পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
চোখের যত্ন নিন। এ আপ্তবাক্য জন্মের পর থেকেই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললে আপনার ভবিষ্যৎ সুন্দর। ঘরোয়া পদ্ধতিতেই চোখ ভালো রাখতে পারেন। চোখকে আমরা কীভাবে পরিষ্কার রাখছি, ঠান্ডা রাখছি সেটা চোখের যত্নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। দিনের মধ্যে কয়েকবার জলের ঝাপটা দিতে পারেন। খুব গরমে চোখ লাল হয়ে যায়, চুলকায়। অস্বস্তি হয়। সে সময় চোখের নানারকম ড্রপ পাওয়া যায়, সেগুলো দিতে পারেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার করে ব্যবহার করতে পারেন। আইস কুলিং ড্রপ না দিয়ে সাধারণ জলে চোখ ধুলে, সেটাও চোখের যত্নের জন্য ভালো।
ঘরোয়া টোটকা
কেয়া শেঠের কথায়, ‘আমরা জানি লেবু চোখে পড়লে জ্বালা করে। কিন্তু এক কাপ জলে ২-৩ ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেই জলটা চোখে দিলেও চোখ বেশ পরিষ্কার হয়। সকালে এবং রাতে মেকআপ তোলার পর দিতে পারেন। বিকেলেও একবার দিন। তবে অন্তত দু’বার এই জল ব্যবহার করা খুব ভালো।’
এর পরের টোটকা পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রস চোখের জন্য খুব ভালো। কিন্তু এটা সরাসরি চোখে দেওয়া যায় না। পেঁয়াজ কাটার সময় যে ঝাঁজ বেরোয় সেটা চোখের জন্য ভালো। পেঁয়াজ থেঁতো করতে গিয়ে যে ঝাঁজ উঠবে সেটা চোখে গেলে চোখের জ্যোতির জন্য ভালো বলে জানালেন রূপ বিশেষজ্ঞ।
কীভাবে তুলবেন মেকআপ?
ত্বক ভালো রাখার গোড়ার কথা হল, মেকআপ সম্পূর্ণ তুলে ফেলতে হবে। চোখের ক্ষেত্রেও নিয়ম একই। চোখ পরিষ্কার করা খুব জরুরি। ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করা যায় মেকআপ। একইরকম ভাবে আই মেকআপ রিমুভারও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। যারা আইলাইনার, মাস্কারা দেন চোখে, তাদের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় আইশ্যাডো বা অন্যান্য চোখের মেকআপ তোলা গেলেও মাস্কারা রয়ে গেল। সেটা তুলতেই হবে।
‘ঘরোয়া পদ্ধতিতে বলব, দুধের সর, অলিভ অয়েল মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে পরিষ্কার করুন। জোজোবা অয়েল একটু ভিজিয়ে রেখে মাস্কারা তুলুন। সর্ষের তেল একেবারে চলবে না। নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেল হালকা গরম রাখলে ভালো হয়। ওয়াটার প্রুফ মেকআপ ক্লিনজার পাওয়া যায়। সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। তুলো দিয়ে মাস্কারা তুলুন। তারপর আইশ্যাডো তুলবেন। সবশেষে আইব্রাও-র মেকআপ তুলুন। মেকআপের সময় যেমন স্টেপ ফলো করা হয়, তোলার সময়ও সেটা মেনে চলা উচিত। প্রতিবার তুলো বদলে নিন। সবার শেষে থাকে চোখের ভিতরের কাজল। তুলো ভিজিয়ে সেটাও তুলে ফেলা যায়। যদি সেটা না করি সেখান থেকে বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি, চোখের ইরিটেশন, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া হতে পারে’, বললেন কেয়া।
মাসাজ
