম পদ্ধতিতে এক মুঠো চাল নিয়ে তাতে ১৫০ মিলি জল যোগ করুন। কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেটা ছেঁকে ব্যবহার করুন। দ্বিতীয় উপায়, চালটা ভিজিয়ে রাখার পর জলটা ছেঁকে ফেলে সেই চালটাকেই শুকনো করে নিন। তারপর সেটাকে মিহি করে গুঁড়ো করুন। সেই গুঁড়ো আবার জলে ভেজান। যতটা চাল নেবেন, তার দ্বিগুণ পরিমাণ জলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ওই জলটা ছেঁকে রাইস ওয়াটার হিসেবে ব্যবহার করুন। তৃতীয় পথ অনুযায়ী, বাসমতী বা গোবিন্দভোগ চাল নিয়ে একটা পাত্রে গরম করতে বসালে অল্প বুদবুদ উঠবে যখন বা ফুটে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হলেই নিভিয়ে দিন। ওখান থেকে যে জলটা পাওয়া গেল, সেটা ব্যবহার করা যায়। ওতে চালে থাকা মিনারেলস-এর গুণ ভালোভাবে জলে মেশে। জলটা মাড় যেন না হয়, তাহলে আর ব্যবহার করা যাবে না।
রাইস ওয়াটারে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস আর প্রোবায়োটিক থাকে। যে ত্বক খুব খসখসে বা যাদের ত্বকে ভাঁজ পড়ে গিয়েছে, তাদের জন্য খুব উপযোগী চাল ভেজানো জল। কিন্তু উপকার পেতে গেলে এটা নিয়মিত এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে হবে। যদি শুধু চালভেজা জলটাই ব্যবহার করেন তাহলে একদিন অন্তর মুখে লাগানো দরকার। চাল ভেজানো জল ফার্মেন্টেড হয়ে যায়, সেটা কখনও ব্যবহার না করাই ভালো।
চুলের যত্নে ৫-৬ ঘণ্টা চালে ভেজানো জল, কন্ডিশনারের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগালে উপকার পাবেন, বললেন সঞ্চিতা। সপ্তাহে এক বা দু’বার করতে পারলেই যথেষ্ট। আর মুখের ত্বকের জন্য নানারকম প্যাক বা ক্রিম বানিয়ে তাতেও রাইস ওয়াটার যোগ করলে ফল পাবেন।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে একটা ক্রিম তৈরির পদ্ধতি জানালেন সঞ্চিতা। উপকরণ হিসেবে লাগবে এক চামচ শিয়া বাটার, হাফ চামচ গ্লিসারিন,এক চামচ নারকেল তেল, দুটো ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং দু’চামচ রাইস ওয়াটার। চালভেজানো জলটা আলাদা রেখে বাকি সব উপকরণ একটা পাত্রে বিটার দিয়ে ভালো করে ফেটাতে হবে। ক্রিমের মতো হয়ে উঠলে তাতে রাইস ওয়াটার যোগ করে আবার ফেটাতে হবে। সবটা মিশে গেলে একটা কৌটোয় তা ভরে রাখুন। ফ্রিজে রেখে এই ক্রিম দু’সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
অতএব এই শীত থেকেই রূপরুটিনে আপন করে নিন অন্ন জল। ভরসা থাকুক চালে ডালে...!