নিজের ঘর নিজেই সাজিয়ে তুলতে পারেন। কিন্তু কী ভাবে? এই বিষয়ে বিশিষ্ট ইন্টিরিয়র ডিজাইনার এবং শাহরুখ-পত্নী গৌরী খানের পরামর্শ শোনালেন কমলিনী চক্রবর্তী।
‘ঘরের আসবাবপত্র নাড়াচাড়া করতে করতে কবে যে ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হয়ে উঠলাম, আমি নিজেই জানি না। তবে পুত্র, কন্যা আর স্বামীর প্রশংসা যে আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই।’ কথাগুলো বললেন গৌরী খান। বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের সহধর্মিণী তো তিনি বটেই, পাশাপাশি প্রসিদ্ধ ইন্টিরিয়র ডিজাইনারও। তাই ঘর সাজানোর কথা যখন উঠলই, তখন তাঁর মতামতটা একটু শুনে নেওয়া দরকার।
একটা ছবি আঁকুন মনে মনে
এখন তো বাড়িতেই অনেকটা সময় কাটছে। তাই কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে উঠছে চারপাশ। এবার বদল চাই। কিন্তু ইন্টিরিয়র ডিজাইনার ডেকে ঘরের ভোল বদল! সেটা এখন সম্ভব নয়। তবে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে নিজের ঘর নিজেই সাজিয়ে ফেলতে পারেন। আর সেই রকম ঘর সাজাতে হলে প্রথমে একটা ছবি আঁকতে হবে মনে মনে। ভেবে নিন কেমন লুক দিতে চান ঘরে। অনেকে সাবেকি কায়দায় ঘর সাজাতে ভালবাসেন, অনেকে আবার ঘরে আধুনিক লুক পছন্দ করেন। গৌরী খানের মতে, সাবেকি আর আধুনিকতা মিশিয়েও ঘর সাজানো যায়। তিনি নিজেই নিজের বাসস্থান মন্নতে তেমন অন্দরসজ্জা বেছেছেন। সেখানে একটা তলায় ইংলিশ স্টাইল রেখেছেন, অন্য তলায় এথনিক ডিজাইন করেছেন। আর শাহরুখের অফিস ফ্লোরে দিয়েছেন থিম ডেকর। উডেন থিম ব্যবহার করেছেন সেখানে।
রঙের গুরুত্ব প্রচুর
বাড়ির সদর দরজার রং দিয়ে শুরু করুন রঙের খেলা। গৌরীর মতে, দরজাটা একটু উজ্জ্বল হলে ভালো লাগে। তাই হলুদ, কমলা বা লাল রং করতেও আপত্তি নেই। তবে বাড়ির দেওয়াল কিন্তু ম্যাট ফিনিশের হলেই ভালো। সাদা, ক্রিম, হালকা হলুদ, অফ হোয়াইট, বেজ এই সব রং ঘরের দেওয়ালের পক্ষে উপযুক্ত। এই মুহূর্তে হয়তো দেওয়ালের রং বদল সম্ভব নয়, কিন্তু আসবাব বা ঝোলানো আলোর রং তো নিজে হাতেই বদল করা যায়। ধরুন আপনার বসার ঘরের সেন্টার টেবিলে স্প্রে পেন্টিং করে নিলেন। খবরের কাগজ দিয়ে টেবিলের অংশ বিশেষ মুড়ে, শুধু যেটুকু রং হবে সেটুকু খোলা রাখুন। তারপর স্প্রে পেন্টিং করে কাগজ সরিয়ে দিন। দেখবেন একটা ডিজাইন তৈরি হয়েছে। আবার শুধু টেবলের পায়াগুলোতেও অন্য রং করতে পারেন। ঝুলন্ত আলোর গায়ে মনের মতো রং করুন। ঘরের চেহারাই বদলে যাবে।
বসার ঘরে নানা লুক
আপনার বসার ঘরে সোফা থাক বা ডিভান, তার কভার বদলে দিন। কাঁথা কাজ বা হ্যান্ড পেইন্ট করা কভার লাগাতে পারেন। বসার ঘরের একটা দেওয়ালে কারুকাজ করা পেতলের ফ্রেম লাগানো বড় আয়না লাগান আলোর মুখোমুখি। ঘরে যদি জানালা না থাকে, তাহলে একটা দেওয়াল জুড়ে আয়না থাকুক। একটু মাথা খাটিয়ে তৈরি করতে পারেন ঘরের সাজ। রাজস্থানি কাচ বসানো বা বাঁধনির ঘাগরা থাকলে দেওয়ালের মাপ অনুযায়ী তা কেটে সমানভাবে সেলাই করে নিন। তারপর সেটাই ওয়াল হ্যাঙ্গিং হিসেবে টাঙিয়ে দিন। ঘরের চেহারা বদলে যাবে। গালা বা পেতলের মিনে করা ঘর সাজানোর সরঞ্জাম সাজিয়ে দিন বসার ঘরের কোণার তাকে। ছোট বড় নানা মাপের কিছু কুশন বানিয়ে নিন। বসার জায়গায় সেগুলো সাজান এলোমেলো ভাবে। খুব উজ্জ্বল রঙের কুশন কভার বাছবেন। ঘর সুন্দর লাগবে। এই যে রাজস্থানি ওয়াল হ্যাঙ্গিয়ের সঙ্গে রঙিন কুশন, এটাই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ স্টাইল। সাবেকির সঙ্গে আধুনিকের মেলবন্ধন। বাজেট একটু বেশি থাকলে মোগল পেইন্টিং কিনে দেওয়ালে টাঙাতে পারেন।
