সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
বাইরের আবহাওয়া যেমনই হোক, রোদ বা বৃষ্টি যা-ই থাকুক, শরৎ আসছে। আর প্রতি বছরই এই সময়টা বাঙালির মনে এক অসম্ভব উদ্দীপনা জেগে ওঠে। মেঘলা দিনের শেষে বৃষ্টিস্নাত নীল আকাশ এখন একটাই বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে— বঙ্গজীবনের সেরা উৎসব দুর্গা পুজো প্রায় আগত। করোনার চোখরাঙানি সত্ত্বেও এখন সাজগোজের পালা। কিন্তু তার জন্য একটু প্রস্তুতি চাই। প্রাক পুজো বিউটি থেরাপির পরামর্শ দিলেন ল্যাকমে বিউটি ইনস্টিটিউটের পাঁচজন বিউটি এক্সপার্ট। তাঁদের মতে, করোনার কারণে আমরা সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে আমাদের ত্বকে নতুন ধরনের কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেমন নাক ও ঠোঁটের আশপাশের অংশে একটা ট্যান পড়ছে। কপাল ও গালের রঙের সঙ্গে মাস্ক ঢাকা অংশের রঙে একটা তারতম্য ঘটছে। অনেকের আবার অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে বলে ঠোঁট ও চিবুকে র্যাশ বেরচ্ছে। ফলে এবছর পুজোর স্কিন কেয়ারে এই ধরনের সমস্যার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।
ট্যান থেকে সাবধান
প্রথমেই ট্যান তাড়ানোর উপায়গুলো বলি। বিভিন্ন ঘরোয়া প্যাকের মাধ্যমে ট্যান থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণ ত্বকের ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো মধুর সঙ্গে ১টা গোটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে মুখের ট্যান পড়া অংশে লাগিয়ে নিন। আধ ঘণ্টা রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পাতিলেবুর রসের ব্লিচিং এফেক্টে ত্বক সহজেই ট্যান মুক্ত হবে। বেসনের ফেস প্যাকের উপকারিতা তো সকলেরই জানা। তার সঙ্গে যদি ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা! পরিমাণ মতো জলে বেসন ও হলুদের মিক্সচার গুলে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে তা মুখে মেখে রাখুন আধ ঘণ্টা তারপর ধুয়ে ফেলুন। ক্রমশ দেখবেন ট্যান চলে যাবে। এছাড়াও ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে পাতিলেবুর রসের সঙ্গে মধুর বদলে শসার রস মেশান। তাতে সামান্য গোলাপ জল মিশিয়ে একটা লিক্যুইড তৈরি করুন। তা দিয়ে মুখ ঘষে ঘষে ধুয়ে নিন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে অ্যালোভেরার জুস মিশিয়েও মুখে লাগাতে পারেন। এই প্যাক যে কোনও ত্বকের ক্ষেত্রেই উপযুক্ত। অ্যালোভেরার জুসের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়েও প্যাক তৈরি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অ্যালোভেরার রস ও মুলতানি মাটি ১:২ পরিমাণে নেবেন। খুব রোদে সারাদিন বেরতে হলে বাড়ি ফিরে এই প্যাক মেখে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। শুধু যে ট্যান উধাও হবে তা-ই নয়, ত্বকও তরতাজা হবে।
ভিটামিন সি প্যাক
আমাদের শরীরে এখন বাড়তি ভিটামিন সি প্রয়োজন। করোনার সঙ্গে লড়াই করতে নাকি এই ভিটামিনের জুড়ি মেলা ভার। যাই হোক, ওষুধ ও খাবারের মাধ্যমে তো সেই ভিটামিন আমরা প্রচুর পরিমাণেই খাচ্ছি। কিন্তু সেই সঙ্গে যদি ফেস প্যাকেও এই ভিটামিন যুক্ত করা যায় তাহলে আরও ভালো হয়, তাই না? ল্যাকমের বিউটি থেরাপিস্টদের মতে, ঘরে পাতা টক দই আর অরেঞ্জ জুস দিয়ে তৈরি প্যাক নাকি ত্বকের পক্ষে দারুণ উপকারী। এতে ত্বকে পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। ১ চামচ টকদই আর ১ চামচ কমলালেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে নিন। তা মুখে মেখে আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের জেল্লা বাড়বে। টক দই ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে আর অরেঞ্জ জুস তাতে পুষ্টি জোগায়। এছাড়াও অরেঞ্জ জুস বা লাইম জুসের সঙ্গে কর্ন স্টার্চ মিশিয়ে তা জলে গুলে নিন। এই পেস্ট মুখে মেখে আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
