কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
টেনিদা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘আমার বাজার গেল রে হাবুল। আমার থেকেও একজন বড় প্লেয়ার এসে গেছেন।’
ক্যাবলা বলল, ‘তোমার গুল্পকেও টেক্কা দেয়? তিনি কে গো টেনিদা?’
টেনিদা শুধু বলল, ‘আবার নতুন করে ভাবতে হবে? এমন একজন এসে গেছেন, যিনি পুকুরে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ছেলেবেলায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে রেডিওয় নাকি রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন। তাঁর কাছে সাতের দশকে কম্পিউটার প্রিন্ট মার্কশিটও আছে। হয়তো এরপর শুনব উনি গান্ধীজির ডাণ্ডি অভিযানের সঙ্গী ছিলেন, নেতাজির সঙ্গে সাবমেরিন যাত্রাতেও ছিলেন, শিকাগোয় স্বামীজির বক্তৃতার সময় দর্শকাসনে ছিলেন। যেভাবে খাপ খুলছেন, কোথায় গিয়ে থামবেন, কে জানে? এমন করলে আমার ইজ্জত কোথায় থাকে?’
হাবুল বলল, ‘তুমি কইতাস, নতুন টেনিদা আইয়া পড়সে?’
টেনিদা ব্যাজারমুখে বলল, ‘তাই তো মনে হচ্ছে। এভাবে উনি চালিয়ে গেলে আমার বাজারটা কোথায় থাকবে বলতো?’
প্যালা বলল, ‘ভয় পেও না, তোমার সঙ্গে আমরা আছি।’
টেনিদা মুখটা ছোট করে বলল, ‘ওঁরও অনেক শক্তি। সঙ্গে অনেকগুলো স্বামী ঘুটঘুটানন্দ আছে, অনেকগুলো শেঠ ঢুণ্ডুরাম আছে। সুতরাং বিদায় পটলডাঙার টেনিদা। তোমার দিন শেষ। ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক!’
টেনিদা এতদিন আনন্দে এই কথাটা বলত। বোঝা যাচ্ছে ঘোর অস্তিত্বের সঙ্কট থেকেই এখন মহা দুঃখে এমন কথা বলল।
প্রথম পর্ব
সমস্ত ড্রামাবাজির মধ্যে মিটে গিয়েছে ভোটের প্রথম পর্ব। শুরু দ্বিতীয় পর্ব। শুরু হয়েছে পর্দার আড়ালে ভয়ঙ্কর খেলা। বাংলার ক্ষমতা দখল
করতে খেলছে কেন্দ্রীয় সরকার। খেলছে আজ্ঞাবাহী প্রশাসন। নিরপেক্ষতার যুক্তিতে নির্বাচন কমিশন যেসব প্রশাসনিক কর্তাকে সরিয়ে দিল এবং
পরিবর্তে মনমতো যাঁদের বসাল, তাঁদের নিরপেক্ষতা কি সত্যিই একশো শতাংশ? বিজেপি এখানে সফল হলে ভবিষ্যতে এঁরা কি সরকারের দ্বারা পুরস্কৃত হবেন? সারা বাংলার জনগণের মুখে আজ এই প্রশ্ন। এঁদের নিরপেক্ষতার বিচার করবেন কে এবং কোন নিরিখে? কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতা খোলস
ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। প্রথম দফার ভোটে কয়েকটি বুথ থেকে অভিযোগ উঠেছে, জোড়াফুলের
বোতাম টিপলে চলে যাচ্ছে পদ্মফুলে। আগামী কয়েক পর্যায়ের ভোটে এই অভিযোগ বাড়বে না তো? কিংবা বাইরে থেকে বুথ এজেন্ট আনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা কি সত্যিই প্রশ্নাতীত! তবে কি উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত থেকে লোকেরা এসে এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদ নিয়ে ভোট করবেন? উড়ছে কোটি কোটি টাকা। অন্ধ বিবেক। সাবাস নিরপেক্ষতা!
