কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
সেই কোন ছোটবেলায় ‘ঠাকুরমার ঝুলি’-তে রূপকথার রাজকন্যার মখমলের মতো কোমল হাতের পরশের কথা পড়েছিলাম। তারপর থেকেই কুঁচবরণ সেই রাজকন্যেদের ফর্সা পায়ের গোলাপি পাতায় লাল টুকটুকে আলতা বা সোনার হাতে সোনার কাঁকনের কথা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে গিয়েছে। কিন্তু এমন হাত পায়ের জন্য সঠিক যত্নেরও তো প্রয়োজন। কেমন সেই যত্ন? হাত ও পায়ের যত্নের নানা দিক তুলে ধরলেন বিশেষজ্ঞ বিউটি থেরাপিস্ট শেহনাজ হুসেন।
কেন যত্ন প্রয়োজন
হাত এবং পা সাধারণত বেশিরভাগ সময় খোলা থাকে। এই দু’টি অঙ্গের কাজেরও শেষ নেই। ফলে বয়সের ভার এর উপর যতটা তাড়াতাড়ি পড়ে, অন্যত্র তা পড়ে না। তাই হাত ও পায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। শেহনাজ বললেন, ‘হাতের পাতার চামড়া খুবই পাতলা হয় এবং সেখানে অয়েল গ্ল্যান্ড খুবই কম থাকে। তাছাড়া হাতের পাতা সবসময় সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে। ফলে এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণেই তার যত্নেরও প্রয়োজন বেশি। নিয়মমাফিক যত্নে রাখলে হাত ও পায়ের চামড়া নিটোল থাকে। পেডিকিওর ও ম্যানিকিওরের মাধ্যমে সেটা সম্ভব। সঠিক উপায়ে পেডিকিওর ও ম্যানিকিওর করালে হাত ও পায়ের চামড়া তো বটেই, নখও ভালো থাকে। আর এই যত্ন কিন্তু ঘরোয়া উপায়েই করা যায়। পেডিকিওর বা ম্যানিকিওর মানেই যে বিউটি পার্লারে অনেকটা সময় কাটানো তা নয়, জানালেন শেহনাজ। তার জন্য দরকার সঠিক নিয়মে হাত ও পায়ের মাসাজ। একটু তেল বা ক্রিম দিয়ে নিয়মমাফিক মাসাজ করতে পারলে হাত ও পায়ের ত্বক কোমল থাকে বহুদিন। আর চাই সঠিক পরিমাণে স্ক্রাবিং, ক্লিনিং। এসবই বাড়িতে করা যায়, কিন্তু কোনটা কতটা এবং কতক্ষণ করবেন তা জানতে বিউটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে, বললেন শেহনাজ হুসেন।
তিনি আরও বলেন, আজকাল প্যারাফিন ওয়াক্স মাসাজ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গরম প্যারাফিন বা গলানো মোমের সঙ্গে নারকেল তেল দিয়ে মাসাজ করলে হাত ও পায়ের ত্বক মসৃণ থাকে। ত্বকে পুষ্টিও জোগায় এই প্যারাফিন। শুধু তাই নয়, যাদের নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থাকে, তাদের পক্ষেও প্যারাফিন মাসাজ উপকারী। এতে নখ শক্ত হয়। আর পেডিকিওর তো শীতকালে খুবই উপযোগী। এই সময় অনেকেরই গোড়ালি ফেটে যায়। সঠিক নিয়মে পেডিকিওর করালে তা আটকানো সম্ভব হয়।
ঘরোয়া পেডিকিওর
শেহনাজ জানালেন সঠিক কিছু নিয়ম জানা থাকলে বাড়িতেও পেডিকিওর করা সম্ভব। কেমন সেই ঘরোয়া পদ্ধতি? শেহনাজের কথায়, ‘কয়েকটি ধাপ মেনে পেডিকিওর করতে হয়ে। প্রথমত নেলপলিশ তুলে ফেলতে হবে। তারপর উষ্ণ গরম জলে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ জলে পা ডুবিয়ে রাখার পর তাতে হার্বাল শ্যাম্পু, নুন ও অল্প তেল (নারকেল বা সূর্যমুখী) মিশিয়ে নিন। একটু গুলে নিলে জলে ফেনা হয়ে যাবে। এই জলে পা অন্তত ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। তারপর তা জল থেকে তুলে নরম ফুট ব্রাশ দিয়ে গোটা পায়ের পাতা