কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কাউকে দোষারোপ করা কিংবা কারও ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করা এই কলামের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল একটা সোজাসাপটা প্রশ্ন করা: সরকারের স্পর্শকাতর এবং সুরক্ষিত সিদ্ধান্তগুলো কি এমন কারও সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছিল যিনি সিদ্ধান্ত-গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন? অতিরিক্ত একটা প্রশ্ন হল, এই সিদ্ধান্তগুলোর কিছু কি ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’-এর মধ্যে পড়বে?
জুকেরবার্গের জন্য দুঃসংবাদ
এই গোপন ব্যাপারগুলো কীভাবে ফাঁস হয়ে গেল সেটাই এক রহস্য। মনে হয় তাঁরা হোয়াটঅ্যাপে ‘চ্যাট’ করছিলেন। হোয়াটঅ্যাপের কর্ণধাররা দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি করে আসছিলেন যে হোয়াটঅ্যাপের যাবতীয় কথাবার্তা সমস্তরকমে গোপন ও সুরক্ষিত (এনক্রিপটেড ফ্রম এন্ড-টু-এন্ড) এবং ওই আলাপ-আলোচনার মধ্যে কারওরই পক্ষে উঁকি মারার সুযোগ নেই। আরও দাবি করা হয়েছিল যে, কর্তৃপক্ষের কাছে এসবের কোনও রেকর্ড থাকে না এবং কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। ওই দাবিগুলো সত্যি হলে, আমি জানি না, সন্দেহ বাড়ছে কেন? দু’জন ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন হ্যাক হতে পারে—তার মানে, একজন বেআইনিভাবে ওর মধ্যে ঢুকছে এবং তথ্য চুরি করছে? এই প্রশ্নেরও উত্তর আমি জানি না, কিন্তু সন্দেহ বাড়ছে যে এই ধরনের কনভারসেশন হ্যাক হতে পারে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ-এর মালিক এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম মার্ক জুকেরবার্গের জন্য এসবই খারাপ খবর।
এটা হতে পারে যে, দু’জন ব্যক্তির মধ্যে হওয়া নির্দিষ্ট কিছু কথাবার্তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। আমার জানা মতে, প্রকাশিত জিনিসগুলো ( কাগজে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তরফে অস্বীকার করা হয়নি। এগুলো যদি অস্বীকার করা হয় তা হলে এই কলামের ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায়; আর সেটা যদি না হয় তবে কিছু প্রশ্ন ওঠে।
একটা অফিসিয়াল সিক্রেট
২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনা কনভয়ের উপর একটা হামলা হয়েছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘সাংবাদিক’ এবং ‘অন্যজনের’ মধ্যে একটা কথাবার্তা হয়েছিল:
২৩.০২.২০১৯
সকাল ১০.৩১: সাংবাদিক: তাছাড়া, বড় কিছু ঘটবে।
সকাল ১০.৩৩: অন্যজন: আমি নিশ্চিত তুমি পারবে এবং আমি ভীষণভাবে তোমার সাফল্য কামনা করি
সকাল ১০.৩৪: অন্যজন: তোমার সাফল্যের জন্য
সকাল ১০.৩৬: সাংবাদিক: না স্যার, পাকিস্তান। এসময় বড়সড় কিছু করা হবে।
সকাল ১০.৩৭: অন্যজন: এটা এই মরশুমের বড় মানুষের (বিগ ম্যান) জন্য ভালো
তার পর তিনি নির্বাচনে সুইপ করবেন
স্ট্রাইক?? অথবা আরও বড়
সকাল ১০.৪০: সাংবাদিক: নর্মাল স্ট্রাইকের থেকে বড়। এবং একই সময়ে পাকিস্তানের কাশ্মীরের উপর বিরাট কিছু। সরকার আত্মবিশ্বাসী, পাকিস্তানের উপর এমনভাবে স্ট্রাইক করবে যে মানুষ ভীষণ উল্লসিত হবে ও গর্ব বোধ করবে।
(হুবহু শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে)
পুলওয়ামায় হামলাটা ছিল এক সন্ত্রাসবাদী ঘটনা এবং ৪০ জন সেনা নিহত হন। ঘটনাটা প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীদের ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল। এটাই বিশ্বাস ছিল যে এই হামলার ঘটনায় দায়ী লোকগুলোকে পাকিস্তান নিয়োগ করেছিল এবং ট্রেনিং দিয়েছিল। প্রত্যাঘাতমূলক একটা ‘স্ট্রাইক’ প্রত্যাশিত ছিল। এই ‘কনভারসেশনটা’ হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। ‘তিনদিন পর’, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান থেকে পাকিস্তানের বালাকোটে আঘাত হানা হয়েছিল।
ওই ‘কথাগুলো’ কারা শুনেছিলেন সেটা নিয়ে আমি ভাবিত নই। সেই ব্যক্তি, আমি অনুমান করছি, ভাগ্যবান ছিলেন: তিনি যথাসময়ে যথাস্থানে ছিলেন। আমাকে ভাবাচ্ছে কথাগুলো কে ‘বলছিলেন’ এই ব্যাপারটা। সরকারের অংশ নয় এমন এক ব্যক্তির (নন-গভর্নমেন্ট পার্সন) উপস্থিতিতে এই কথাগুলো কেন বলা হয়েছিল? ‘প্রোটেক্টেড ইনফর্মেশন’ শেয়ার করার মতলব নিয়েই কি তাঁরা কথাগুলো বলেছিলেন? যখন এটা ভীষণভাবে প্রত্যাশিত ছিল যে প্রতিরক্ষা বাহিনী পুলওয়ামায় হামলার ঘটনার বদলা নেবে, তখন কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে পরিকল্পিত হামলার বর্ণনা ‘হুবহু ব্যবহৃত শব্দগুলো’ দিয়ে করতে হবে। এটা পরিষ্কার যে, স্পর্শকাতর ও সুরক্ষিত তথ্য কোনও একজন শেয়ার করেছিলেন। কে সেই ব্যক্তি?