আজ দ্বিতীয় দফার ভোট। সকলের নজর আজ হাই-ভোল্টেজ নন্দীগ্রামের দিকে। অভিযোগ, বাইরের রাজ্য থেকে অনেক লোক কিন্তু নন্দীগ্রামে ঢুকে পড়েছে। অমিত শাহের রোড শোয়ে তাদের দেখা গিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে শাড়ি বিলিয়ে, টাকা ছড়িয়ে রোড শোয়ে ভিড় বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সেই জনশক্তিকে কি সত্যিই ভোট বাক্সে টেনে আনা যায়? সেই কাজটাকে সহজ করতে নাকি নন্দীগ্রামে হাজির বহিরাগতরা। বারুদের স্তূপ হয়ে রয়েছে নন্দীগ্রাম।
বাংলার মানুষ দেখছেন, একসঙ্গে সবাই হাত মিলিয়ে খেলতে নেমেছেন এক মহিলাকে সিংহাসন থেকে ছুঁড়ে ফেলার জন্য। নেমে পড়েছেন সারা দেশ থেকে জুটিয়ে আনা এক অক্ষৌহিণী সেনা। বাংলায় এত মধু কীসের? বাংলায় ক্ষমতা দখল করতে না পারলে বিজেপির আটকে যাচ্ছে কোন কোন কাজ? এসব পর্যালোচনা করার শেষ সুযোগ আমাদের সামনে।
ধর্মীয় মেরুকরণ, ভাষাভিত্তিক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে ভোট লোটার ফন্দিকে যদি আমরা আটকাতে না পারি, শুরু হয়ে যাবে বাঙালির পক্ষে এক অন্ধকার যুগ। নিজভূমে পরবাসীর মতো বেঁচে থাকতে হতে পারে। কিছুদিন আগে অবাঙালি অধ্যুষিত বড়বাজারে দাঁড়িয়ে এক বাঙালিকে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য নিগৃহীত হতে হয়েছিল। এই একটি ঘটনাই ভাবাচ্ছে, আগামী দিনে আমরা বাংলায় দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতাটুকু পাব তো? আমাদের পিছনে এখন সিএএ-জুজু রয়ে গিয়েছে। সেই ভয়ঙ্কর আইনটা এখনও শীতঘুমে। এখানে গেরুয়া ঘাঁটি হলেই সেই আইন জেগে উঠবে তার দাঁত ও নখ নিয়ে। বাজারে কিছুদিন আগে এক ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শুনলাম, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় জঙ্গলের মধ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প হবে?’ তাঁকে বললাম, ‘না না এমন কিছুই হবে না। নিশ্চিন্ত থাকুন।’ তাঁকে বললাম বটে, কিন্তু আমরা তো সত্যিই কিছু জানি না। তবে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অসমে যদি অমন কারাগার তৈরি হতে পারে, তবে এখানে বাধা কোথায়? হ্যাঁ, এখনও পর্যন্ত এখানে বাধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রতিরোধের বাঁধটুকু ভেঙে চুরমার হয়ে গেলে, পড়ে থাকবে শুধুই বিপন্নতা। আজকের এই মিষ্টভাষণ, আজকের যে ইস্তাহারে মধুমাখা প্রতিশ্রুতির বন্যা, সেসব থাকবে তো? ইস্তাহার প্রসঙ্গে ওই ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘স্বপ্নের পোলাওয়ে যত ইচ্ছে ঘি মাখানো যায়, তাতে খরচারও ভয় নেই, আবার বদহজমেরও ভয় নেই।’ তাই বোধহয় বিজেপি এমন ইস্তাহার বানিয়েছে, যা পূরণ করার দায়বদ্ধতা তাদের নেই। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে, আসছি না যখন, তখন একটু আতিশয্য না হয় রয়েই গেল। আসলে ওই ইস্তাহার পনেরো লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি, আচ্ছে দিন আনার মতো প্রতিশ্রুতি। টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া জোচ্চোরদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আমাদের যন্ত্রণাদগ্ধ প্রাপ্তির ঘরে জমা থাকে শুধুই শূন্য। ওই মহা-শূন্যের ওপার থেকে কত প্রতিশ্রুতি ভেসে আসে!
