বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
‘ঠিক সুগৃহিণী বলতে যা বোঝায় ঠাকুরবাড়িতে মৃণালিনী ছিলেন তাই। ... ঠাকুরবাড়িতে মেয়েদের নানারকম তালিম দেওয়া হত। মহর্ষিকন্যা সৌদামিনী তাঁর ‘পিতৃস্মৃতি’তে লিখেছেনযে তাঁদের প্রতিদিন নিয়ম করে একটি তরকারি রাঁধতে হত। ... নতুন বৌদের শিক্ষা শুরু হত পান সাজা দিয়ে। তারপর তাঁরা শিখতেন বড়ি দিতে, কাসুন্দি-আচার প্রভৃতি তৈরি করতে। বলাবাহুল্য মৃণালিনী এসব কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ... বৌরা তখনও শিখতেন ঝুনি-রাইয়ের ঝাল কাসুন্দি, আমসত্ত্ব, নারকেল চিঁড়ে তৈরি করতে। মৃণালিনী নানারকম মিষ্টি তৈরি করতে পারতেন। তাঁর মানকচুর জিলিপি, দইয়ের মালপোয়া, পাকা আমের মিঠাই, চিঁড়ের পুলি যারা একবার খেয়েছেন তাঁরা আর ভোলেননি। স্ত্রীর রন্ধন নৈপুণ্যে কবিও উৎসাহী হয়ে মাঝে মাঝে নানারকম উদ্ভট রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করতেন।’
(ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, চিত্রা দেব)
ঠাকুরবাড়ির রান্নার সুনাম বিশ্বজোড়া। দেশির পাশাপাশি বিদেশি রান্নাতেও হাত পাকিয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউয়েরা। সেই প্রসঙ্গেই কথা হল সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্রবধূ শুভ্রা ঠাকুরের সঙ্গে। শুভ্রার মা আবার গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি। ফলে মায়ের সূত্রেও তিনি ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে যুক্ত।
কথায় কথায় শুভ্রা জানালেন, সাধারণ খাওয়াদাওয়ার মধ্যেই একটু নতুনত্ব আনার চেষ্টা হতো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে। শান্তিনিকেতনের পাঠভবন স্কুলে শুভ্রার শাশুড়ি মা, পূর্ণিমা ঠাকুর শিক্ষকতা করতেন। রান্নায় তিনি ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। ঠাকুরবাড়ির রান্না নামে একটি বইও লিখেছেন। শান্তিনিকেতনে আনন্দবাজার নামে একটি মেলার আয়োজন করা হতো প্রতিবছর। সেই মেলায় ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন রান্নার প্রদর্শন করতেন পূর্ণিমা ঠাকুর। মজার কথা হল, এই মেলার আয়োজনে পাঠভবন এবং বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরাও ভীষণভাবে যুক্ত থাকত। অনেক সময় এমনও হয়েছে রান্নায় সাহায্য করতে করতেই তারাও শিখে ফেলেছে সেইসব রান্না। আর এইভাবেই শান্তিনিকেতন জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের ছোঁয়া। কেমন সেসব রান্না? কয়েকটি রন্ধন প্রণালীর বিস্তারিত বিবরণ দিলেন শুভ্রা ঠাকুর।
আদারমাছ
উপকরণ : আড়বা কাতলা মাছ ১ কিলো (পেটির দিকের পিস), পটল, বেগুন, আলু (সব সব্জি মিলিয়ে) ৫০০ গ্রাম, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরে ফোড়ন দেওয়ার মতো, নুন স্বাদ মতো।