পুজোর আগে ফেস প্যাকে একটু স্ক্রাবার থাকলেও ভালো হয়। তার জন্য ভালো ফেস স্ক্রাব তো ব্যবহার করাই যায়, তাছাড়া বাড়িতেও ফেস স্ক্রাব বানানো যায়। সেই ফেস স্ক্রাবে আবার ভিটামিন সি-এর শক্তিও ভরে দিতে পারেন। তার জন্য একটা গোটা পাতিলেবুর রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। অল্প একটু বেসন দিয়ে স্ক্রাবটা সামান্য ঘন করে নিন। কিন্তু খুব একটা ঘন যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এবার এই দানাওয়ালা স্ক্রাব দিয়ে মুখ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। তারপর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।
চোখের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখুন
মুখের যত্ন নিতে গিয়ে চোখের কথা ভুলে যাবেন না কিন্তু। চোখ যদি উজ্জ্বল না হয় তাহলে পুজোর গোটা সাজই মাটি। তাই চোখের যত্নে আমন্ড অয়েল যুক্ত আই ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন ল্যাকমের বিউটি এক্সপার্টরা। তাঁদের কথায়, একটু ভালো কোম্পানির আমন্ড অয়েল যুক্ত আই ক্রিম ব্যবহার করতে হবে চোখের চারপাশে। বিশেষত চোখের নীচের অংশে যে ব্যাগ বা ফোলাভাব থাকে তাতে এই ধরনের ক্রিম বেশি পরিমাণে লাগালে ভালো হয়। তবে ক্রিম লাগানোর পর খুব একটা মাসাজ করা উচিত নয়। চোখের চারপাশের চামড়া খুবই সেনসিটিভ। ফলে বেশি মাসাজ করলে তা ঝুলে যেতে পারে। অতএব খুব সাবধানে চোখের চারপাশে ক্রিম লাগাতে হবে। চামড়ায় ক্রিম এমনিতেই টেনে যাবে, তা আলাদা করে ঘষার তাই বিশেষ প্রয়োজন নেই। শুধু এই ক্রিম লাগিয়ে অন্তত পনেরো মিনিট চোখ বুজে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি শোওয়ার আগে চোখের চারপাশে ক্রিম লাগানো যায়। সেক্ষেত্রে ঘুমও ভালো হয় বলে দাবি করলেন বিউটি থেরাপিস্টদের এই টিম। বাড়িতেও আই ক্রিম বানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমন্ড অয়েল ১ চামচ নিন। তার সঙ্গে অ্যালোভেরা এক্সট্র্যাক্ট ১ চামচ মেশান। সবটা একসঙ্গে ফেটিয়ে নিলে একটা ক্রিমি লিক্যুইড তৈরি হবে। তা হাল্কা হাতে চোখের চারপাশে লাগিয়ে নিন। দিনে একবার তো বটেই যদি দু’বারও তা লাগাতে পারেন তাহলেও খুব উপকার পাবেন। এতে চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এই রুটিন পুজোর পনেরো বা কুড়ি দিন আগে থেকেই শুরু করে দিন। এতে চোখের চারপাশে যদি ডার্ক সার্কল থাকে তাহলে তাও চলে যাবে।
গুণে ভরা অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার অনেক গুণ। ত্বকের পক্ষে তা বিশেষ উপকারী। বিভিন্ন প্যাকে তো বটেই, এমনকী, আলাদাভাবেও এই জেল বা এক্সট্র্যাক্ট মুখে, চোখের চারপাশে এবং ভ্রূ-তে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। শুধু ত্বকই বা বলি কেন? চুলের পক্ষেও এই জেল বা এক্সট্র্যাক্ট ভালো। নারকেল তেলের সঙ্গে বা অন্য কোনও ভালো হেয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন ১ চামচ অ্যালোভেরা এক্সট্র্যাক্ট। তারপর তা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। তেল লাগানো হয়ে গেলে চুলের গোড়ায় অল্প মাসাজ করুন। তাতে তেল মাথায় বসে যাবে। এবার হট টাওয়েলে মাথা আধঘণ্টা ঢেকে রাখুন। দশ মিনিট অন্তর হট টাওয়েল বদলাবেন। এরপর ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি থাকবে না, গোড়া থেকে চুল মজবুত হবে এবং জেল্লাও বাড়বে।