জঙ্গলমহলের ভোটপর্ব শেষ হয়েছে। চলছে নন্দীগ্রামের ভোট। এখন নজর রাখতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে, নজর রাখতে হবে বহিরাগতদের দিকে, নজর রাখতে হবে ইভিএমের দিকে, নজর রাখতে হবে নার্ভাস ভূমিপুত্রদের দিকে। প্রথম দফায় মানুষ ভোট দিয়েছেন উন্নয়নের সপক্ষে। ভোট দিয়েছেন স্বাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে। মানুষের ভোট উৎসবে শামিল হওয়ার উৎসাহ দেখে গেরুয়া শিবির বুঝে গিয়েছে কোথাকার ভোট কোথায় পড়েছে। তাই কি আক্রোশে পরদিনই গ্রেপ্তার করা হল ছত্রধর মাহাতকে? জানি না, আর কত আক্রোশ জমা রয়েছে! মনে হচ্ছে, বাংলা বিজয়ের লক্ষ্যটা এখন প্রধানমন্ত্রীর পদের থেকেও লোভনীয়।
দ্বিতীয় পর্ব
রাজনীতির আকাশে নতুন তারা আব্বাস সিদ্দিকি। কোথায় ছিলেন, কোথা থেকে এলেন? পিছনে স্পনসর কে? কার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে হঠাৎ করে আসরে নামলেন তিনি? সত্যি এসব জানা দরকার।
একটা অঙ্ক কষলেই হিসাব কিন্তু পরিষ্কার। বিজেপির হিসাবমতো তাদের হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক কিছুটা মজবুত। সুতরাং মমতার মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে হবে। সেই লক্ষ্যে আনা হল আসাদুদ্দিন ওয়াইসির মিমকে। কিন্তু বিহারে মিম যতটুকু সাফল্যই পাক না কেন, এখানে সে খাপ খুলতে পারবে না। হিন্দিভাষী মুসলিম এবং বাংলাভাষী মুসলিমের মধ্যে সংস্কৃতিগত আকাশপাতাল ফারাক। এটা বোঝার পরই পর্দার আড়াল থেকে নামানো হল কি সিদ্দিকিকে? বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট হলে মোটামুটি একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে। অর্থাৎ আব্বাস যে বিজেপির হয়ে খেলছেন না, সেটা প্রমাণ করা সহজ হবে। সুতরাং এবারের নির্বাচনে আব্বাসের ছদ্ম-লড়াই অক্সিজেন জোগাবে বিজেপিকেই। কিন্তু আজকের বাঙালি মুসলিমরা অনেক বেশি সচেতন। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখছেন। সমাজে তাঁরা অনেক বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। আজ শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগের অঙ্গুলিহেলনে তাঁদের বশ করা যাবে না। তাঁরা জানেন, আব্বাসকে ভোট দিলে রাজ্য কতটা সুরক্ষিত এবং সেই ভোটটা মমতাকে দিলে তাঁরা নিজেরা কতটা সুরক্ষিত। মমতার পতন হলে রাজ্যের চলার পথ যে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাবে, সেটা তাঁরা ভালোমতোই জানেন।
তাই এবারের ভোট কোনও ধর্মীয় আবেগের নয়, এবারের ভোট কোনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার নয়, এবারের ভোট প্রতিশ্রুতির লোভে বশবর্তী
হয়েও নয়। এবারের ভোট উন্নয়নের, এবারের
ভোট বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার, এবারের ভোট আমাদের জন্য তৈরি কোনও
অদৃশ্য মৃত্যুশয্যাকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার। বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি.......।