বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ধরা যাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম রাহুল গান্ধী। সেই সময় পূর্ব লাদাখের বিস্তীর্ণ এলাকায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ঢুকে পড়ল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একঝাঁক জওয়ান জীবন বিপন্ন করে এবং আত্মবলিদান দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের একাংশকে তাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু সেই ঘটনার পর এক বছর ধরে মোট ১৩ বার ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী স্তরের বৈঠক সত্ত্বেও চীন নিজেদের সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নিতে নারাজ হল। বৈঠক ব্যর্থ । লাদাখে চীনের সেনাবাহিনী ভারতের নাকের ডগায় বসে রইল। এবং চীন কখনও অরুণাচল প্রদেশ, কখনও উত্তরাখণ্ডে এসে ভারতকে চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছে। বৈঠকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না চীন স্পষ্ট দাদাগিরি দেখিয়ে। আজ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্ব ঠিক কী করতেন যদি প্রধানমন্ত্রীর নাম হতো রাহুল গান্ধী? আর আজ সেই ভারতীয় জনতা পার্টির চীনের এই আচরণ নিয়ে ভূমিকা কী? আজ তারা নীরব কেন? ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বসে বসে অপমানিত হওয়ার তুলনায় যুদ্ধ করা কি অন্তত কিছুটা সম্মানের নয়? আজ চীন যখন তখন ভারতকে হুমকি হুঁশিয়ারি দেয় কেন? যখন ইচ্ছে করছে ঢুকে পড়ছে কেন? তাহলে কি চীন বুঝে গিয়েছে যে, ভারত কোনওদিনই আমাদের পাল্টা জবাব দিতে পারবে না? গত বছর ভারত সরকার চীনের বহু পণ্য বয়কট করেছিল। আজ এক বছর পর খোঁজ নিয়ে দেখা যাক সেই বয়কট কতটা অব্যাহত আছে। আর এই এক বছরে ভারতের আত্মনির্ভরতার কতটাই বা অগ্রসর হয়েছে? সরকার একটি শ্বেতপত্র পেশ করুক যে, এবার থেকে কোন কোন পণ্য আমরা আর কোনওদিন চীন থেকে আমদানি করব না। কোন কোন পণ্য গত এক বছর ধরে সম্পূর্ণ মেড ইন ইন্ডিয়ারই ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগে চীনের উপর নির্ভরশীল ছিল? সেটা জানতে পারলে আমাদের গর্ব হবে!
ধরা যাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরকম সময় পেট্রলের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ডিজেলের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলবে শীঘ্রই। নিত্যব্যবহার্য খাদ্যপণ্যের দাম আকাশ স্পর্শ করেছে। সরকারি চাকরির সংস্থান ক্রমেই কমছে। সরকার রীতিমতো চৈত্র সেল, ফেস্টিভ্যাল অফার অথবা অ্যামাজন ডিসকাউন্ট উইকের মতো করে সরকারি সংস্থা, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিমান বিক্রির পসরা সাজিয়ে বসেছে। সরকারি কর্তা জোর গলায় বলছেন, সরকারের হাতে গুটিকয়েক ব্যাঙ্ক থাকবে। সবই বিক্রি করা হবে। সরকারের হাতে কিছুই থাকবে না। সরকার কোনও সংস্থা পরিচালনা করবে না। সরকার ব্যাঙ্কের দায়িত্ব নেবে না। সেনাবাহিনীর অস্ত্র, সামরিক যন্ত্রাংশ, উপকরণ এসব এবার থেকে যে কোনও বেসরকারি কোম্পানিই উৎপাদন করতে পারবে। মহাকাশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে সরকার বেসরকারি হাতে দিয়ে দেবে। সরকারি চাকরির সুযোগ ক্রমেই কমছে। আমাদের জানতে ইচ্ছা করছে, তাহলে ভারত সরকার নামক একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আগামী দিনে ঠিক কী করবে? তাদের কী কী কাজ বাকি রইল? ব্যাঙ্কের সুদের হার তলানিতে এসে ঠেকেছে। সরকারকে মানুষ বছর বছর ট্যাক্স দেবে, ভোট দেবে এবং সব কথায় সায় দেবে। কিন্তু বিনিময়ে ভাঙা রাস্তা পাবে, ট্রেনের ওয়েটিং লিস্ট পাবে, ওলা উবের অটোর যথেচ্ছাচার পাবে, ওষুধের আকাল পাবে, মেডিক্লেমের লুটপাট পাবে, কর্পোরেটের সর্ষের তেলের দামের ছ্যাঁকা পাবে, রাজনীতিবিদদের শূন্যগর্ভ লেকচার পাবে। অর্থনীতির মন্দা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, একটি সাধারণ পরিবারও বলতে পারবে না, তাদের আয় অথবা সঞ্চয় বেড়েছে। এরকম একটি অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে, ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক ও নেতৃত্ব কী করতেন? তাদের আক্রমণের লক্ষ্য কে হতেন?
কাশ্মীর আবার এক নতুন অগ্নিবলয়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে। চীন চতুর্দিক থেকে ভারতকে চাপ দিচ্ছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই চীনের অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত। এই রাষ্ট্রগুলিতে চীনের প্রভাব অপরিসীম। অর্থনীতি কিছুতেই ঘুরে দাঁড়ানোর পন্থা খুঁজে পাচ্ছে না। জিনিসপত্র অগ্নিমূল্য। রান্নার গ্যাস আকাশছোঁয়া। ব্যাঙ্ক ডাকঘরের সুদ কম। বেকারত্ব এবং অনাহারে ভারত অন্য রাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্ক, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প, আয়কর, সরকারি স্কিম অথবা নতুন কাজের সুযোগ—সাধারণ নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে কোনও সহায়তাই সরকারের থেকে পাচ্ছে না। মাঝখানে রুল টানা একটি সাদা পৃষ্ঠার একদিকে এই ফ্যাক্টরগুলিকে লিখে অন্য পাশে লিখুন— সফল ও ব্যর্থ! কোনটায় টিক দেবেন? প্রধানমন্ত্রীর নাম যাই হোক। কাল্পনিকভাবেও যদি ধরে নেওয়া যেত যে, এরকম ফ্যাক্টরগুলি একটি দেশে উপস্থিত হয়েছে, তাহলে সেই সরকারকে সাধারণভাবে সফল বলা হবে? নাকি ব্যর্থ? আর এসব তো কল্পনা নয়, সবটাই বাস্তব। আমরা তো ২০২১ সালে বসে আছি! ১৯৬২ সালেও নয়, আবার ২০১০ সালেও নয় যে, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কিংবা ড. মনমোহন সিংকে দোষ দেব! তাই না?