বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বাস্তব এবং ফ্যান্টাসি
ফ্যান্টাসিকে পর্দায় তুলে ধরা কতটা কঠিন ছিল? এই চরিত্রের লুক ডিজাইনের প্রাথমিক ভাবনা কেমন ছিল?
তথাগতর কথায়, ‘যে ভাবনা থেকে এই বিষয়টা করতে চেয়েছি, তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গোটাটা যেন খুব বাস্তবোচিত হয়। তার সঙ্গে আবার ফ্যান্টাসির দিকটাও রাখা। আমরা যদি মৎস্যকন্যা হিসেবে দেখি, তার তো কানকো, ফুলকা এগুলো থাকার কথা মাছের মতো। কল্পনায় এগুলো হয়তো থাকে না, সেটা ফ্যান্টাসি নির্ভর। আর বাস্তবে ওগুলো রাখলে আবার দেখতে একেবারেই ভালো লাগবে না। আমাদের জলপরি বা মারমেডও কল্পনাপ্রসূতই। তার সঙ্গে আবার কান, ফিশ টেল ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। এগুলো সব আলাদা করে বানানো হয়েছে। কার্টুনে আমরা ফ্যান্টাসি নির্ভর মারমেডকেই দেখি। কিন্তু ‘দ্য শেপ অব ওয়াটার’ জাতীয় ছবির কথা যদি ভাবা হয়, সেখানে কিন্তু রিয়্যালিস্টিক লুকটাই প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা সেটায় যাইনি। ফ্যান্টাসি চেয়েছি। যেহেতু আমাদের মূল চরিত্র ভটভটির স্বপ্ন লিটল মারমেড-এর মতো জলপরিকে দেখা, তাই তার চোখ দিয়ে দেখছি বলে মৎস্যকন্যা হয়েছে লিটল মারমেড-এর মতোই।’
চামড়ার উপর স্প্রে পেন্টিং
মৎস্যকন্যার উপযুক্ত পোশাক বাস্তবে খুঁজে পাওয়া নেহাত সহজ ছিল না। সেই কঠিন কাজটাই করেছেন দেবলীনা এবং পৌলমী। স্মৃতি ভাগ করে নিতে গিয়ে পোশাক তৈরির নেপথ্যের পরিশ্রমের কথা মনে পড়ল দেবলীনার। ‘গল্পে, রূপকথায় মারমেড দেখেছি। কোমর পর্যন্ত মানুষ। তারপর থেকে মাছ। সেটাই রিক্রিয়েট করেছি। যতটা সম্ভব রিয়্যালিস্টিক করার চেষ্টা করেছি। বড়বাজারের কাপড়ের পট্টি থেকে মাছের লেজ কিনেছিলাম। বহু দোকান ঘুরে লেদার ফিনিশের উপর আঁশের মতো ডিজাইন করা একটা মেটিরিয়াল পেয়েছিলাম। কালো রং দরকার ছিল, পেয়েছিলাম নীল। সেটা দিয়ে শুরু। সেটা এঁকে, কাটিং করে দর্জিকে দিয়ে মাছের লেজ বানিয়ে তারপর চামড়ার উপর স্প্রে পেন্টিং করেছিলাম। লেদারের উপর স্প্রে পেন্টিং করতে গেলে খুব চোখ জ্বালা করে। এত কেমিক্যালস থাকে। সানগ্লাস পরে নাক, মুখ ঢাকা দিতে হয়েছিল। কারণ একটা সময়ের পর নিঃশ্বাসের সমস্যা হয়ে যাচ্ছিল। দুটো রেখেছিলাম ব্যাক আপ হিসেবে। স্প্রে পেন্ট করে ব্ল্যাক করেছিলাম। তারপর সিলভার ফ্লুরোসেন্ট পেন দিয়ে আঁশ এঁকেছিলাম পুরোটাতে। লেজের নীচের অংশে কাঁটা থাকে, সেটাও এঁকেছিলাম’, বললেন তিনি।
ঝিনুকের পোশাক
অর্থাৎ মারমেডের পোশাক অনেকটাই হাতে তৈরি। পরিচালক চেয়েছিলেন অলিভ পাতার মতো মুকুট। কেমন সেই সাজ? লুক সেটের সূত্র ধরিয়ে দিয়ে তথাগত বললেন, ‘গ্রিসে যেমন হতো। তেমনটা। অন্য পাতা দিয়ে সেটা করা হয়েছিল। মারমেডের যে মুকুট করা হয়েছে, সেটা হাতে বানানো।’ মুকুটে ছিল ঝিনুকও। বিবৃতির চরিত্রের মুকুট ও পোশাক তৈরি করেছিলেন দেবলীনা। তাতে যেমন শৈল্পিক ভাবনা রয়েছে, তেমনই রয়েছে কল্পনার প্রশ্রয়। তিনি বললেন, ‘শুধু ঝিনুক দিয়ে অফ শোল্ডার বুস্টিয়ার তৈরি করেছিলাম। বিশাল বড় ঝিনুক পাওয়া যায়। তেমন দুটো ঝিনুক দিয়ে সামনেটা তৈরি করেছিলাম। আর যেখানটা বাঁধা হয়েছিল সেখানে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন আকারের ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয়েছিল। জলের তলায় যে ধরনের গাছ, ফুল, পাতা জন্মায় সেটা দিয়ে মাথার গয়নাটা তৈরি করা হয়েছিল। শরীরের যেটুকু অংশ খালি ছিল সেখানে খোপ খোপ জালের ব্যাগ কেটে ওর সারা শরীরে বসিয়ে তিন, চারজন মিলে ধূসর, নীল, কালো রং দিয়ে বডি পেন্ট করে মাছের আঁশ তৈরি করা হতো। মারমেড লুকটা কমপ্লিট করতে প্রায় ছ’ঘণ্টা লাগত।’
কতটা প্রস্থেটিক?
