বিদ্যালাভের পক্ষে দিনটি উত্তম। ব্যবসার উন্নতি, পেশায় সুনাম। উপার্জন বাড়বে। ... বিশদ
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, তিন সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়-মঞ্চ দখল করেছেন: ভারতের মাননীয় উপরাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকার, জন্ম ১৯৫১ সালে; লোকসভার মাননীয় স্পিকার ওম বিড়লা, জন্ম ১৯৬২ সালে; এবং মাননীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, জন্ম ১৯৭১ সালে। প্রথমজন জরুরি অবস্থার দিনগুলি (১৯৭৫-৭৭) সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে থাকবেন, দ্বিতীয়জন এই ঘটনাটি সম্পর্কে শুনে
ও পড়ে থাকবেন এবং তৃতীয়জন এখন যে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি সেটার ইতিহাস অধ্যয়ন করে থাকবেন।
১৯৬৭ সাল। ‘গোলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য’ নামক সম্পত্তি সংক্রান্ত এক মামুলি বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট ৬:৫ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয় যে, ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অংশে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি সংসদ খারিজ কিংবা সংক্ষিপ্ত করে দিতে পারে না। কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ‘সম্পত্তি’, ‘স্বাধীনতা’ নয়। তাই বিতর্কটা আদর্শগত হয়ে ওঠে।
অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য
কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল রাজ্য (১৯৭৩) মামলার রায়ে আশঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ছিল না। পুনরায় কেন্দ্রীয় ইস্যুটা ছিল ‘সম্পত্তি’। আদালত কেরল ভূমি সংস্কার আইন বহাল রেখেছে এবং মামলায় পরাজয় হয়েছে আবেদনকারীর। সংবিধানের ‘মৌলিক কাঠামো’ সংরক্ষণসমেত, মৌলিক অধিকারসহ সংবিধান সংশোধনে সংসদের ক্ষমতাও আদালত বহাল রেখেছে। আদালত কর্তৃক উল্লেখিত ‘মৌলিক কাঠামো’র কয়েকটি দৃষ্টান্ত ছিল অবিতর্কিত। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হল সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য—এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কে দোষ দেখতে পারেন? বিতর্ক চলতে থাকে, কিন্তু ‘গোলকনাথ’ যে বিতর্ক উসকে দিয়েছিল আদর্শগত বিচারে তার তুলনায় ছিল পিছিয়ে।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ঘোষিত জরুরি অবস্থার তাৎক্ষণিক কারণটা ছিল, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কহীন একটা ঘটনা। এটা ছিল একটা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন নাকচকরণ। ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ননী পালকিওয়ালা। আমি নিশ্চিত যে সুপ্রিম কোর্টে রেগুলার আপিলের মাধ্যমে রায়টি তিনি বাতিল করতে পারতেন। যাই হোক, একটি গুরুতর চাতুরির মাধ্যমে সাংবিধানিক সংশোধনীসহ এমন কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল, যার পরিণামে ভারত একটি স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে উঠতে পারত।
একমাত্র ত্রাতা ছিল বিচার বিভাগ। সত্যি বলতে, বিচার বিভাগ জনগণকে হতাশ করেছিল। এ ডি এম জবলপুর মামলাটি ছিল সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে চূড়ান্ত বিরূপ একটা আইনি লড়াই। সংবিধানে বর্ণিত স্বাধীনতার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে বিচারপতি এইচ আর খান্না একাই রুখে দাঁড়ান। সৌভাগ্যক্রমে, হাইকোর্টে এমন কিছু বিচারপতি ছিলেন যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায় মানতে অস্বীকার করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই বিচারপতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মধ্যপ্রদেশের জে এস ভার্মা এবং আর কে টাঙ্কা।
