বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
বর্তমান অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম বর্তমান আর্থিক সমীক্ষায় বলেছিলেন, অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গেলে উচ্চ সমৃদ্ধির হার আবশ্যক। উচ্চ সমৃদ্ধির হার তখনই সম্ভব যখন সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও রপ্তানির গুণগত চক্রের স্থায়িত্ব বজায় থাকে। সরকারি পরিসংখ্যান: ২০১১-১২ অর্থবর্ষে গৃহস্থের সঞ্চয় ছিল জিডিপির ২৩.৬%। ২০১৭-১৮ তে কমে দাঁড়ায় ১৭.২%। মোট স্থির মূলধন গঠনের অনুপাত ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ছিল জিডিপির ৩৬.৫%। ২০১৭-১৮-তে কমে দাঁড়ায় প্রায় ৩০%। রপ্তানির অবস্থাও মোদির আমলে খুব খারাপ। ২০১৩-১৪-তে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ছিল ৩১৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোদি সরকার তার প্রথম ৪ বছরেও ইউপিএ আমলের শেষ বছরের পণ্য রপ্তানি আয়ের সীমা ছুঁতে পারেনি। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষেই ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের রপ্তানি আয়ের সীমা অতিক্রম করেছিল। গত অর্থবর্ষেও ইউপিএ-র শেষ বছরের পণ্য
রপ্তানি আয়ের সীমা অতিক্রম করতে পারিনি। বিশ্ব শুল্ক-যুদ্ধ, করোনা-যুদ্ধ এবং গলওয়ানে গভীর উদ্বেগজনক সংঘাতে এবছরেও রপ্তানি আয়
বৃদ্ধির আশা ক্ষীণ। তাহলে রপ্তানি বাড়ল কোথায়?
প্রশ্ন হল, ঋণের সুদ কমলে দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে কতখানি? প্রাণ ফিরেছে কি শিল্পে? বাড়ছে কি পণ্যের চাহিদা ও কর্মসংস্থান? সরকারি তথ্য: ১ আগস্ট ২০১৮ থেকে ৪ অক্টোবর, ২০১৯ পর্যন্ত টানা ১৪ মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৬ বার রেপো রেট (যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোকে ঋণ দেয়) কমিয়েছে ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট (৬.৫০ থেকে ৫.১৫ শতাংশ)। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও তাদের সুদের হার ৬০ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছিল। কিন্তু বিনিয়োগ কতখানি বেড়েছে বা দেশের অর্থনীতির চাকার কতটা ঘুরেছে, তা গত ৩০ মে-র সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট। গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২%। যা ১১ বছরে সর্বনিম্ন। ২০১৯-২০-র শেষ ত্রৈমাসিক বৃদ্ধি মাত্র ৩.১%। যা ৮ বছরে সর্বনিম্ন। কেন এমন ঘটল?