অনেকের স্ক্যাল্প ঘেমে র্যাশ বেরয়। সেক্ষেত্রে শুধু অ্যালোভেরার জুস বা এক্সট্র্যাক্ট আঙুলের ডগায় করে নিয়ে র্যাশের ওপর লাগালে তা কমে যাবে। অ্যালোভেরায় একটা কুলিং এফেক্ট রয়েছে। যার ফলে তা নিয়ম করে স্ক্যাল্পে লাগালে স্ক্যাল্প ঠান্ডা থাকে। তবে র্যাশের ওপর অ্যালোভেরা জেল বা এক্সট্র্যাক্ট যা-ই লাগান না কেন, একেবারেই ঘষবেন না। হাল্কা মাসাজও নয়। শুধু লাগিয়ে রেখে দেবেন। জেল স্ক্যাল্প টেনে নেবে, ফলে তা ধুয়ে ফেলারও ব্যাপার নেই। তবে অতিরিক্ত সর্দির ধাত যাঁদের, তাঁরা এই রস বুঝেশুনে লাগাবেন।
নখের যত্নে নারকেল তেল
পুজোর আগে নখে রং তো লাগাতেই হবে। চাইলে পুজোর চারদিন দু’বেলা আটরকম রঙে রাঙাতে পারেন হাত ও পায়ের নখ। কিন্তু প্রতিবার রিমুভার দিয়ে নেলপলিশ তুলতে গিয়ে যদি হাত ও পায়ের আঙুলের চামড়া কুঁচকে যায়? ভয় নেই, সহজ উপায় এখন হাতের মুঠোয়। বিউটি থেরাপিস্টদের টিম জানালেন, মাত্র আধ বাটি নারকেল তেলেই রয়েছে হাত ও পায়ের সৌন্দর্যের রহস্য। নারকেল তেল অল্প গরম করে নিন। তারপর তা হাত ও পায়ের আঙুলে লাগিয়ে রেখে দিন। আঙুলের ত্বক তেল টেনে নেবে। আলাদা করে ধোয়ার দরকার নেই। তবে বাড়তি তেল আধঘণ্টা পরে নরম সুতির কাপড়ে মুছে ফেলতে পারেন। তাতেই কেল্লা ফতে। হাত ও পায়ের আঙুল থাকবে তুলতুলে নরম। নারকেল তেল গোটা হাত ও পায়েও লাগানো যায়। তাহলে আলাদা করে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজারেরও দরকার পড়ে না। তবে যেদিন এই তেল হাত ও পায়ে লাগাবেন সেদিন সাবান ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও তুলোয় করে নখের চারপাশে অল্প গরম নারকেল তেল লাগিয়ে রাখুন। নখের চামড়া ওঠার সমস্যা দূর হবে।
লিপ বাম চাই-ই চাই
পুজোর সাজে ঠোঁটের রং হয়তো বা ক্ষণে ক্ষণে বদলাবে, তবে তার যত্নে যেন ত্রুটি করবেন না। লিপস্টিক যেমনই লাগান না কেন, তার সঙ্গে চাই রোজকার ঠোঁটের যত্ন। যতবার লিপস্টিক তুলবেন ততবারই ঠোঁটে লিপ বাম লাগাবেন। আর লিপস্টিক তোলার সময়ও তা খুবই যত্ন সহকারে তুলবেন। লিপস্টিক যখন তুলবেন তখন পেট্রলিয়াম জেলি বা অন্য কোনও লিপ ক্রিম ব্যবহার করবেন। তুলোতে এই ক্রিম মাখিয়ে নিয়ে তা আলতো করে লিপস্টিকের ওপর লাগিয়ে তুলে ফেলুন ঠোঁটের রং। তারপর ভালো কোনও কোম্পানির লিপ বাম মেখে অন্তত আধ ঘণ্টা রেখে দিন। লিপ বামের ময়েশ্চার ঠোঁট টেনে নিলে তবেই তাতে আবার লিপস্টিক লাগানোর কথা ভাববেন। আর এই রুটিন রাতে শোওয়ার আগে অবশ্যই করবেন। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আগে ক্রিম দিয়ে লিপস্টিক তুলে ফেলুন। চোখের কাজল ও ঠোঁটের রং তুলতে অনেকেই ভুলে যান। মনে রাখবেন এতে কিন্তু ত্বকের ক্ষতি হয়।
ঘুম আর জল
সব শেষে চাই সঠিক ঘুম আর প্রচুর পরিমাণে জল। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে না পারলে কোনও ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, জেল বা প্যাক লাগিয়েও লাভ হবে না। ফলে শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে সারা দিনে অন্তত দুই থেকে তিন লিটার জল পান জরুরি। নিয়ম করে এই জল যদি আপনি সারা দিনে খান তাহলে ত্বকের জেল্লা আপনিই বাড়বে। আর চাই দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম। তাহলেই দেখবেন শরীর ভালো থাকবে। চোখ-মুখও উজ্জ্বল থাকবে। বাকি যেটুকু বাইরের সৌন্দর্যচর্চা তা তো স্যালোঁয় গিয়ে সম্ভব। কিন্তু ভিতরের সৌন্দর্যে ঘাটতি হলে কোনও বিউটি থেরাপিতেই ফল পাবেন না।