প্রণালী : মাছ ভালো করে ভেজে তার থেকে কাঁটা ছাড়িয়ে নিন। কাঁটা ছাড়াতে গিয়ে মাছ যদি একটু ভেঙেও যায় তাহলেও ক্ষতি নেই। পটল, বেগুনও আলুডুমো ডুমো করে কেটে নিন। এবার মাছের তেলে সবজিগুলোও ভেজে তুলে রাখুন। কড়াইতে তেল দিন, তা গরম হলে জিরে ফোড়ন দিন। তার পর মাছ ভাঙা ও সব্জি তাতে একসঙ্গে ভাজুন। অল্প জল ও নুন মেশান। সবটা একসঙ্গে মিশে গেলে নামানোর আগে আদা বাটা দিন। ঝোল গামাখা হলে এবং মাছ ও তরকারির সঙ্গে আদা মিশে গেলে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
বিট বাটা
উপকরণ : বিট ২টো, পোস্ত বাটা ১ বাটি, কালো জিরে ফোড়ন দেওয়ার মতো, নুন ও মিষ্টি স্বাদ মতো।
প্রণালী: বিট ভাপিয়ে নিন। ভাপানো বিট জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর তা কুরিয়ে নিন। এবার কড়াইতে অল্প তেল গরম করে নিন। তাতে কালোজিরে ফোড়ন দিন। তারপর পোস্ত বাটা দিয়ে নাড়ুন। এই মিশ্রণে কোরানো বিট মেশান। স্বাদ মতো নুন ও মিষ্টি মিশিয়ে নেড়ে নিন। সবটা একসঙ্গে মিশে গেলে এবং খুন্তি থেকে ছেড়ে এলে নামিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
পাঁঠার বাংলা
উপকরণ : কচি পাঁঠার মাংস ১ কেজি, ধনে ও জিরে একসঙ্গে বেটে নেওয়া ২ বড় চামচ, দই পরিমাণ মতো, ১টা বড় পেঁয়াজ কুচিয়ে নেওয়া, আলু ৩ টে, জিরে ভাজার গুঁড়ো ওপর থেকে ছড়ানোর জন্য।
প্রণালী : আলু লম্বা লম্বা করে কেটে নিন। মাংসে দই মাখিয়ে সারা রাত রেখে দিন। অল্প ঘিতে পেঁয়াজ ভেজে নিন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে নিন। তাতে মাংস দিয়ে ভাজুন। মাংসে লালচে রং ধরলে ধনে ও জিরে বাটা দিন। নুন ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে কষুন। মাংসের সঙ্গে মশলা মিশে গেলে পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে সাঁতলান। তারপর প্রেসার কুকারে দিয়ে সিটি তুলুন। মাংস মোটামুটি সেদ্ধ হলে প্রেসার কুকারের ঢাকা খুলে আলু দিন। তারপর প্রেসার কুকারের ঢাকা বন্ধ করে আরও দুটো সিটি তুলুন। আলু ও মাংস সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিন। ওপর থেকে জিরে ভাজার গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন। খেয়াল রাখবেন ঝোল যেন বেশি পরিমাণে থাকে।
দইয়ের মালপোয়া
উপকরণ :টক দই ১কেজি, মৌরি গুঁড়ো আন্দাজ মতো, ময়দা প্রয়োজন মতো, চিনি বা গুড় ২ কাপ + ৩ টেবিল চামচ, জল ২ কাপ।
প্রণালী: ২ কাপ গুড় বা চিনি জলের সঙ্গে ফুটিয়ে চিনির রস বানিয়ে রেখে দিন। এরপর দইয়ের সঙ্গে প্রয়োজন মতো ময়দা মিশিয়ে একটা গোলা বা ব্যাটার বানিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন গোলাটা যেন খুব পাতলা না হয় আবার খুব মোটাও না হয়। এই গোলার সঙ্গে তিন চামচ চিনি মিশিয়ে গুলে নিন। তারপর এই গোলাতে মৌরি গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর কড়াইতে তেল গরম করে নিন। একটা গোল হাতার সাহায্যে দই আর ময়দার ব্যাটার গোল করে তেলে ছড়িয়ে দিন। এপিঠ ওপিঠ লাল করে ভেজে তেল থেকে তুলে নিয়ে রসে ফেলুন। রস মালপোয়ায় মিশে গেলে তা তুলে নিন। গরম বা ঠাণ্ডা দু’ভাবেই এই মালপোয়া খাওয়া যায়।