চোখ ভালো রাখতে প্রত্যেক রাতে হালকা মাসাজ দরকার পড়ে। তার জন্য আই-ক্রিম পাওয়া যায়। তা দিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ড মাসাজ করলে চোখ আরাম পায়। কেয়া বললেন, ‘অনেক সময় চোখের তলায় কালি পড়ে। যারা চশমা পরে তাদের একটা দাগ পড়ে যায়। মাসাজের ফলে ওই জায়গার রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। দাগ পড়তে দেয় না।’ বর্তমানে বহু মানুষ দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করেন, মোবাইল ঘাঁটেন বা যারা অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা করেন, সেলাই করেন বা সারাক্ষণ টিভি দেখেন তাদের চোখের আরামের প্রয়োজন। কিছুক্ষণ পর পর চোখের মাসাজের প্রয়োজন। চারটে আঙুল জোড়া করে হালকা চাপ দিয়ে মাসাজ করার পরামর্শ দিলেন কেয়া। কাজের ফাঁকে এক দেড় ঘণ্টা পর পর এই মাসাজ করতে পারেন। এতে চোখ আরাম পাবে। ভালো থাকবে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে কেয়া জানালেন, কারও চোখ উজ্জ্বল, কারও বা নির্জীব। চোখের জৌলুস আনতে গোলাপ জল খুব ভালো। ভালো গোলাপ জল অর্ধেক নিয়ে তার সঙ্গে অর্ধেক সাধারণ জল মিশিয়ে চোখে ড্রপ দিলে সেটাও ভালো। চোখে দ্রুত জ্যোতি চলে আসে। ‘মেকআপ করার আগে এগুলো করে নিলে মেকআপ ভালো হয়। না হলে দেখা যায় মেকআপের পরও চোখ নির্জীব লাগছে,’ বললেন তিনি।
সাজগোজ
কেয়া মনে করেন, প্রতিদিনের সাজে বিশেষ কিছু মেকআপের প্রয়োজন হয় না। বেজ বা পিঙ্ক রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। যেটা ত্বকের সঙ্গে মিশে থাকে বা ত্বকের থেকে এক টোন বেশি পিঙ্ক ঘেঁষা কোনও আইশ্যাডো লাগান। পিঙ্ক থাকলে চোখের জ্যোতি বেশি মনে হয়। দেখতে ভালো লাগে। তার সঙ্গে কালো আইলাইনার, মাস্কারা, কাজল বা শুধুই কাজল ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ভুরুর ঘনত্ব কম বা ঠিক মতো শেপ নেই তারা ভুরুতে কালো, কম কালো, ব্রাউন আইব্রাও এঁকে নিন। এটাই যথেষ্ট।
পার্টি বা বিয়েবাড়ি মেকআপ করতে চাইলে প্রথমে আইবেস লাগাতে হবে। যেমন মেকআপ বেস লাগানো হয়, তেমন আইবেসও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এর উপর আইশ্যাডো লাগালে তা অনেকক্ষণ ধরে থাকবে। এতে শ্যাডোর সুন্দর রংও ফুটে উঠবে। পোশাক এবং যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন তা মাথায় রেখে স্মোকি আইজ করতে পারেন। কেয়া বললেন, ‘হলুদ, কমলা, নীল আইশ্যাডো এখন চলে এসেছে। যেগুলো আগে ব্যবহার হতো না। তবে আমার মনে হয় একটা বয়স পর্যন্ত এসব রং ভালো লাগে। এতগুলো রং সুন্দর করে চোখের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া একটা শিল্প। কিন্তু চোখের সঙ্গে পিঙ্ক, বেজ, ব্রাউন, ব্ল্যাক এই রংগুলো বেশি সুন্দর ভাবে মেশে। চোখের নমনীয় রূপও এতে ধরা পড়ে। অন্য রঙে তা হয় না। তবে আজকাল সবই চলছে।’
গরমাগরম
কেয়া জানালেন, চোখ একটু গরম জিনিস পছন্দ করে। চোখে কিছু পরলে আগে আমরা ফুঁ দিতাম বা মায়েরা আঁচল গুটিয়ে মুখের ভাপ নিয়ে চোখে দিতেন। চোখ সহ্য করার মতো হালকা কাপড় গরম করে প্রতিদিন চোখে দিলে চোখ ভালো থাকবে। তাঁর পরামর্শ, চায়ের লিকার ফুটিয়ে কাপড়ের পুঁটলি করে ফ্রিজে রাখুন। সেটা চোখ পছন্দ করে। রোদ থেকে এসে বিশ্রাম নিয়ে ওই পুঁটলি চোখে দিন। শসা গ্রেট করে নিয়ে রস দিতে পারেন। আলু গ্রেট করেও চোখের উপর রাখতে পারেন। চোখের তলায় কালি পরলে মধু লাগিয়ে প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা বিশ্রাম নিন। তাতেই বছরভর ভালো থাকবে চোখ।