পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এরকম বেশি নম্বর দেওয়ার আরও অনেক অঙ্ক আছে। যেমন ধরুন, ইস্কুলের পাঠানো নম্বরকে আনুপাতিক হারে বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। আমরা সকলেই জানি স্কুলের পাঠানো নম্বর অনেকটা বেশির দিকেই থাকে। সেক্ষেত্রে কেউ কুড়িতে উনিশ পেলে তার নম্বর হবে একশোয় পঁচানব্বুই, আর কুড়িতে কুড়ি পেলে একশোয় একশো। এতেও পড়ুয়ারা মোটের উপর খুশি থাকবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু আদতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত পরিণতি দেখাতে পারছেন না আমাদের শাসক এবং প্রশাসকেরা। তার একটা বড় কারণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে পড়াশোনায় খুব মেধাবী বা খুব বেশি নম্বর পাওয়া নেতানেত্রীর সংখ্যা কম। যাঁরা বিভিন্ন বোর্ডের মাথায় বসে আছেন তাঁরাও যে সকলে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশে থেকেছেন এমনটা নয়। তাই এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের বেশি নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্তহীনতা প্রকট। গোটা জীবনের প্রেক্ষিতে এই নম্বর সবকিছু নয় তা আমরা সকলেই জানি। তাই খুব জটিল কোন সূত্র বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কম নম্বর না দিয়ে বেশির দিকটাই ভাবা উচিত ক্ষমতাশালীদের। আমাদের দেশের মহামান্য বিচারকেরা এক্ষেত্রে চটজলদি সিদ্ধান্ত না নিলে কচিকাঁচা পড়ুয়ারা এক তুমুল অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাবে। বোর্ডের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল মার্চে। এতদিনে তার ফল বেরনোর কথা। কোভিড সঙ্কটে জুলাই মাসে পরীক্ষার নতুন তারিখ দাগিয়েছিলেন নীতি নির্ধারকেরা। এখন তাতেও বিপুল অনিশ্চয়তা। সেই সময় সংক্রমণ ছিল অনেক কম। কিন্তু বিশেষ না ভেবেই তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন সংক্রমণ দিনে দিনে বাড়ছে, এদিকে তার মধ্যেই পরীক্ষার তোড়জোড়। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে কটা বাস চালানো হবে, এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা স্পষ্ট। পরীক্ষার আঙিনাতেও তাই ঘটছে। বেশ কিছুদিন ট্রেন বন্ধ না রেখে যদি লকডাউনের শুরুতে শ্রমিকদের ভাগে ভাগে নিজেদের রাজ্যে পাঠানো হতো তাহলে অঙ্কের নিয়মে সংক্রমণ কম হওয়ারই কথা। শহরে প্রথমে অল্প কটা বাস না চালিয়ে যদি শুরু থেকেই প্রচুর যানবাহন নামানো হতো তাহলে হয়তো মানুষের এতো হয়রানি হতো না।
তবে নীতিনির্ধারকদের এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পুরোপুরি দায়ী করা ঠিক হবে না। কারণ এতরকমের সীমাবদ্ধতা চারদিক থেকে আসতে পারে যে সমাধান প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যেমন বোর্ডের পরীক্ষায় নাহয় সবাইকে ভালো নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হল। অর্থাৎ এগুলো মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, আইসিএসই, সিবিএসই এসব পরীক্ষার জন্যে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু কী হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়? পশ্চিমবঙ্গে প্রযুক্তিক্ষেত্রের প্রবেশিকা পরীক্ষা এবার অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এটা একটা ইতিবাচক সংবাদ। সেই ফলাফল বেরলে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন সফল পরীক্ষার্থীরা। এখানে কোনও জটিলতা নেই। কিন্তু প্রযুক্তিক্ষেত্রে সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রথম সুযোগটি সম্পন্ন হয়েছে মাত্র, দ্বিতীয়টি এখনও বাকি। বাকি রয়ে গেছে আইআইটির প্রবেশিকাও। চিকিৎসাক্ষেত্রে দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিট এখনও সম্পন্ন হয় নি। এইসব ক্ষেত্রে দশ থেকে পনের লক্ষ প্রতিযোগী প্রবেশিকায় শামিল হন। মোটের উপর ভালো সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসনের সংখ্যা মাত্র কুড়ি তিরিশ হাজার। অল্প কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ভালো। বাকিগুলির অবস্থা তথৈবচ, এদিকে ভর্তি হতে গেলে টাকা লাগে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে প্রবেশিকা পরীক্ষা সম্পন্ন না হলে সফল প্রার্থীদের খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। মুশকিল হল প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে একটি নম্বরেই হয়তো কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী থাকেন। স্বাভাবিক সময়েই আট দশটা জটিল নিয়মের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ করা হয়, যাকে বলা হয় টাইব্রেকার। তাই করোনার দিনগুলিতে পরীক্ষা না নিয়ে যে কোন সূত্র ধরেই মেধাতালিকা বানানো হোক না কেন, তাতে সকলে খুশি হওয়া অসম্ভব। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এই অবস্থায় কিছু আসন বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এখন পড়াশোনা অনলাইনে। তাই নামকরা কলেজে বসার
আসনের সীমাবদ্ধতা এখন কম। এই বিষয়গুলিতে নতুন কিছু ভাবনা চিন্তা করতে হবে নীতি নির্ধারকেরা। তবে আবার মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের পথ প্রায় নেই। অন্যদিকে আগে যেমনটা বলছিলাম, বোর্ডের পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিলে কিন্তু ঝামেলা মিটে যাবে অনেকটা। সবশেষে অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদেরও মনে রাখতে হবে যে সময়টা খুবই খারাপ। বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতিটি মানুষকে এই অতিমারীর ফল ভোগ করতে হচ্ছে। সুতরাং সবটা মনের মত না হওয়াটাই স্বাভাবিক। যাদের হাতে নম্বর আছে তাঁরা যদি কম নম্বরও দেন, সে নম্বর যদি পছন্দ নাও হয়, তাহলেও চটজলদি প্রতিক্রিয়ার কোনও কারণ নেই। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে যেটুকু শিক্ষা হয়, তার থেকে অনেক বড় শিক্ষা মনোমত ফল না হলেও সেটাকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে তাকানো। পরবর্তীকালে সকলেই জানবেন যে এইবারের পরীক্ষার ফলের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা ঠিক হবে না। ফলে ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে আবার নতুন করে পরখ করা হবে প্রার্থীদের। জীবনের সমস্ত পরীক্ষার ফল এই কোভিডের দিনগুলোতে নির্ধারিত হয়ে যাবে এমনটা নয়। তার থেকে অনেক বেশি সত্য আজকের বেঁচে থাকা আর আগামীর লড়াই। এখন তাই সবথেকে জরুরি এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবক-অভিভাবিকাদের পরিণতমনস্কতা, সোজা বাংলায় মাথাটা ঠান্ডা রাখা।