দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন বছর দু’য়েক দেরি। তা সত্ত্বেও এখন থেকেই সেখানে তৃণমূলকে জব্দ করতে বিজেপি আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে। কারণ বাংলার নির্বাচন দেখে বিজেপি বুঝেছে, কংগ্রেস বা সিপিএম নয়, এই মুহূর্তে তাদের কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল। তাই অঙ্কুরেই বিনাশের চেষ্টা। বিজেপির ত্রিপুরা দখলের পর প্রায় ৪২ মাস অতিক্রান্ত। যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসেছিল, তার অধিকাংশই বিপ্লব দেবের সরকার পূরণ করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও বিজেপিকে বিব্রত হতে হয়নি। কারণ বিজেপি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলায় ব্যর্থতার নজির গড়েছে সিপিএম। তাই বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলেন বিপ্লব দেব। কিন্তু তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রাখতেই তাঁর গদি টলমল। তৃণমূলকে ঠেকাতে না পারলে তাঁর হালও যে বিজয় রুপানির মতো হবে, সেটা বুঝেছেন বিপ্লববাবুও। তাই অভিষেক-মোকাবিলায় নামিয়ে দিয়েছেন প্রশাসনকে।
তবে, অভিষেককে আটকাতে গিয়ে বিজেপি আরও বেশি করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। আগরতলায় তাঁর পদযাত্রার আবেদন নাকচ করেছে ত্রিপুরা পুলিস। তাদের যুক্তি, আগেই আগরতলায় অন্য রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালনের অনুমতি নিয়েছে। তাই পদযাত্রায় অনুমতি নয়। তবে, বঙ্গ বিজেপির সভাপতির যুক্তি অন্যরকম। তাঁর কথায়, ত্রিপুরার সরকার আইন মানে। তাই করোনা বিধির জন্য পদযাত্রার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আর তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, বিজেপি তৃণমূলকে ভয় পাচ্ছে। তাই পদে পদে বাধা দিচ্ছে। তৃণমূলের পদযাত্রার অনুমতি বাতিলের প্রকৃত কারণ যাই হোক না কেন, বিজেপির এই পদক্ষেপে লাভ তৃণমূলেরই। বিশেষ করে অভিষেকের। বিজেপি নেতৃত্ব যত ইডি দিয়ে তাঁকে দমানোর চেষ্টা করছে, ত্রিপুরা দখলের জন্য তাঁর জেদ ততই বাড়ছে। পিছু হটা তো দূরের কথা, আরও বেশি আক্রমণাত্মক হচ্ছেন। এসব দেখে অনেকে বলছে, এক্কেবারে ‘পিসির ধাত’ পেয়েছে।
বিজেপি যে অভিষেককে ভয় পাচ্ছে, তা জলের মতোই পরিষ্কার। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক যদি সত্যিই রাজনীতিতে ‘নাবালক’ হতেন তাহলে বিজেপি তাঁকে কিছুতেই এত গুরুত্ব দিত না। ত্রিপুরায় তাঁকে আটকানোর জন্য পার্টি ও প্রশাসন এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ত না। আর সেটাই অভিষেকের ‘ভালো লাগা’র কারণ। তবে, সে কথা তিনি গোপন করেননি। তাই ‘ইডি-সন্ত্রাসে’র মুখে দাঁড়িয়েও বিজেপির উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘ইয়ে ডর হামে আচ্ছা লাগা’।
ত্রিপুরা একটা ছোট্ট রাজ্য। লোকসভার আসন মাত্র দু’টি। এহেন ত্রিপুরাকে নিয়ে বিজেপির কেন এত তৎপরতা, কেন এত উৎকণ্ঠা? উত্তরটা খুব সহজ, দিন যত যাচ্ছে দেশজুড়ে বিজেপির অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের কাছে প্রতিটি আসনই দিন দিন অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বিজেপি। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে ‘ডবল ইঞ্জিনে’র সরকার আছে, সেখানে বিপদটা বেশি। সেসব রাজ্যে শুধু সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে না, দলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খেয়োখেয়ি।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদিজির নেতৃত্বে পাহাড়প্রমাণ সাফল্যের পরেও বিজেপি একের পর এক রাজ্যে হেরেছে। বিহারে পেয়েছে ‘আংশিক’ সাফল্য। আংশিক, কারণ সেখানে আসন কম পেলেও নীতীশ কুমারের কৃতিত্ব অনেকটাই। তাই মোদি-অমিত শাহ জুটি মমতার হাত থেকে বাংলা ছিনিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল। সর্বশক্তি নিয়ে বাংলা দখলে ঝাঁপিয়ে ছিল। আর সেটাই নরেন্দ্র মোদির জন্য ‘কাল’ হয়েছে। মমতার কাছে ‘লেজেগোবরে’ হওয়ার পর বিজেপি বুঝেছে, ‘মোদি ম্যাজিক’ই ভ্যানিস হয়ে গিয়েছে। তাই ‘গুজরাত লবি’ কাযর্ত চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ রাজনীতিতে সাফল্যই শেষ কথা। নির্বাচনে জয় এনে দিতে না পারলে নেতার দাপট তখন কর্মীদের কাছে হয়ে যায়, আস্ফালন।
