বাড়তি অর্থ পাবার যোগ আছে। পদোন্নতির পাশাপাশি কর্মস্থান পরিবর্তন হতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পক্ষে থাকবে। ... বিশদ
মোদিজির সমর্থকরা যে পাঁচটি সংস্কার নিয়ে ঢাক পিটিয়েছিলেন, আমার নিবন্ধে সেগুলিকেই বিশ্লেষণ করেছিলাম। আমি এই বলে উপসংহার টেনেছিলাম যে, ‘একটা সংস্কার চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল কি না তা মালুম হয় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার কতটা বাড়ল বা তাতে কতটা গতিসঞ্চার হল, সেটা দেখে।’ আমি ড. পানাগড়িয়াকে সংস্কারের স্বর্ণমান (গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড) স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলাম; তাঁর চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহণ করেছি—প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিধিবিধান কিছু বদলাইনি।
ড. পানাগড়িয়ার বিতর্কের মূল প্রসঙ্গে প্রবেশ করছি: সর্বাধিক সংস্কার কে করেছিলেন? ‘সর্বাধিক’ কথাটি মাথায় রাখুন। ড. পানাগড়িয়ার মতে, এই ব্যাপারে চ্যাম্পিয়নরা হলেন—পি ভি নরসিমা রাও এবং অটলবিহারী বাজপেয়ি, এবং নরেন্দ্র মোদি এই দু’জনের পঙ্ক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও বাদ ড. মনমোহন সিং। বিশ্বের বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ এমন উপনীত সিদ্ধান্তে হতবাকই হবেন। তাঁদের মধ্যে ড. পানাগড়িয়ার গুরু প্রফেসর জগদীশ ভাগবতীকেও রাখছি।
এটা হতে পারে যে, যেহেতু ড. পানাগড়িয়া ‘সর্বাধিক’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যেটা পরিমাণগত পরিমাপ নির্দেশ করে। আমাদের একটা ‘তালিকা’ তৈরি করে ‘গণনা’ করা দরকার কোন প্রধানমন্ত্রীর আমলে কতটা কী সংস্কার হয়েছিল। আমি ইতিমধ্যেই পাঁচটি সংস্কারের উল্লেখ করেছি, ড. পানাগড়িয়া যেগুলিকে মোদিজির কৃতিত্ব বলে দাবি করেছেন: ১. পরিশোধে অক্ষমতা এবং দেউলিয়া বিধি (ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপসি কোড, সংক্ষেপে আইবিসি)। ২. কৃষি আইন। ৩. শ্রম সংস্কার। ৪. মেডিক্যাল এডুকেশনের সংস্কার। ৫. প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উদারীকরণ।
কিছু কারণে ড. পানাগড়িয়া জোড়াতাপ্পির জিএসটি-টাকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেননি এবং বিপর্যয় ঘটাল যে ডিমানিটাইজেশন বা নোট বাতিল কাণ্ড সেটাকেও তিনি চেপে গেলেন। ব্যাপারটি সম্পূর্ণ করার জন্য আমরা এই দু’টিকে অবশ্যই ওই পাঁচটির সঙ্গে জুড়ব। তার মানে মোদি জমানায় ‘সংস্কার’ হয়েছিল সাতটি।
আমি ফের এই বিতর্কে যাব না যে—নিছক ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ গঠন করে ‘মেডিক্যাল শিক্ষার সংস্কার’ করা হয়েছে কি না, কিংবা ‘এফডিআই উদারীকরণ’-এর কৃতিত্ব পুরোটা মোদিজিকে দেওয়া হবে কি না—যেন তিনিই প্রথম এফডিআইয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু পরিমাণগত গণনাই করছি, গুণগত মূল্যায়ন করছি না। তাতে স্কোর হল ‘সাত’।
ড. মনমোহন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৪-১৪ পর্বে। তাঁর আমলের একটি তালিকা তৈরি করছি এবং কী কী সংস্কার হয়েছিল গুনে দেখছি। তালিকায় চোখ রাখার আগে কিছু কথা মাথায় রাখুন। যেসব সংস্কার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল সেগুলিকে বাদ দিয়েই এই হিসেবটা করছি। যেমন ব্যাঙ্কিং ক্যাশ ট্রানজাকশন ট্যাক্স, মোটা অঙ্কের নগদ টাকার উইথড্রল ও ডিপোজিটের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। আমি আরও বাদ রেখেছি ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং কমপিটিটিভনেস কাউন্সিল এবং ইনভেস্টমেন্ট কমিশনের মতো ব্যবস্থাকে, যেগুলি ভীষণ রকমের ব্যক্তি-কেন্দ্রিক। কিছু সংস্কার ইউপিএ শুরু করেছিল কিন্তু এখন সেগুলি অন্য নামে পরিচিত, এবং সেগুলিকেও এর মধ্যে ধরা হয়েছে। সংস্কার ব্যবস্থার আয়ু ও স্থায়িত্ব খুঁটিয়ে দেখার ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করেছি।