এখানেই ধৈর্যের পরীক্ষা দিতেন অভিনেত্রী স্বয়ং। অর্থাৎ বিবৃতি। হেসে বললেন, ‘জলপরি হয়ে উঠতে আমার প্রচুর সময় লাগত। পোশাকটা ভারী ছিল না, কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম ধরনের। তার মধ্যেই চলাফেরা। তাই আমাকে লোকেশনে কোলে করে নিয়ে যেতে হতো। বেশি নড়াচড়া করতে দেওয়া হতো না। কারণ ওগুলো এতটাই সূক্ষ্ম। শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকাটা আমার কাছে ধৈর্যের বড়সড় পরীক্ষার মতো ছিল। আমাদের মেকআপ আর্টিস্ট সুভাষদা, হেয়ারে মুন্নিদি এবং দেবলীনাদি স্বয়ং, ওঁরা সবাই মিলে কাজটা করতেন। দেবলীনাদি গায়ে প্রতিটা আঁশ এঁকে দেওয়া থেকে শুরু করে আমার মেকআপ, হেয়ার সব নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করাত। নিজেকে এতটা আলাদা লুকে দেখতে আমার দারুণ লাগত। জলপরির পাখনা আর কানের জন্য প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করা হয়েছে। সেটাও একটা অভিজ্ঞতা।’
শুধু পোশাক নয়। মৎস্যকন্যার মেকআপ কেমন হবে, তা নিয়েও ইনপুট দিতেন দেবলীনা। ‘মারমেড প্রিন্সেসের লুকে রয়েছে। তাই প্রিন্সেসের মতো মেকআপ করা হতো। প্রিন্সেস কিন্তু খুব ন্যাচারাল লুকে। সবই করা হতো, অথচ কোনওটাই উচ্চকিত নয়। বিবৃতির চোখ এতটাই সুন্দর, বিশেষ কিছু করতে হতো না। আলাদা করে হাইলাইট করার দিকে নজর দিতাম’, বললেন ‘ভটভটি’-র অন্যতম সৈনিক।
দৈনন্দিন থেকে ডিজাইন
মৎস্যকন্যা ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন জাহাজবস্তির বাসিন্দারা। তাঁরাও বাস্তবের বিভিন্ন চরিত্রের থেকে অনুপ্রাণিত, তেমনটাই জানালেন দেবলীনা।
তাঁর কথায়, ‘ঝোড়ো বস্তির উপর আমার বাড়ি। আমি এবং তথাগত গত নভেম্বর পর্যন্ত ওখানেই কাটিয়েছি। ওদের খুব কাছ থেকে দেখেছি, ওরা আমাদের পরিবারের মতো।
ওদের আকারেই জাহাজ বস্তি ডিজাইন করা। আমার জামাকাপড়, হেয়ার কাট, হেয়ার কালার, অ্যাক্সেসরিজ— সবটাই ঝোড়ো বস্তিভিত্তিক।’
পরিচালকের ভাষায় ‘ভটভটি’ একটা স্বপ্নের নাম। সেই স্বপ্নের দরজা এবার খুলছে আমজনতার জন্য। না! জলপরির মতো পোশাক হয়তো বাস্তবে আপনি পরবেন না। কিন্তু জানতে তো ইচ্ছে হয় কেমন করে তৈরি হল স্বপ্নের সে জলপরি? মাথার অন্যরকম মুকুট স্বচ্ছন্দ হলে মানানসই পোশাকের সঙ্গে ক্যারি করতেই পারেন। আর মেকআপে ন্যাচারাল লুক তো এখন অধিকাংশের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। পর্দার জলপরির সঙ্গে এটুকু মিল থাকলে ক্ষতি কী?