দুটি ইস্যুকে গুলিয়ে ফেলা
আমি বিশ্বাস করি যে শ্রীধনকার, শ্রীবিড়লা এবং শ্রীরিজিজু ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস পড়েছেন। শ্রীধনকার দুটি পৃথক ইস্যুকে গুলিয়ে ফেলেছেন। সংবিধানের প্রতিটি এবং যেকোনও বিধান (প্রভিশন) সংসদ সংশোধন করতে পারে কি না এবং সেটা বিচার ক্ষেত্রের পর্যালোচনার এক্তিয়ারের বাইরে কি না—তা একটা বিষয়। ৯৯তম সংবিধান সংশোধনী এবং জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন আইন (ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিশন অ্যাক্ট) বাতিলের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায় যথার্থ ছিল কি না, সেটা একটা ভিন্ন ইস্যু। কেউ ভাবতে পারেন যে—কেশবানন্দ ভারতীর সিদ্ধান্ত যথাযথভাবেই নেওয়া হয়েছিল ‘এবং’ এনজেএসি মামলাটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ভুলভাবে। আইনের অনেক পণ্ডিতই এই মত পোষণ করেন।
দুর্ভাগ্যবশত, শ্রীধনকার যে বিতর্ক তুলেছেন, তাতে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের ধারণা সম্পর্কে অনেক সমালোচনার অবকাশ উপস্থিত হয়েছে। যে কলেজিয়াম সিস্টেমের তিনি বাতিলই
চান, সেই কলেজিয়াম সিস্টেমে সরকারের জন্য
একটি আসনের জোরালো দাবি সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়ে শ্রীরিজিজু বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন! শঙ্কার ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে যে, সংবিধানের ‘খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য’ একটি অশুভ পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্নের উত্তর দিন
ধরা যাক, সংবিধানের উপর সংসদীয় আধিপত্য আমরা মেনে নিই। তখন আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে হবে:
একটি রাজ্যকে ভেঙে যদি একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয় তাতে কি আপনি রাজি হবেন (যেমন জম্মু ও কাশ্মীর)?
বাকস্বাধীনতা, ভারতের যেকোনও অংশে বসবাসের স্বাধীনতা, এবং যেকোনও পেশার অনুশীলন কিংবা যেকোনও ব্যবসা করার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হলে আপনি কি মেনে নেবেন?
আপনি কি এমন একটি আইন অনুমোদন করবেন—যা নারী ও পুরুষে বৈষম্য করবে; হিন্দু এবং অহিন্দুকে আলাদাভাবে দেখবে; অথবা এলজিবিটিকিউ+ এর অধিকার নাকচ করবে?
মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ, ইহুদি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য সংবিধানে যেসব অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেগুলো যদি বিলুপ্ত হয় আপনি কি তার সঙ্গে সহমত হবেন?
যদি সপ্তম তফসিল থেকে তালিকা ২ (রাজ্য তালিকা) বাদ দেওয়া হয় এবং সমস্ত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদে কেন্দ্রীভূত হয়, তবে কি আপনি একমত হবেন?
সমস্ত ভারতীয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে আপনি কি তাতে সায় দেবেন?
আপনি কি এমন একটি আইন অনুমোদন করবেন, নির্দোষ প্রমাণিত না-হওয়া পর্যন্ত, যে আইনে প্রত্যেক ‘অভিযুক্ত’ ব্যক্তিকে ‘দোষী’ বলে ধরে নেওয়া হবে?
আজ সংসদ এই ধরনের কিছু আইন তৈরি করতে পারে না। এমন আইনগুলি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাসাপেক্ষ। বিপরীতক্রমে, ‘সংসদীয় আধিপত্য এবং বিচার বিভাগীয় সহনশীলতা (পার্লামেন্টারি সুপ্রিমেসি অ্যান্ড জুডিশিয়াল ফরবিয়ারেন্স)’-এর মতবাদের অধীনে এই ধরনের আইন আদালত পর্যালোচনা কিংবা বাতিল করতে পারে না।
রায়ের পঞ্চাশ বছর পরে, ‘কেশবানন্দ ভারতী’-কে একটি ‘ভূত’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ভারতকে তাড়া করে ফেরে এবং আমাদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়। আমি এটাকে একজন দেবদূত বলে বিশ্বাস করি, যে দেশ, সংবিধান এবং জনগণকে রক্ষা করে।