শোওয়ার ঘরের সাজ
বেডরুম বা শোওয়ার ঘরের সাজে থাকবে ব্যক্তিগত চরিত্র— বললেন গৌরী খান। তাই এই ঘরের ডিজাইনের মধ্যে একটু পার্সোনাল টাচ রাখা যায়। যেমন আপনি যদি ভালো আঁকতে পারেন, তাহলে ঘরের একটা দেওয়াল জুড়ে নিজেই আঁকুন। রং তুলির টানে ওই দেওয়ালটা হয়ে উঠুক আপনার মনের ক্যানভাস। যদি আঁকতে না পারেন, তাহলে বরং মনের মতো কিছু ছবি লাগান একটা দেওয়াল জুড়ে। পারিবারিক ছবি। এমন ছবি যা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। আসবাবের ধরন নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করুন। এই যেমন খাটটা নিয়ে আসুন ঘরের মাঝখানে। তার পাশে একটা সাইড টেবল রাখুন। উজ্জ্বল রঙের সাইড টেবল। তাতে নিজেদের একটা ছবি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে পারেন। অথবা ছেলেমেয়ের কোনও হাতের কাজ দিয়েও সাজাতে পারেন। শোওয়ার ঘরের বড় জানালায় হালকা রঙের ভারী পর্দা লাগান। প্রয়োজনে তা খোলা রাখবেন, আবার দরকার হলে টেনে রাখবেন। জানালার তাকে একটা ইনডোর গাছ রাখুন। একটু সবুজ আর একটু রঙিন গাছ মন ভালো রাখবে। ড্রেসিং ইউনিটের জায়গা বদলান মাসে দু’বার। দেখবেন গোটা ঘরটাই নতুন লাগছে। শোওয়ার ঘর যদি বড় হয়, তাহলে সেখানে একটা বসার ব্যবস্থা রাখুন। উজ্জ্বল রঙের ভেলভেটে মোড়া লাভ সিট এই ঘরের জন্য উপযুক্ত।
স্টাডি কাম গেস্টরুম
বাড়িতে আলাদা পড়ার ঘর না থাকলে গেস্টরুমকেই এমন ভাবে সাজান যাতে তা পড়ার ঘর হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। গৌরী খানের পরামর্শ অনুযায়ী গেস্টরুমে খুব কম আসবাব রাখা উচিত। একটা খাট, একটা ছোট দেওয়াল আলমারি আর একটা ড্রেসার। কিন্তু এই ঘরকে যদি স্টাডি হিসেবেও ব্যবহার করেন, তাহলে দুটো কাউচ আর একটা ছোট টেবল সহ বসার ব্যবস্থা রাখবেন।
এই ঘরের বেডকভারে আধুনিক প্রিন্ট থাকুক। দেওয়াল আলমারিতে কাচ ও কাঠের মিলমিশ। যে পাল্লা কাচের, তাতে বই রাখুন। বাকিটা জামাকাপড় রাখার জন্য ব্যবহার করুন। গেস্টরুমের খাটে বালিশের বদলে ছোট বড় কুশন বা থ্রো পিলো রাখুন। এই কুশনগুলোয় বেডকভারের সঙ্গে রং মিলিয়ে কভার লাগান। বেডকভারের প্রিন্টে যত রং আছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে একেকটা কুশনে একেক রঙের কভার লাগাতে পারেন। গেস্ট রুমের জানালায় ব্লাইনডস লাগান। সাদা বা হালকা রঙের হলেই ভালো। আলো খেলবে।
আলোর দিকে খেয়াল রাখুন
ঘরে আলোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বসার ঘরে আলো লাগান দু’রকম। একটা উজ্জ্বল আলো আর অন্যটা হলুদ বাল্ব। খুব প্রয়োজন না হলে উজ্জ্বল আলো জ্বালাবেন না। শোওয়ার ঘরে মোলায়েম হলুদ আলো রাখুন। সঙ্গে উজ্জ্বল বেড সাইড ল্যাম্প। গেস্টরুমের আলো উজ্জ্বল হলে ক্ষতি নেই। বিশেষত স্টাডি কাম গেস্টরুম হলে তো আলো উজ্জ্বল হওয়া জরুরি। সামান্য হাতের ছোঁয়ায় ঘরের ভোল পাল্টে দিতে পারেন আপনিই। ঘর সাজানোর সময় মনে রাখবেন, সেই সাজ যেন আপনার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তা যেন কখনওই আপনার ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়।
ডিজাইনারের টিপস
 ঘরে জানালা না থাকলে দেওয়াল জোড়া আয়না চাই।  বড় জানালায় হালকা রঙের পর্দা দিন।  জানালার কাচ হবে স্বচ্ছ।  আসবাব বড় হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বেশি যেন না হয়।
 শোওয়ার ঘরের দেওয়ালে আন্তরিক রং করুন, যেমন ঘন গোলাপি, শান্ত নীল ইত্যাদি।  ঘর-লাগোয়া বারান্দা থাকলে দরজা হোক কাচে মোড়া।
 ছোট ঘরে কার্পেট পাতবেন না।