ড. পানাগড়িয়ার দেওয়া গ্রোথ রেট নম্বরগুলি আমি মেনে নেব: নরসিমা রাও ৫.১ শতাংশ, বাজপেয়ি ৫.৯, ড. সিং ৭.৭ এবং মোদি ৬.৮। নম্বরের ভিত্তিতে, পাঁচ বছরের দু’টি টার্মে ড. সিংয়ের রেকর্ড যে-কোনও প্রধানমন্ত্রীকে অনেকখানি ছাপিয়ে গিয়েছে। (ড. সিংয়ের প্রতি সুবিচার হবে আর একটি কথা মনে রাখলে যে, নরসিমা জমানায় শুরু হওয়া অনেক সংস্কারের পিছনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. সিংয়ের কৃতিত্ব ছিল, ওইসব সংস্কারের প্রকৃত কর্তা তিনিই।)
২০০৪-১৪ সালের জমানায় যেসব সংস্কার করা হয়েছিল নীচে তার অতি সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দিলাম:
১. মূল্যযুক্ত কর ব্যবস্থা (ভ্যাট)। ২. একশো দিনের কাজের প্রকল্প (এমজিএনআরইজিএ)। ৩. আধার। ৪. বেনিফিসিয়ারির অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা হস্তান্তর (ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার বা ডিবিটি)। ৫. ‘নো ফ্রিলস’ বা ‘জিরো ব্যালান্স’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ৬. আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরণ। ৭. শিক্ষার অধিকার আইন। ৮. জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এবং আশা। ৯. ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন। ১০. ন্যাশনাল হর্টিকালচার মিশন। ১১. মৌসম-ভিত্তিক শস্যবিমা। ১২. এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) সংক্রান্ত আদর্শ আইন। ১৩. ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট মিশন অ্যান্ড কর্পোরেশন। ১৪. সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার উপর সেন্ট্রাল ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (সেনভ্যাট)। ১৫. সিকিউরিটিজের বিলুপ্তির উপর দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভ। ১৬. সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশান ট্যাক্সের (এসটিটি) প্রবর্তন। ১৭. খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই)। ১৮. কয়লা উত্তোলনে বেসরকারি উদ্যোগের অংশগ্রহণ। ১৯. পেট্রল, ডিজেলে ভর্তুকি বিলুপ্তি। ২০. লিঙ্গসমতার ভিত্তিতে বাজেট তৈরি ও বিশ্লেষণ বা জেন্ডার বাজেট। ২১. স্টকব্রোকারদের লাভের উদ্দেশ্যহীন (নট-ফর-প্রফিট) যে অ্যাসোসিয়েশন ছিল সেটাকে লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত (ফর-প্রফিট) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর (ডিমিউচুয়ালাইজেশন অফ স্টক এক্সচেঞ্জেস)। ২২. পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ) আইন। ২৩. কোম্পানি আইন। ২৪. জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন। ২৫. জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ লাভের অধিকার আইন [রাইট টু ফেয়ার কমপেনসেশন (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসেটলমেন্ট) অ্যাক্ট]। ২৬. অরণ্যের অধিকার আইন।
‘আমি সংস্কার করেছি’ এটা বলার মানে নিজেকে নিজে মহিমান্বিত করা। অন্যদিকে, ‘আমার সংস্কার থেকে বৃদ্ধি বা বিকাশ হয়েছে’ কথাটি মানুষের স্বার্থে এবং মানুষের উন্নতির জন্য। পাঠক, এখন বিচার আপনার হাতে।