কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
লকডাউন শিথিল হতেই খুলে গিয়েছে স্যলঁ ও বিউটি পার্লার। কিন্তু বেশিরভাগ চাকরিজীবী মানুষ এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় অফিসের কাজের চাপে বিউটি পার্লারে যেতে পারছেন না। এদিকে মাসের পর মাস ঘরে থাকতে গিয়ে নানা দুশ্চিন্তা, টেনশনে মুখের ত্বকের জেল্লা অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে। অথচ অনেকই জানেন না, যে টেনশন থেকে স্ট্রেসের ফলে অনিদ্রা, চোখের নীচে কালি, ব্রণ হওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে ত্বকও অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ফলে যতটা সম্ভব স্ট্রেসমুক্ত থাকা যায় সেই চেষ্টা করা উচিত।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং ও সান প্রোটেকটিভ ক্রিম বা লোশন প্রতিদিন ব্যবহার করা ত্বক পরিচর্যার অঙ্গ। মানুষ বাড়িতে থাকলেও বারান্দা বা জানালা দিয়ে ঘরে রোদ আসে। ফলে ঘরের মধ্যেও সূর্যের একটা প্রভাব থেকেই যায়। সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন প্রতিদিন ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা আবশ্যক। যেহেতু এখন ভীষণ গরম তাই অনেকে খুব বেশি সময় ধরে অনেক জল ও সাবান দিয়ে দু-তিন বার স্নান করেন। দিনে দু’বার স্নান করা যেতেই পারে। তবে বেশি পরিমাণ জল ও সাবান ব্যবহারে ত্বকের যে নিজস্ব স্বাভাবিক তেলের ভাগ থাকে, তা চলে যায়। তাই দু’বারের বেশি স্নান করা উচিত নয়। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মুখ হালকা হাতে আলতোভাবে চেপে চেপে মুছে নিতে হবে। যাতে জল বেরিয়ে মুখ শুকনো হয়ে যায়। তোয়ালে দিয়ে খুব ঘষে মুখ মোছা কখনই উচিত নয়। এতে ত্বকের কোমলতা নষ্ট হয়ে যায়। ফেসওয়াশ বা েক্লনজিং সকালে উঠে এবং রাতে শোয়ার আগে একবার করে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যাঁদের হাতের কাছে ফেসওয়াশ নেই, তারা ঘরেই নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী েক্লনজার তৈরি করে নিতে পারেন।
ক্লেনজার
অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে অর্ধেক কাপ গরম জলে টি থ্রি এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা দিয়ে তার মধ্যে জোজোবা বা ক্যাস্টর অয়েল এক টেবিল চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে তুলো দিয়ে মুখে লাগিয়ে দু’ মিনিট পর তা মুছে নিলেই হল। এছাড়া অয়েলি স্কিনে গ্লো আনতে মধু এক চা চামচ ও কাঁচা দুধ দু’ চা-চামচ ভালো করে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে মাসাজ করে তারপর ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। যাঁদের সংবেদনশীল ত্বক অর্থাৎ রোদে বের হলে মুখ লাল হয়ে যায়, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল এক টেবিল চামচ, ল্যাভেন্ডার অয়েল পাঁচ ফোঁটা, মধু কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দু’ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিলেই হবে। এছাড়া যাদের ড্রাই স্কিন সেক্ষেত্রে ঘরে পাতা টক দই দু’ চা-চামচ, অর্গানিক মধু এক চা চামচ ও অলিভ অয়েল এক চা চামচ একত্রে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে মাসাজ করে দু’ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও এ ধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে েক্লনজার হিসাবে আনারসের রস ও বেকিং সোডার মিশ্রণ বিশেষ উপকারী। খেয়াল রাখা দরকার ক্লেনজিং করার আগে অবশ্যই মুখ জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
টোনার
েক্লনজিং-এর পর টোনার ব্যবহার করতে হয়। এটি স্কিনকে টানটান রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে যদি টোনার না থাকে, সেক্ষেত্রে গোলাপজল ব্যবহার করা যেতে পারে। তরমুজ, শসায় জলের পরিমাণ বেশি থাকে। একটি পাত্রে জল নিয়ে সেটি গরম হয়ে ফুটে উঠলে তার মধ্যে কয়েক টুকরো তরমুজ দিয়ে ঢিমে আঁচে পাঁচ-ছ’মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর এটি ঠান্ডা করতে হবে। পরে তরমুজের টুকরো জল থেকে তুলে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর যে জলে তরমুজ ফোটানো হয়েছে, সেই জলের কিছু অংশ ব্লেন্ডারে দিয়ে তরমুজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে কর্পূর দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি নাড়িয়ে একটি স্প্রে বোতলে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এটি টোনার হিসাবে ব্যবহার করলে উপকার মিলবে। একই পদ্ধতিতে শসার টোনার বাড়িতে তৈরি করতে পারেন। শুধু শশার ক্ষেত্রে কর্পূরের বদলে একটু গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এই দুটি টোনার ত্বকের জন্য ফলদায়ী। এটি চার পাঁচ দিন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। এই দু’টি ফলে জলের পরিমাণ এতটাই বেশি থাকে যা ত্বককে সজীব করতে সাহায্য করে।
