উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। কর্মরতদের ... বিশদ
সুন্দর থাকার রহস্য
অভিজ্ঞ স্টাইলিস্ট সাবর্ণী দাস আলোচনা শুরু করলেন তাঁর মায়ের একটা কথা দিয়ে। তিনি বললেন, ‘মা বলতেন, সবাই সুন্দর।’ তারপরে তিনি জানালেন, মায়েদের শৈশবে মানুষ এত ‘ওয়েলগ্রুমড’ ছিল না। ভুরুটুকু সামান্য ঠিক করলেও যে সুন্দর দেখাতে পারে, সেটা তাঁরা জানতেন না। সেটাই সাবর্ণীদের প্রজন্ম ধীরে ধীরে শিখেছেন। তাঁরা বুঝেছেন, ছোটখাট খুঁত বা অসুবিধে নিজেই শুধরে নেওয়া সম্ভব। সাবর্ণীর মতে, এগুলো কিন্তু অতিরিক্ত কোনও কেয়ার নয়। খুব সাধারণ কিছু জিনিস। একটা সাবান ভালো করে মাখার পরে একটা ক্রিম লাগানো, এইরকম আর কি। ভারতীয় মূল ধারা যেমন, একটু হলুদ খাওয়া বা লাগানো বা নারকেল তেল খাওয়া বা লাগানো ভালো। এই তথ্যগুলো আজকাল অনেকেই জানেন। অথচ মায়েদের শৈশবে এইগুলো এতটাও জানা ছিল না। তাঁদের মায়েরা যতটুকু জানতেন, ততটুকুই হতো। কিন্তু সাবর্ণীরা কৈশোর পর্ব পেরিয়ে বুঝেছেন অনেকটা। খাওয়ার আগে নিমপাতার রস খাওয়া শিখেছিলেন। বুঝেছিলেন, নিমপাতা আর হলুদবাটা শুধু মুখে লাগালে হবে না, খেতেও হবে। যাকে বলে ‘বিউটি ইজ অলওয়েজ উইদিন।’ সেটাই সুন্দর থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। অতি সাধারণ চেহারার মহিলাও অনন্যা হতে পারেন। তাঁরা হয়তো ক্লাসিক্যাল দিক থেকে সুন্দরী নন। তাঁদের স্বভাবের জন্যই হয়তো তাঁদের ভালো লাগে। অন্তর থেকে তাঁরা সুন্দর। তাঁদের কথাবার্তা, আচরণ, মনের বিশ্বাস এগুলোই তাঁদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। অন্তর থেকে কেউ ভালো হলে সেটা মুখে প্রতিফলিত হতে বাধ্য।
পোশাকি সাজগোজ
আজকাল শহরের দিকে বিশেষত, পোশাক নিয়ে খুব একটা বিধিনিষেধ নেই। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন বা অন্য প্রদেশের জামাকাপড় সবাই খুব পরে। কিন্তু বাঙালি মেয়েদের জন্য এখনও শাড়িই শেষ কথা, মনে করেন সাবর্ণী। এ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কমবয়সি হোক বা বেশি বয়স— শাড়িতে সবাইকেই ভালো লাগে। তবে বয়স বেশি হলেই শাড়ি পরতে হবে, এটায় তিনি বিশ্বাসী নন বলে জানালেন। তাঁর মতে, যতই ওয়েল মেনটেন্ড হোক না কেন, বয়স হলে কিছু কিছু জিনিস এড়ানো যাবে না। যেমন অনেক মহিলারই ৫০ পেরিয়ে যাওয়ার পর কোমরের নীচ থেকে একটু ভারী হয়ে যায়। বা স্কিনটা একটু কুঁচকে যায়। এটার সঙ্গে লড়াই করার কোনও জায়গা নেই। এটা মেনে নিতে হবে, মন খারাপ করলে চলবে না। ওটা নিয়েই পজিটিভ হয়ে চলতে হবে। কিছু জিনিস খেয়াল রাখলেই চলবে। যেমন সালোয়ার-কুর্তা একটু ঢিলেঢালা পরুন বা একটু ফ্লোয়িং কাট থাকলে ভালো। বয়সটা লুকনোর ব্যাপার নয়। বরং নিজেকে কীভাবে সক্রিয় রাখা যায়, ভাবুন। দরকারে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন। মনে মনে নিজেকে ইয়ং লাগবে। সাবর্ণী বললেন, ‘আমাকেই তো কত লোক বলেন, আপনার ষাট বছর বয়স! দেখে তো ৪৫ মনে হয়!’ তার কারণটাও নিজেই বললেন। ‘অল্পবয়সিদের সঙ্গে কাজ করাতেই লুকিয়ে আছে ইউএসপি। ওঁদের ভাবনাচিন্তা মন খুলে দেয়। সবটা না মানলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আনন্দটা উপভোগ করা যায়।’
কী পরবেন, কী নয়