মোদ্দা কথা, এক নাগাড়ে সুদ কমানো সত্ত্বেও প্রাণ ফিরছে না শিল্পে। ৩০ মে-র সরকারি তথ্য: গত অর্থবর্ষে মূলধনী পণ্যে খরচ কমেছে ৬.৫%। এটা কার্যত রেকর্ড। মুলধনী পণ্যে খরচ হ্রাসের অর্থ হল উৎপাদনও কমা। কারণ বাড়ছে না জিনিসের চাহিদা। ফলে কর্মসংস্থানও কমেছে। এর ফলে গত বছরে দেশের আর্থিক সমৃদ্ধিও গত ১১ বছরে সর্বনিম্ন। সুদ ক্রমশ কমানো সত্ত্বেও অর্থনীতির চাকা ক্রমশ নিম্নগামী। অর্থাৎ সুদ ছাঁটাইয়ের সরাসরি সুবিধা পাচ্ছেন শুধু বাড়ি গাড়ির ঋণগ্রহীতারা। কিন্তু তাঁরা জনসংখ্যার সামান্য এক শতাংশ।
অন্যদিকে, এক নাগাড়ে সুদ কমার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে স্থির আয়ের উপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষ।
এদিকে, করোনা মহামারীর মাঝে মাত্র দু’মাসের কম সময়ের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১১৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে। ২৭ মার্চ কমিয়েছে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট (৫.১৫% থেকে ৪.৪%)। ২২ মে কমিয়েছে ৪০ বেসিস পয়েন্ট (৪.৪০% থেকে ৪%)। ফলে, পাল্লা দিয়ে কমেছে ডাকঘর স্বল্পসঞ্চয়ে সুদের হার। ব্যাঙ্কের সুদের হারও। ১ এপ্রিল ২০২০-তে এক ধাক্কায় স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার ০.৭০ থেকে ১.৪০ শতাংশ কমেছে। সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সুদের হার ৮.৬০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪০ শতাংশ। ৫ বছরের মান্থলি ইনকাম স্কিম, এনএসসি, রেকারিং ডিপোজিট ও স্থির আমানতে সুদের হার ১.১ থেকে ১.৪ শতাংশ কমেছে। কিষান বিকাশ পত্র, পিপিএফ এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে সুদের হার ০.৭ থেকে ০.৮ শতাংশ কমেছে। স্টেট ব্যাঙ্কে ৫ বছরে স্থির আমানতে সুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৪%। প্রবীণদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৬.২%। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীর বয়োবন্দনা প্রকল্পেও সুদের হার ৮% থেকে কমিয়ে ৭.৪% করা হয়েছে।
চরম উদ্বেগের বিষয় হল, আমানতের জমায় সুদ কমলে তা সরাসরি আঘাত করে সঞ্চয় প্রবণতাকে। চক্রক্রমিকভাবে বিনিয়োগ, উৎপাদন, আয়, চাহিদা, ব্যয় ও সঞ্চয়ে সেই আঘাত ফিরে আসে। অর্থাৎ সুদ অস্বাভাবিকভাবে কমার জন্য সঞ্চয় প্রবণতাও কমছে। যাঁরা মূলত সুদের উপর নির্ভরশীল তাঁদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। অতিমারীর সময়ে মাত্র একদিনের মধ্যে (গত ৩১ মার্চ-১ এপ্রিল) পোস্ট অফিস সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সুদের হার কমানো হল ১২০ বেসিস পয়েন্ট (৮.৬০% থেকে ৭.৪০%)। অর্থাৎ মাত্র ১ দিনের মধ্যে প্রবীণেরা তাঁদের জমার প্রায় ১৪% সুদ কম পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বয়োবন্দনা প্রকল্পে সুদের হার কমল ৬০ বেসিক পয়েন্ট (৮% থেকে ৭.৪০%)। অর্থাৎ প্রবীণেরা তাঁদের জমা টাকার ৭.৫% সুদ কম পাবেন। অথচ মোদি জমানায় ২০১৬-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রবীণেরা ৯.৩০% সুদ পেতেন।
এটা ঘটনা যে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছাড়াও স্থির আয়ের উপর নির্ভরশীল অধিকাংশ ভারতবাসীর কাছে সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু মোদি জমানাতেই ২০১৬-র ১ এপ্রিল থেকেই অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি দুরবস্থা ঘটেছে সমস্ত স্বল্প সঞ্চয়ে। মহামারীতে এর ধাক্কা হয়েছে আরও তীব্রতর। ব্যাঙ্কগুলিকে বাচাতে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হারও একনাগাড়ে কমিয়ে চলেছে মোদি সরকার। একদিকে ক্রমাগত সুদের হার কমায় বিনিয়োগ বাড়ছে না এবং অর্থনীতির চাকা ক্রমশ নিম্নগামী, অন্যদিকে আম জনতার সঞ্চয়ের উপর এটা মরার উপর খাঁড়ার ঘা। আসলে মোদি সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প মূলত কথার কথা—কাজে নয়, বরং উল্টো। আম জনতা সব দিক দিয়ে কার্যত সর্বস্বান্ত। তবুও সরকারের কাছে আশা ভিন্ন অন্য কোনও ওষুধ অবশিষ্ট নেই।