ময়েশ্চারাইজার
ক্লিনিং টোনিংয়ের পর ময়েশ্চারাইজার লাগানো অত্যন্ত জরুরি। ইচ্ছে করলে ঘরেই ময়েশ্চারাইজার তৈরি করে নিতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে জোজোবা অয়েল অর্ধেক চা কাপ, স্যানডালউড অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ফ্র্যানকিনসেনস এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা একত্রে মিশিয়ে বোতলে রেখে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। জোজোবা অয়েল খুব হালকা যা সহজে স্কিনে মিশে যায়। একেবারেই তেলতেলে নয়। এটি অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল। ফলে ব্রণর সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
এছাড়া নর্মাল টু ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল অর্ধেক চা কাপ, কোকোনাট অয়েল এক টেবিল চামচ, আমন্ড অয়েল এক টেবিল চামচ, জিরেনিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, স্যান্ডালউড এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহারে ত্বকে বাড়তি জৌলুস ফিরে আসে।
স্ক্রাবার
যাঁদের অয়েলি স্কিন, সপ্তাহে তিন দিন স্ক্রাবিং করা যেতে পারে। কিন্তু শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন স্ক্রাবিং করাই যথেষ্ট। ছ’টি আমন্ড সারারাত জলে ভিজিয়ে পরের দিন ভালো করে বেটে নিয়ে তার মধ্যে সামান্য লেবুর রস ও এক চিমটি বেকিং পাউডার মিশিয়ে আপ অ্যান্ড আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে মুখে লাগাতে হবে। দু’ থেকে পাঁচ মিনিট রেখে নব্বই শতাংশ শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নর্মাল টু ম্যাচিওরড স্কিনের ক্ষেত্রে ওটস পাউডার এক টেবিল চামচ গরম দুধে মিশিয়ে তার মধ্যে অলিভ অয়েল এক চা চামচ দিয়ে ব্রাশ বা হাতের সাহায্যে আপ অ্যান্ড আউট ওয়ার্ড স্ট্রোকে মুখে লাগাতে হবে। নব্বই শতাংশ শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে মাসাজ করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ফেসপ্যাক
স্ক্রাবিংয়ের পর সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন ফেসপ্যাক লাগালে স্কিনের হৃত গৌরব ফিরে আসে। নর্মাল টু ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ও কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে দই মিশিয়ে মুখে প্যাক লাগিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পা দু’টো বালিশের নীচে রাখলে আরাম মিলবে। ঠান্ডা চায়ের লিকার অথবা শশার রসে ভেজানো চৌকো করে কাটা তুলো চোখে আইপ্যাড হিসাবে তখন লাগাতে হবে। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হয়। ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে একটু রিলাক্সড মুডে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঘরে সফট মিউজিক চালিয়ে রাখলে একটা আরামদায়ক অনুভূতি হবে। যাদের ম্যাচিওরড থেকে ডাল স্কিন সেক্ষেত্রে টকে যাওয়া ঘরের দুধের মধ্যে তিন-চারটি জাফরানের সুতো, মধু কয়েক ফোঁটা, কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে আশাপ্রদ ফল মিলবে। এছাড়া তৈলাক্ত তথা ব্রণও আছে, এমন ধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে বেসন এক টেবিল চামচ, স্যান্ডালউড পাউডার অর্ধেক চা চামচ, দই এক চা চামচ ও গোলাপজল একত্রে পেস্ট তৈরি করে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও অয়েলি স্কিনে পাতিলেবুর রস ও মধু সমপরিমাণ নিয়ে তার সঙ্গে পাকা পেঁপের ভেতরের অংশ একত্রে মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। বাড়িতে যেহেতু এখন কাজের লোক সেভাবে আসছে না, তাই মহিলাদের বেশিরভাগ রান্নাঘরে সময় দিতে হচ্ছে। ফলে চোখে মুখে একটা তেলচিটে ভাব দেখা যায়। মহিলাদের ত্বক টানটান ও তুলতুলে রাখতে খাঁটি দেশি গাওয়া ঘি দু’ হাতের তালুতে নিয়ে ভালো করে তা ঘষে নিয়ে যখন গরম হয়ে যাবে, তখন মুখ থেকে গলায় লাগিয়ে নিলে মুখের ত্বক অনেক বেশি নরম হবে। এটি ব্যাকটিরিয়া দূর করে। ত্বককে হাইড্রেটেড করার পাশাপাশি পুষ্টি জোগায়। সব ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে উপযোগী। ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করে। দুপুরবেলা অবসর সময়ে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই হল। আর যাদের হাতে সময় কম, তারা রাতে শোয়ার আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সারারাত একই অবস্থায় রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে, যা হতে পারে অন্যের কাছে ঈর্ষণীয়।
অনুলিখন: চৈতালি দত্ত