জুড়ে মাসাজ করুন। পায়ের পাতার উপরের অংশ ব্রাশ দিয়ে ঘষুন আর গোড়ালির জন্য পিউমিস স্টোন (ঝামাপাথর) ব্যবহার করুন। পা ঘষার পর তা অল্প জল দিয়ে ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। এবার পছন্দমতো শেপে নখ কেটে তাতে অল্প তেল মাখিয়ে রেখে দিন। ইতিমধ্যে পায়ের জন্য একটা ঘরোয়া স্ক্রাব বানিয়ে নিন। তার জন্য টক দই, আমন্ড গুঁড়ো ও চিনি সম পরিমাণে মিশিয়ে নিন। এবার এই স্ক্রাব দিয়ে গোটা পা মাসাজ করুন। এই মাসাজ করার সময় চক্রাকারে হাতটা ঘোরাবেন। আর অন্তত কুড়ি মিনিট এই স্ক্রাব মাসাজটা করবেন। আর গোড়ালির প্রতি বিশেষ নজর দেবেন। স্ক্রাব ত্বকে মিশলে পা ধুয়ে নিন। পায়ের পাতার জন্য একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। ১ টেবিল চামচ করে লেবুর রস, মধু, তার সঙ্গে ৫০ মিলি গোলাপ জল মেশান। এই মিশ্রণ পায়ের পাতায় মাখিয়ে পনেরো মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে পায়ের পাতা নরম থাকবে। তখন নেলপলিশ লাগাতেও পারেন অথবা পরের দিনও লাগাতে পারেন।
ম্যানিকিওর পেডিকিওর
পেডিকিওরের মতোই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ম্যানিকিওরও করা সম্ভব। হাতে নেলপলিশ থাকলে তা তুলে নিন। এবার নখ পছন্দমতো শেপে কেটে ফাইল করুন। এবার মাঝারি বাটিতে গরম জলে শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত ডুবিয়ে রেখে দিন অন্তত পাঁচ মিনিট। এরপর তা জল থেকে তুলে নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষে নিন। তারপর হাতে নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল দিয়ে মাসাজ করুন। মিনিট দশেক মাসাজ করলে দেখবেন তেল হাতের ত্বকে মিশে যাবে। এবার ঘরোয়া স্ক্রাব হাতে লাগান। ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ৩ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে হাতের পাতা থেকে কনুই পর্যন্ত মাসাজ করুন। পনেরো মিনিট পর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। তখনই নেলপলিশ লাগাতে পারেন অথবা একদিন পরেও নেলপলিশ লাগাতে পারেন। তবে পেডিকিওর বা ম্যানিকিওর করার পর হাতে বা পায়ে সাবান দেবেন না অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা।
বাড়তি যত্ন
পেডিকিওর এবং ম্যানিকিওর দশ দিনে একবার করতে পারেন। শীতে পা ফাটার সমস্যা গুরুতর হলে ফুট মাসাজ প্রতি সপ্তাহে করুন, ক্ষতি নেই। পায়ে এবং হাতে রোজ ক্রিম মাসাজ করুন। শীতে ক্রিম মাসাজ দিনে দু’বারও করতে পারেন। আর গরমে ক্রিম লাগালে যাদের হাত ও পা ঘেমে যায় তাঁরা নারকেল তেল বা যে কোনও তেল দিয়ে মাসাজ করাতে পারেন। মাসাজের সময় আঙুলের গাঁট, কবজি, গোড়ালির দিকে বেশি নজর দিন। এরপরও যদি হাতের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, পা ফাটার সমস্যা দেখা দেয় বা নখ অতিরিক্ত ভঙ্গুর হয়ে ওঠে তাহলে বিউটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত, জানালেন শেহনাজ। তিনি বলেন, সাধারণত হাতের ত্বক আগে বুড়িয়ে যায়। কিন্তু নিয়মমতো ক্রিম ও স্ক্রাবার দিয়ে মাসাজ করলে তা অনেকটাই আটকানো সম্ভব। তাহলে দেরি না করে ঘরোয়া যত্নে হাত ও পা সতেজ রাখুন।