এই স্টাইলিস্টের পরামর্শ, বয়স বাড়লে শাড়ির মধ্যে হ্যান্ডলুম শাড়ি সব জায়গায় চলনসই। তা সে কাজের জায়গা হোক বা বিয়েবাড়ি। লিনেন বা অন্য সব হ্যান্ডলুম শাড়ির খুব সুন্দর ফল(fall) হয়। সেগুলো সুন্দরভাবে গায়ে ছড়িয়ে থাকে। শীতকালে হাল্কা সিল্ক বয়স্কদের জন্য বেশ মানানসই। সাবর্ণীর নিজের একান্ত পছন্দ তসর। ‘তসরের বুনটটা এতটাই সুন্দর, তা অনেক খুঁত ঢেকে দেয়। কোমরের দিকে বেশি চর্বি থাকলে শিফন উপযুক্ত নয়। তসরে সবটা ভালো ঢেকে যায়। একটু গোলগাল লাগলেও অশালীন বা অসুন্দর কখনওই লাগবে না,’ বলছেন তিনি। রঙের ক্ষেত্রেও আজকাল কোনও নিয়ম নেই। ফর্সাদের প্যাস্টেল শেড বা কালোদের ডিপ কালার, এসব এখন কেউ ভাবে না। বয়স হলেও হাল্কা রং পরতে হবে, কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি। এমন চল এ রাজ্যেই রয়েছে। তামিলনাড়ুতে কোনও বৃদ্ধা দিব্য পার্পল বা মেরুন পরেন অনায়াসে। নিজের পছন্দে কেউ হাল্কা রং পরলে সেটা আলাদা কথা। সঙ্গে তিনি জানালেন, স্টাইলিশ ব্লাউজের এখন কদর খুব। মহিলারা এখন শাড়ির তুলনায় বেশি খরচ করেন ব্লাউজে। সেগুলো ভালোও লাগে। তবে একটা বয়সের পরে সবাইকে সব রকম কাট মানায় না, এটা মনে করালেন সাবর্ণী। নিজের উদাহরণ দিয়েই তিনি বললেন, ‘আমার গলায় বোটনেক কাট ঠিক মতো বসে না। আমার নিজের চেহারার জন্যই হয়তো! তাই ফ্যাশন আছে বলে সেটাই পরতে হবে, এটা ভাবলে ভুল হবে। এই বয়সে হয়তো কাঁধের দিকটা একটু ঝুলে গেল বা চামড়া একটু লুজ হয়ে গেল, তাই বোটনেক বসল না। বয়সের সঙ্গে যেটা মানাবে, সেটা পরাই ভালো। যেমন, আমার গলায় পঞ্জাবি রাউন্ড নেক ভালো বসে। ওটাই পরি আমি।’ ভারী চেহারায় কুর্তার ওপর দিকে অনেক বেশি কাজ আদৌ মানাচ্ছে কি না, দেখে নিতে হবে। ওড়না ব্যবহার করলে সেটাও লুক বা কমফর্টের কথা ভেবেই করুন। ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলে জানাচ্ছেন তিনি। ওয়েস্টার্ন ওয়্যারে শরীরের কন্ট্যুর বা ভাঁজ বেশি বোঝা যায়। তাই ভারী চেহারায় ফর্মাল স্কার্ট পরতে গেলাম, দেখতে কিন্তু ভালো লাগবে না। তার বদলে এই বয়সে ছড়ানো স্কার্ট দেখতে ভালো লাগবে। সঙ্গে একটা লম্বা কুর্তা। ওড়নাও লাগবে না। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মাথায় রাখলে লুক একদম ঠিকঠাক থাকবে।
গয়নাগাটি
সাবর্ণীর মতে, গয়না একেবারেই ব্যক্তিগত পছন্দ। গত ১০-১৫ বছরে গয়না পরার চল কিছুটা কমেছে বলেও মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘লোকে বিয়েবাড়িতেও এখন সুন্দর শাড়ির সঙ্গে কানে ভারী কিছু পরেন, তারপর হাতে ঘড়ি বা আঙুলে বড় আংটি। ব্যস হয়ে গেল। গলায় হেভি কিছু পরলে কানে কিছু আর পরলেন না। এটা ব্যালান্স করে চলা। পার্টি বা বিয়েবাড়িতে পরার সময় যদি বেশি কাজ করা রয়েছে এমন কুর্তা পরেন, বা শাড়িটা বেশ জমকালো পরেন, তাহলে শুধু কানে পরলেই চলে। শাড়ি যদি প্লেন হয়, তাহলে লম্বা সুন্দর গলার কিছু পরলেন। রুচি অনুযায়ী, রুপো বা সোনা ছাড়াও দড়ি বা কাপড়ের গয়না পরলেন। আজকাল তো কত রকম বেরিয়েছে! কিন্তু খুব ভারী চেহারায় গলার কিছু পরার সময় একটু দেখে নিন, মানােচ্ছ কি না। বয়স হলে গলার দিকে চর্বি জমে যায় অনেক সময়। তাতে ছোট চোকার পরলে সেটা চেপে বসছে দেখলে মনে হবে।’ সব শেষে সাবর্ণীর সংযোজন, যে কোনও জিনিস পরার পরে সবসময় নিজেকে আয়নায় দেখে নিন, নিজের যদি ভালো লাগে, তাহলে সব ঠিক আছে। কিন্তু আমরা অনেক সময় নিজেরাই বুঝতে পারি না। জোর করে পরে ফেলি, পরে মনে হল আর খুলতে ইচ্ছে করছে না! তার চেয়ে চোকার আর লম্বা হার দু’টোই বের করে রাখুন। দেখে নিন, কোনটা বেশি মানাচ্ছে, তাহলেই হল। আদত কথা, নিজের সৌন্দর্যের চাবিকাঠিটি লুকিয়ে আছে আসলে আপনার হাতেই।