বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ইটরঙা প্রিন্টেড সিল্ক, সারা গায়ে তার খড়িমাটি রঙের ফুলের নকশা। শাড়িটি খাদি সিল্ক। আর আশির দশকে যিনি এই শাড়িকে বিখ্যাত করেছিলেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধী। শুধু এই শাড়িটিই নয়, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে খাদি সিল্ক সেই সময় ফ্যাশন দুনিয়ায় এক অন্য ধরনের ট্রেন্ড নিয়ে এসেছিল। খাদির পোশাক বরাবরই আলাদা ঐতিহ্য বহন করে, যা প্রচলিত ফ্যাশন ট্রেন্ডের তুলনায় ভিন্ন। কিন্তু ক্রমশ সেই ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে আধুনিক চাহিদা। বদলেছে খাদির ডিজাইন। কথা হল সংস্থার অন্যতম প্রধান ডিজাইনার ঐশী গুপ্তর সঙ্গে। খাদির পোশাককে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই বদল। তবে বদল অবশ্যই ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে।
খাদি ও স্বাধীনতা
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে খাদির নাম। সৌজন্যে মহাত্মা গান্ধী। আর সেই কারণেই স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও খাদির পোশাক নানা ইতিহাসের সাক্ষী। এই পোশাকের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছিয়েছে।
‘খদ্দর’ অর্থাৎ ‘হাতে বোনা সুতো’। আর সেই সুতো দিয়ে তৈরি পোশাকই খাদি। সুতি, সিল্ক, তসর, মুগা, সব ধরনের পোশাকই খাদির ঐতিহ্য। চরকায় মহাত্মা গান্ধীর কাপড় বোনার দৃশ্য শুধুমাত্র এক ইতিহাসেরই সৃষ্টি করেনি, বরং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাক্ষী হয়ে থেকে গিয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষী
এবার একটু ক্রমবিবর্তনের কথায় আসি। খাদির ঐতিহ্যবাহী শাড়ি থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার নয়া ট্রেন্ড হয়ে ওঠার পথটা ঘটনাবহুল। ১৯৮৯ সাল। খাদির পোশাক নিয়ে একটা গোটা ফ্যাশন শো-এর আয়োজন করা হয় মুম্বইয়ে। আশিরও বেশি স্টাইল ও ফ্যাশন ট্রেন্ড ধরা পড়ে খাদির আঙিনায়। ঠিক তার পরের বছরই ডিজাইনার রিতু বেরি নিজস্ব খাদি কলেকশন আনলেন বাজারে। খাদি হয়ে উঠল আধুনিকাদের ‘ফ্যাশন স্টেটমেন্ট’। যত দিন এগিয়েছে ততই নতুনত্বে ভরে উঠেছে খাদির সম্ভার। শাড়ি ছাড়াও এখন ড্রেস, গাউন ফ্রক, পালাজো, স্ট্রেট প্যান্ট, নানা ধরনের টপ, কুর্তি সেই সম্ভারের অন্তর্ভুক্ত।
বদল শুরুর দিনগুলো
ডিজাইনার ঐশী গুপ্ত জানালেন নকশার বদল শুরু হয়েছিল ২০০০ সাল নাগাদ। কুর্তার ডিজাইনে অ্যাপ্লিক, নানা রঙের ফ্যাব্রিক, সুতির সঙ্গে র-সিল্কের মিলমিশ, এমব্রয়ডারির সঙ্গে হ্যান্ড পেইন্ট ইত্যাদির প্রচলন তখন থেকেই। কিন্তু লোকের চোখে সেই বদলটা ধরা পড়তে আরও একটু সময় লেগে যায়। ফলে গতানুগতিকতার বাধা পেরিয়ে খাদির বিবর্তনের পথ চলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। আর তখন থেকেই খাদির সঙ্গে ট্রেন্ড ও ফ্যাশন শব্দ দু’টো জড়িয়ে গিয়েছে।
শাড়িতে আধুনিক ছোঁয়া
সুতি হোক বা সিল্ক অথবা তসর, খাদির সব ধরনের শাড়িতেই প্রচুর বদল এসেছে, জানালেন দক্ষিণাপণ খাদির স্টোর ম্যানেজার অশোক সাহা। তাঁর কথায়, সুতির শাড়িতে সরু ডাই করা পাড়, চেক ও স্ট্রাইপের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ইত্যাদি তো উল্লেখযোগ্য বটেই, পাশাপাশি যা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, তা রঙিন গরদ। গরদ এখন আর শুধুই পুজোর শাড়ি নয়। বরং লাল, মেরুন, জাম, সবুজের মতো রঙে সেজে তা হয়ে উঠেছে পার্টিওয়্যার। তার সঙ্গে থাকছে নানা রকম সুতোর কাজ। খাদি সিল্কের প্রিন্টেও এসেছে বদল। ফ্লোরাল প্রিন্টের বদলে জিওমেট্রিক নকশা চোখে পড়ছে। অনেক সময় আবার হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে উঠে আসছে নানা কথা, কবিতা, গানের লাইন।
ডিজাইনে আধুনিকতা
‘আজকে ভারতীয় নারী বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে। তাদের সাজগোজের মধ্যে তাই একটা অন্য ‘লুক’ প্রয়োজন। এমন ‘লুক’ যা ভারতীয় ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে না গিয়েও আধুনিক। সেই আধুনিকতাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে খাদির নতুন ফ্যাশন’, জানালেন ঐশী। তাঁর কথায়, একটা লম্বা ঝুলের কুর্তার বাঁ পাশে একটু বড় স্লিট কেটে দিলে তা অনায়াসেই জিনস বা লেগিংসের সঙ্গে পরা যায়। গতানুগতিকের ধাঁচে তা হয়ে ওঠে আধুনিক। এমনই কুর্তার আবার নেকলাইনে সামান্য একটু এমব্রয়ডারির নকশা করে দিন, ভারতীয় ঐতিহ্য ফুটে উঠবে। একইভাবে ভারতীয় পোশাকেও বিদেশি স্টাইল দেওয়া যায়। যেমন শর্ট টপের দু’টো লেয়ার। নীচের লেয়ারটা গায়ের সঙ্গে লাগানো, অনেকটা করসেটের মতো। আর ওপরের লেয়ারে ফ্লেয়ার বা ঝালর দেওয়া। এই ধরনের টপ— জিনস, স্কার্ট, পালাজো সবকিছুর সঙ্গেই যেমন মানানসই, তেমনই আবার শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ হিসেবে পরলেও অন্যরকম দেখাবে। ছেলেদের শার্ট ও শর্ট কুর্তায় নানারকম নতুনত্ব এসেছে। প্রিন্টের সঙ্গে সুতোর কাজ মেশানো হয়েছে। আবার শার্টের ঝুল ছোট করে আনা হয়েছে স্মার্ট লুক। ক্যাজুয়াল ওয়্যারেরই বেশি চাহিদা এখন। করোনা সংক্রমণের কথা ভেবে খাদির পোশাকে একেবারে নতুন ধরনের কিছু ডিজাইন ভেবেছেন ঐশী। যেমন, পিছনে উঁচু সরু কলার লাগানো গাউনে ফিউশন স্টাইলে ভি-কাট নেক লাইন। কখনও আধুনিক চাহিদা অনুযায়ী সুতির স্ট্রেট প্যান্টের কোমরে বিড্স দেওয়া দড়ি বাঁধা। এইরকম বদলের মাধ্যমেই খাদির পোশাকের নকশা বদলাচ্ছে সারাক্ষণ। দেশের বেড়া ডিঙিয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও। সেটাই খাদির ফ্যাশনের মুক্তি।