বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সম্প্রতি দু’-তিন সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ব্যাপক হারে। তার ফলে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা শতাব্দীতে একবারই ঘটে। পরিস্থিতি বুঝে প্রশাসন সবধরনের সম্পদ একত্র করে এগিয়ে চলেছে। বিপজ্জনক এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। সঙ্গে আছে অসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীও। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী। আরও আছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এএফএমএস, ডিআরডিও, ওএফবি, এনসিসি। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও একযোগে মানুষের দুর্দশা লাঘব করার কাজে ব্রতী হয়েছে। স্বাস্থ্যবিভাগের অতিরিক্ত কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চালু হয়েছে কোভিড সংক্রামিতদের জন্য নতুন নতুন ব্যবস্থাপনা। বন্ধু রাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে অক্সিজেন আনছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান ও নৌ বাহিনীর জাহাজগুলি। তারপর সেই অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশেষ আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে আমি নির্দেশ দিয়েছি অসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করতে। সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা সম্পর্কে জনসধারণের মনে বিশেষ আস্থা রয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিভৃতাবাস ও হাসপাতাল গড়ে তুলতে হয়। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং মেরামত করতে হয়। বাহিনীর কমান্ডাররা যাতে সেসব করতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করেছি। এই আর্থিক ব্যবস্থাটি তিন বাহিনীর চিকিৎসা পরিষেবার মহানির্দেশকের আপৎকালীন আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন সংস্থা, দিল্লি, লখনউ, বেঙ্গালুরু এবং পাটনায় কোভিড হাসপাতাল গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে এধরনের আরও হাসপাতাল নির্মাণের অনুরোধ এলে সেগুলি বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সামরিক হাসপাতালের ৭৫০টি বেড সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
এবার আসছি ডিআরডিওর হাসপাতাল প্রসঙ্গে । ডিআরডিও নতুন দিল্লি ও লখনউতে ৫০০ বেডের এবং আমেদাবাদে ৯০০ বেডের হাসপাতাল তৈরি করেছে। মুজফফরপুর এবং বারাণসীতেও কোভিড হাসপাতাল তৈরির কাজ জোর কদমে এগিয়ে চলেছে। পাটনার ইএসআইসি হাসপাতালটিকে ডিআরডিও ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মীর জোগান দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসা পরিষেবা শাখা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠিয়েছে। ওইসঙ্গে পাঠানো হয়েছে প্যারা মেডিকেল কর্মীদেরও। আমার মন্ত্রক, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শর্ট সার্ভিস কমিশন্ড ডাক্তারদের কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। তার ফলে অতিরিক্ত ২৩৮ জন ডাক্তারকে এই প্রক্রিয়ায় পাওয়া গিয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদের এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের।
সেনাবাহিনীর হাসপাতালগুলিতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ বর্ধিত হয়েছে। ভারতীয় সেনা বাহিনী কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য অসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করছে। লখনউ, প্রয়াগরাজ, ভোপাল, জব্বলপুর ও বার্মেরে ১০০টি বেড, মধ্যপ্রদেশের সাগৌড় ও গোয়ালিয়রে ৪০টি বেড এবং নামকুমে ৫০ বেডের বিশেষ হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেবার জন্যও মন্ত্রকের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনীর তরফে যে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, তার কথা উল্লেখ করতে চাই। চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত অক্সিজেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেবার জন্য বিমান বাহিনীর ৫০টি বিমানের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। নৌ বাহিনীর জাহাজগুলি বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাচ্ছে। আগ্রায় সাধারণ নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য দু’টি হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্টের মেরামতির কাজ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে মন্ত্রকের তরফে। চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য ৫০০টি প্ল্যান্ট নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে ডিআরডিও। এই কাজটি হচ্ছে পিএম কেয়ার্স তহবিলের টাকায়। তিনমাসের মধ্যে বিভিন্ন প্ল্যান্টের কাজ শেষ হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিও অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে তুলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করছে। উদ্দেশ্য, স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলিতে দ্রুত অক্সিজেন পাঠানো।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির কথাও আলাদাভাবে উল্লেখ করতে চাই। হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড এবং অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডসহ মন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে একযোগে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্রতী রয়েছে। দেশে ৩৯টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। তাদের এলাকায় রয়েছে ৪০টি হাসপাতাল। ওইসব হাসপাতালে বাইরের লোকেদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী রাজ্য সরকারগুলিকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে সাহায্য করছে। সর্বতোভাবে সাহায্য করছে টিকাকরণেরও কাজে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতি ভারত মোকাবিলা করছে ঐক্যবদ্ধভাবে। সশস্ত্র বাহিনী দেশকে জয়ী করতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। বাহিনীর সদস্যদের রয়েছে অদম্য মনোভাব। যে-কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতায় তাঁরা পূর্ণ। এই ভয়ানক যুদ্ধে এটাই হচ্ছে ভারতের সুবিধা।