কিছু সিদ্ধান্ত ‘কনফিডেনিশয়াল’, কিছু ‘সিক্রেট’, কিছু ‘টপ সিক্রেট’ এবং কিছু ‘ফর ইয়োর আইজ ওনলি’ বা ‘একান্ত ব্যক্তিগত’। পাকিস্তানের একটা টার্গেটে প্রত্যাঘাতের হামলা হয়ে থাকতে পারে ‘ফর ইয়োর আইজ ওনলি’। আমি স্থির নিশ্চিত যে সিদ্ধান্ত-গ্রহণ প্রক্রিয়ায়, তৎসহ সিদ্ধান্তে যুক্ত ছিলেন শুধু প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ), সেনা বাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা এবং ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ডের কমান্ডার। এমনকী স্ট্রাইকের মাত্র ঘণ্টা কয়েক আগে পাইলটদের কর্তব্য-করণীয়টা জানানো হয়ে থাকতে পারে, এবং স্ট্রাইকের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের পৃথক করে (কোয়ারেন্টাইন্ড) রাখা হয়ে থাকতে পারে। ‘হুবহু শব্দগুলি’ কে ব্যবহার করেছিলেন এবং প্রোটেক্টেড ইনফরমেশন কে শেয়ার করেছিলেন তার ভিত্তিতে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।
আমার উদ্বেগ হল, তথ্যটা এমন কাউকে (সম্ভবত সোর্সের অজানা) কি শেয়ার করা হয়েছিল যিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর বা ইনফর্মার হয়ে থাকতে পারেন? আমার দ্বিতীয় উদ্বেগ হল এই কথোপকথনের ‘অন্য’ ব্যক্তিটাকে নিয়ে। নিরাপত্তার দিক থেকে তিনি কোন শ্রেণীভুক্ত এবং এই ইনফর্মেশন কি তিনি কারও সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন?
মৃত্যুর প্রতীক্ষা
এই কথোপকথন থেকে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির (তিনি শান্তিতে বিশ্রাম করুন) সুনামের সমান্তরাল ক্ষতি (কোল্যাটারাল ড্যামেজ) হয়েছে:
১০.০৪.২০১৯
দুপুর ১২.৪৫: অন্যজন: জেটলি হলেন ওদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা
সাংবাদিক: এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি একমত
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একজন অত্যন্ত অসুস্থ মানুষের উপর একটা ‘ডেথ ভিজিল’ বা মৃত্যুর প্রতীক্ষা চলছিল।
১৯.০৮.২০১৯
সকাল ১০.০৮: সাংবাদিক: জেটলি এটাকে সাধ্যাতীত করে তুলছেন। কী করণীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) জানে না। প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন বুধবার।
সকাল ১০.০৯: অন্যজন: মানে, মৃত্যু এখনও হয়নি?
সকাল ১০.৫৫: সাংবাদিক: তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে কিছু একটা প্রত্যাশা করছি। এই কারণে দিল্লিতে এই সপ্তাহে আমার একটা মিটিং পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
আমাদের দেশ, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ও তাদের গুপ্ত ব্যাপারগুলোর জন্য আমি দুঃখ অনুভব করি, এবং অরুণ জেটলির পরিবারের জন্যও কম নয়, যিনি ১৯৭৫ সাল থেকে আনুগত্যের সঙ্গে বিজেপি (এবং তার পূর্বসূরি জনসঙ্ঘের) দলের সেবা করে গিয়েছেন।