বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
এস্টিমেট কিংবা বিচিত্র ভাণ্ডার
অনুমান এলোমেলো হতে পারে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিন বা চার মাস একটি দীর্ঘ সময়। ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং তার দ্রুত বিস্তারের কথা কেউই অনুমান করতে পারেনি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেটের সমস্ত সংখ্যাই শেষমেশ আর কার্যকরী থাকল না। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে যে অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক আঘাত বিশ্বের উপর নেমে এসেছিল তাতে ভারতসহ প্রতিটি দেশের বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অনুমানগুলি বানচাল হয়ে গিয়েছিল।
গত ৬ জানুয়ারি এনএসও-র তরফে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতি থেকে কিছু পাঠ এবং সঙ্কেত পাওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে প্রবেশের আগে, ১ জানুয়ারি, ২০২৩-এ প্রকাশিত আমার বিশেষ নিবন্ধে যে উপসংহার আমি টেনেছিলাম তাতে ফের চোখ রাখতে চাই (‘২০২৩ সালে যে অর্থনীতি আমরা গ্রহণ করব’, বর্তমান)। সরকারি এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩-২৪ সালের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি আমি নির্ধারণ করেছি। আমার পরামর্শ হল, আমরা ফার্স্ট অ্যাডভান্স এস্টিমেটস বা এফএই’র দিকে নজর রেখে জানতে চাইব, ওই সিদ্ধান্তগুলি সংশোধনের দরকার আছে কি না।
কিছু উজ্জ্বল দিক রয়েছে: নমিনাল জিডিপি (১৫.৪ শতাংশ) বাজেট এস্টিমেটের (১১.১ শতাংশ) থেকে বেশি হবে। উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো রাজস্বের পরিমাণ। অতএব সরকারি কোষাগারে বেশি অর্থ যোগ হতে পারে। এর ফলে ফিসকাল ডেফিসিট বা রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা অুযায়ী ৬.৪ শতাংশে আটকে রাখা সহজ হবে।
ব্যয়নির্ভর বৃদ্ধি
তবে, আছে কিছু আশঙ্কার দিকও। এফএই-র কোনও কিছুই, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বুলেটিনের ভিত্তিতে গৃহীত আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারবে না। আমার বক্তব্য, ‘ঝুঁকির ভারসাম্য (ব্যালান্স অব রিস্ক) ক্রমশ নেতিবাচক আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ঝুঁকছে এবং উদীয়মান বাজার (এমার্জিং মার্কেট) অর্থনীতিগুলিকে মনে হচ্ছে আরও নড়বড়ে।’ ব্যক্তিগত ব্যয়ই (জিডিপির ৫৭.২ শতাংশ) চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির চালিকা শক্তি হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে আগামীতে, নাছোড় মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাপক বেকারত্বের কারণে ব্যক্তিগত ব্যয় ধাক্কা খাবে। বৃদ্ধির অন্যান্য চালিকা শক্তিগুলি দুর্বল। প্রথমত, বহুচর্চিত সরকারি ব্যয় (জিডিপির ১০.৩ শতাংশ) পূর্ববর্তী দু’বছরের তুলনায় কম হবে। দ্বিতীয়ত, ডব্লুটিও বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দার আশঙ্কার কথা শুনিয়ে রেখেছে। সেই অনুযায়ী, রপ্তানি (জিডিপির ২২.৭ শতাংশ) ক্ষেত্রও আশাপ্রদ নয়।
উদ্বেগের অন্য বিষয়টি হল আমদানি ক্ষেত্র।
এবার আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির ২৭.৪ শতাংশ। খেয়াল রাখতে হবে, ২০২০-২১ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল জিডিপির ১৯.১ শতাংশ। সংখ্যাটি ২৩.৯ শতাংশ ছিল ২০২১-২২ সালে। অর্থাৎ আমদানির বহর এবার একলাফে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে।
রপ্তানির পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে না বাড়িয়ে উচ্চহারে আমদানি করা হচ্ছে। এই ঘটনা এটাই ইঙ্গিত করে যে আমরা ভোগ্যসামগ্রী আমদানি করছি। এই ঘটনার তিনটি খারাপ দিক আছে। (এক) ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় হারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। (দুই) বাড়িয়ে দিতে পারে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি। (তিন) মূলধন ভারত থেকে অন্য দেশে বেরিয়ে যেতে পারে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে দুটি উদ্বেগজনক সংখ্যা হল—খনি ও খাদান ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় মাত্র ২.৪ শতাংশ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে ১.৬ শতাংশ। বৃদ্ধির এই দুটি হার ২০২১-২২ সালে নথিভুক্ত হারের চেয়ে অনেকটাই কম। ২০২২-২৩ সালে নির্মাণ শিল্পে বৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৯.১ শতাংশ। তাহলে এটাও ২০২১-২২ সালে নথিভুক্ত ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধির থেকে নেমে আসবে। এফএই প্রকাশের একসপ্তাহ পরেও, অর্থমন্ত্রী কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রীরা ব্যাখা করেননি অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলির এই হতাশাজনক পারফরম্যান্স কেন?
উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে বেকারত্ব
বেকারত্ব বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটাও ভালো নয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সেরা ক্ষেত্রগুলি হল কৃষি, খনি ও খাদান, ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশন এবং বাণিজ্য, হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ প্রভৃতি। শেষোক্ত (১৩.৭ শতাংশ) ক্ষেত্রটি ছাড়া বাকিগুলিতে বৃদ্ধি ঘটবে অল্পস্বল্প। বেকারত্ব সম্পর্কে সিএমআইই তাদের যে এস্টিমেট জানিয়েছে, এই সংখ্যাগুলি সেটাতেই সিলমোহর দিচ্ছে (গত ১৩ জানুয়ারি সর্বভারতীয় বেকারত্বের হার ছিল ৮.৩ শতাংশ)। ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের আসল কারণগুলি দূর করার পরিবর্তে সরকার বেকারদেরকেই হেয় করছে।
উৎপাদনের দিক থেকে, ২০২২-২৩ সালের এফএই’তে প্রদত্ত সংখ্যাগুলি হতাশাজনক। ২০২০-২১ মহামারীর বছরের তুলনায় ২০২১-২২ সালে শতাংশের পরিবর্তন হয়েছিল। এটা মেনে নিয়েও বলতে হবে যে, ২০২২-২৩-এ প্রায় সমস্ত প্রধান ক্ষেত্রে শতাংশের যে পরিবর্তন নজরে এসেছে তাতে অর্থনীতির মন্থরগতির দিকটিই পরিষ্কার হয়। যেমন চাল, অপরিশোধিত তেল এবং সিমেন্টের উৎপাদন। প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরগুলিতে পণ্য চলাচলের বৃদ্ধির হার গতবছরের তুলনায় কমই হবে। নিট টন কিলোমিটার এবং যাত্রী কিলোমিটারের হিসেবে রেলওয়েতেও নথিভুক্ত হবে কম বৃদ্ধির হার। শিল্প উৎপাদনের সূচক (আইআইপি) খনি (৪.০ শতাংশ), ম্যানুফ্যাকচারিং (৫.০), বিদ্যুৎ (৯.৪) এবং ধাতব খনিজ (-৬.৫) ক্ষেত্রে একক সংখ্যার তলানিতে নেমে আসবে।
ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলবে। খাদ্যসামগ্রীর পাইকারি মূল্য সূচক (ডব্লুপিআই) হবে ৯.৬ শতাংশ। সংখ্যাটি ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের পণ্যের জন্য হবে ৭.৬ শতাংশ এবং সমস্ত পণ্যের জন্য ১২.৩ শতাংশ হবে।
২০২৩-২৪ সালের বাজেটে, এই দুর্বলতাগুলির মোকাবিলা কীভাবে করবেন অর্থমন্ত্রী? কোনও বাগাড়ম্বরে অর্থনীতির হাল ফিরবে না কিংবা মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে যে দুর্দশা উপস্থিত হয়েছে উপশম হবে না তারও। আমাদের প্রয়োজন সুস্পষ্ট নীতি এবং দৃঢ় পদক্ষেপ। আসুন, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখের জন্য অপেক্ষায় থাকি।