বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
প্রশ্ন: এই লম্বা সময়টা কাটছে কী করে, মাথা কীভাবে ঠান্ডা রাখছ?
নন্দিনী: মাথা ঠান্ডা রাখাটা সত্যি খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চারদিক থেকে এত রকম চাপ! বাড়ি বসে অফিসের কাজ। তার মধ্যে আমাদের যাঁরা সব সময় সাহায্য করেন, সেই পরিচারিকারাও আসতে পারছেন না। তাই বাচ্চাকে দেখা, রান্নাবান্না... সবই তো করতে হচ্ছে মিলিয়ে মিশিয়ে। ময়ূরাক্ষী (কন্যা) আগে স্কুলে যেত। এখন সেটাও বন্ধ। বাড়িতে সারাক্ষণ বন্দি। তার উপরে আবার স্কুলের কাজ, সেগুলোও করাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা। জানি না, যারা বলছে লকডাউনে একঘেয়ে লাগছে, তারা কী ভেবে বলছে! এখন শুধু মনে হচ্ছে, পুরনো জীবনটা কেউ ফিরিয়ে দিক। সকালবেলা উঠে অফিস চলে যাই। দশ ঘণ্টার জন্য শান্তি!
প্রশ্ন: এর মধ্যে নিজের জন্য সময় বের করছ কীভাবে?
নন্দিনী: রাত আটটার পরে ছাদে হাঁটতে যাই। ওই সময়টা একদম আমার একার। নিজের মতো হাঁটতে হাঁটতে গান শুনি। এইটুকুই রিলাক্স করার মতো সময়। আর একটা বদ অভ্যেস কাটাতে পারছি না কিছুতেই—মোবাইলে ওয়েব সিরিজ দেখা বা বই পড়া। মা পর্যন্ত আমায় বকুনি দেয়। মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর কখনও ঘণ্টাখানেক বা দু’ঘণ্টাও হয়ে যায়... খেয়াল থাকে না! কত রাত হয়ে যায় ঘুমোতে, তাতেও বন্ধ করতে পারছি না। বরং মাকে বলি, তুমি প্লিজ এই সময়টা নিয়ে আমায় কিছু বোলো না।
প্রশ্ন: এত ঝক্কির মধ্যে বর কীভাবে সাহায্য করছে?
নন্দিনী: যেদিন থেকে বুঝলাম, পরিচারিকাদের সাহায্য আর পাওয়া যাবে না, তখনই আমি সব কাজকর্ম তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম। রান্নাবান্না দেখবেন শাশুড়ি, মেয়ের দেখাশোনার পুরোটা সামলাবে আবীর, আর আমি ঘরদোর পরিষ্কার, বাসন মাজা ইত্যাদি। তাই মেয়েকে খাওয়ানো, স্নান করানো, সঙ্গ দেওয়া—সবই আবীর করছে। তবে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াইও চলছে! তখন ওদের আর বাবা-মেয়ে মনে হয় না। মনে হবে অনেক বড় দাদা তার ছোট বোনের সঙ্গে লড়াই করছে। মেয়ে মাঝেমধ্যে বেশি বায়না করলে রেগেও যাচ্ছে, বলছে আর পারব না। তবে আবার পরে সামলে নিচ্ছে। পালানোর তো পথ নেই!
প্রশ্ন: লকডাউনে বলি-সেলেবদের অনেকেই স্ত্রীকে দিয়ে হেয়ারকাট করিয়ে ছবি দিচ্ছেন। তোমাদের তেমন কিছু হল নাকি?
নন্দিনী: অত স্টাইলের হেয়ারকাট পারব না বাবা! তবে ট্রিমটুকু করে দিয়েছি আর কী...।
প্রশ্ন: সাধারণ সময়ে যখন অবসর পাওয়া যায়, তখন তারকা-স্বামী কি পাশে থাকে? কীভাবে?
নন্দিনী: মেয়েকে দেখার লোক না এলে টুকটাক সাহায্য করে, তার বেশি খুব একটা কিছু নয়। তবে এবার আমাদের এত কাজ করতে দেখে আবীরের হঠাৎ মনে হল, ও ঘর মুছবে। লম্বা মানুষ। তাই আমাদের দেখিয়েছে, ও কত সহজে ঘর মুছতে পারে। ঘরে দাঁড়িয়ে পুরো বারান্দাটা মুছে দিতে পারে। সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভবই নয়। মুছেটুছে দাবি করেছে, এই কাজটায় ও কত দক্ষ! ওকে নাকি এই কাজটা করতে দেওয়া হলে ও অনেক ভালো পারত, এমনটাও মনে করছে। তবে ওর মা বলেছেন, তুই যেভাবে ঘর মুছতে মুছতে মোছা দিকেই আবার পা দিচ্ছিস, তোর আর মুছে কাজ নেই! কিন্তু ও তবু ট্রাই তো করেছে। একটাই ভুল হয়েছে আমার, সেটার ভিডিও করা হয়নি!
প্রশ্ন: দু’জন দু’জনের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারছ। মেয়ের সঙ্গেও অনেকটা সময় থাকছ। সেটা কেমন লাগছে?