সামনেই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেস এবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সামনে রেখে ভোটে লড়বে। গতবারই ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর প্রিয়াঙ্কাকে কংগ্রেসের মুখ করে নির্বাচন লড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু, কংগ্রেস তা শোনেনি। তার ফলও কংগ্রেসকে ভোগ করতে হয়েছে। এবার সম্ভবত সেই ভুল কংগ্রেস করবে না। আর পিকের কথা শুনে নির্বাচন লড়লে ফল কী হয়, বাংলা তার প্রমাণ। তাই উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল কী হবে, তা বলা বেশ কঠিন। তবে, সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলেও যোগী আদিত্যনাথ কিছুতেই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহকে কৃতিত্বে ভাগ বসাতে দেবেন না। উত্তরপ্রদেশে মোদি নয়, যোগীই বিজেপির পোস্টার বয়।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন বিজেপির কাছে অবশ্যই অগ্নিপরীক্ষা। তবে, গুজরাতের ভোটই মোদি-অমিত শাহ জুটির ‘অ্যাসিড টেস্ট’। লোকসভা নির্বাচনের আগে গুজরাত বিধানসভার ভোট। সেখানে বিজেপি খারাপ ফল করলে সেই ধাক্কা মোদি ও অমিত শাহ কিছুতেই সামলাতে পারবেন না। লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে ধস নামবে। দলের মধ্যে জোরদার হবে ‘দেশের নেতা’ বদলের দাবি। সম্ভবত সেকথা মাথায় রেখে এখন থেকেই তাঁরা ঘর গোছানোর কাজে মন দিয়েছেন। বিজয় রুপানিকে সরিয়ে দিয়ে প্রথমবার বিধায়ক হওয়া ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করা তারই প্রথম পদক্ষেপ।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বদল বলে দিচ্ছে, বিজেপি নেতারা যতই ‘গুজরাত মডেল’ বলে গলা ফাটান না কেন, সেখানে সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। চড় চড় করে বাড়ছে ‘অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর’। এমনিতেই গত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্বল কংগ্রেসের কাছে হারতে হারতে বেঁচে গিয়েছিল। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ। করোনা মোকাবিলায় ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা মানুষের ক্ষোভের আগুন ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। তাই মুখ্যমন্ত্রী পদে নতুন মুখ এনে স্বপ্নের জাল বুনে মানুষকে ফের বোকা বানানোর চেষ্টা।
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের মুখ্যমন্ত্রী বদলে জনগণের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার এই কৌশল গুজরাতে সফল হওয়া বেশ কঠিন। কারণ মানুষের ক্ষোভের মূলে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক জনবিরোধী নীতি এবং লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। তাই ক্ষোভ দূর করতে হলে ঘটাতে হবে নীতির বদল, মুখ্যমন্ত্রী নয়। গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী বদলে হয়তো তাঁরা পাটীদার সমাজকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন, কিন্তু মানুষকে খুশি করা যাবে না। জামা কাপড় বদলে রোগীর ঘা সারানো যায় না। তাতে ঘা আরও গভীরে ছড়িয়ে যায়। বিজেপির দিল্লির নেতারা মুখ্যমন্ত্রী বদলে সেটাই করছেন। মোদিজি, মুখ্যমন্ত্রী না বদলে নীতিটা বদলান। শিল্পপতিদের ছেড়ে এবার জনগণের দিকে তাকান।
সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেও যে আকাশ ছোঁয়া যায়, ফের তা প্রমাণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাম এখন বিশ্বের ১০০জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায়। টাইম ম্যাগাজিনের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নেওয়া তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ। দিলীপ ঘোষের কথায় যা মানুষকে ‘ভিখারি’ বানানোর চেষ্টা, টাইম ম্যাগাজিনের চোখে তা ‘মানবদরদি’। তিনি সমাজ বদলের কারিগর। তাঁর ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার স্বীকৃতি এটা।
টাইমের প্রভাবশালীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদিও। তাঁর স্থান ১২তম। আর মমতা? রয়েছেন ঠিক তার চারজন পরেই। ক্ষমতায়, পদমর্যাদায়, দাপটে, প্রভাবে যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু টাইমের সমীক্ষায় ফারাকটা তেমন কিছু নয়, বরং খুব কাছাকাছি। পৃথিবীর বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘টাইম’ জানিয়ে দিল, এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা ভারতবর্ষের একজনেরই আছে। নাম তাঁর মমতা।