নন্দিনী: মেয়ের সঙ্গে তো খুব ভালোই লাগছে। সত্যি কথা বলতে মজাই হচ্ছে। বরের সঙ্গেও ঠিক আছে, তবে অনেকটা লম্বা সময় তো... (হাসিতে ফেটে পড়ে) বুঝতেই পারছ! না-থাকাটা বেশি অভ্যেস হয়ে গিয়েছে কি না (হাসতে হাসতেই)। তা ছাড়া, সিরিয়াসলি বলতে গেলে প্রত্যেকেই একটা স্ট্রেসের মধ্যে আছি। কবে সব স্বাভাবিক হবে। ও ভাবছে, কবে আবার কাজ শুরু হবে। আমি তাও এক রকম কাজের মধ্যে আছি। ওদের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। একটা অনিশ্চয়তা তো আছেই। কোভিড আসার আগে ওর একটা অস্বাভাবিক ব্যস্ত শিডিউল ছিল। তখন আমিই বলেছিলাম, কটা দিন অফ নাও। সেই কটা দিন একটু বেশি দিন হয়ে গিয়েছে (আবার হাসতে হাসতে)। তাই আমি বলেছি, এ বার কাজ শুরু হলে লম্বা আউটডোর শ্যুটিংয়ে চলে যাও। জোকস অ্যাপার্ট, দু’জনের মধ্যে এখনও যে কানেকশনটা আছে, সেটা ভেবে ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: ওর অভিনয় ছাড়া আর কীসে মুগ্ধ হও?
নন্দিনী: ওর সেন্স অব হিউমার ভালো লাগে। চিরকালই। জানো তো, সেন্স অব হিউমার না থাকলে একসঙ্গে চলা খুব কঠিন। আর দু’জনের মধ্যে একটা ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাচিং বা একইরকম ভাবনাচিন্তা করা বা একই সময়ে একই কথা ভাবা... এটাও আছে। একটা উদাহরণ দিই। এই রবীন্দ্রজয়ন্তী চলে গেল। ওই দিন আমি ভাবছিলাম কিছু পোস্ট করব। রবীন্দ্রসঙ্গীতে আমার প্রিয় শিল্পী সাহানা বাজপেয়ি, ওর গলায় ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা...’ পোস্ট করব ভেবেছিলাম। এই গানটাই তো রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আদর্শ। আমি এ সব ভাবছি, তখনই আবীর বলল, আমি ট্যুইটারে পোস্ট করছি, একটা লাইন। বলে যেটা দেখাল, সেখানেও লেখা, ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা...।’ তো এই রকমই একসঙ্গে একরকম ভাবা, এটা আমাদের প্রায়ই হয়।
আবীর: আমাদের কাজে অসুবিধে কী জানো তো? আমরা যখন কাজ করি, তখন ভাবি, উফ কবে ছুটি পাব! যে মুহূর্তে ছুটি শুরু হয়, আমি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বলছি, চার দিন পরেই মনে হতে থাকে, আবার কবে কাজ করব? লকডাউনের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে আমার টানা শ্যুট চলেছে। এপ্রিলের ১০-এ ছবিমুক্তির কথা ছিল, ৮ মে-তেও ছবিমুক্তির শিডিউল ছিল। সবাইকে বলেছিলাম, এপ্রিলে কিন্তু শ্যুটিং করব না, এক মাস ছুটি নেব। তাতে ভবিষ্যতের প্ল্যানিং করে নেব। কী কুক্ষণে যে বলেছিলাম! সেটা যে কীভাবে, কে শুনে ফেলেছে জানি না, (হাসতে হাসতে) ২০২১-এর এপ্রিল না হয়ে যায় এবার! তবে হ্যাঁ বাড়িতে আছি, এটা ভালো। আমার তো আবার বদনাম আছে, বউ-অন্ত প্রাণ বলে! সেটা কেউ কেউ ভাবে, এটা একটা তৈরি করা স্ট্র্যাটেজি। কেউ আবার বিশ্বাসই করে না। কিন্তু আমাদের ব্যস্ততা থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা চলতেই থাকে সবসময়। এবার একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোও হয়ে গেল। গোড়ার দিকটা দু’জনেরই খুব ভালো লাগছিল। এখন দু’জনেই চিন্তিত, মনে হচ্ছে যে আর কত দিন?
প্রশ্ন: এতদিন কাজকম্মো করে বকুনি খেলে, না প্রশংসা জুটল?
আবীর: সত্যি কথা বলতে কী, আমি বাড়ির কাজ একদমই করি না। এটা কিন্তু সেলিব্রিটি বলে নয়। তবে একটা জিনিস ঠিক করে নিয়েছিলাম, লকডাউনের মধ্যে এমন কিছু করব না, যাতে কাজটা বেড়ে যায়। মানে কাজ না করলেও কাজ যেন বাড়িয়ে না দিই। সেটা সবসময় চেষ্টা করেছি। এতদিন বাড়িতে কী কী গ্রসারিস আসছে, বা মেয়ের জন্য কী কী লাগবে, তার একটা ভাসা-ভাসা ধারণা ছিল আমার। নন্দিনী হয়তো বলল, একটা কিছু অর্ডার করেছি, দেখে নিও, কিংবা বলল, পেমেন্ট করে দিও। তবে এই ক’দিনে আমি সেই ভাসা-ভাসা ধারণা থেকে একেবারে স্পষ্ট একটা ধারণায় পৌঁছে গিয়েছি। বাজার-হাট বাবা-ই করত। এ বার যখন অনলাইনে আমি করতে গেলাম, বুঝতে পারলাম, এ বার যখন চা আনা হয়েছে, পরের বার বিস্কুট আনতে হবে। এই যে মাইক্রো লেভেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া, এগুলো যে কত কঠিন, সেটা আমি জানতাম। সেটাকে সম্মান করতাম। এখন আরও সম্মানের সঙ্গে চোখে দেখছি। আর বাইরের খাওয়া হচ্ছে না বলে বাড়িতে সবাইকে বলে বিরক্ত করা, এটা একদম করব না ভেবে নিয়েছিলাম। যেমন, আমি খুব দই-ফুচকা মিস করছি বলে মাকে বলে বসলাম, মা একটু বানাবে? এমনিতেই কাজের শেষ নেই। তার মধ্যে এটা করে আমি আর বিড়ম্বনা বাড়াব না।