কর্মলাভের যোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা দুযবে। ... বিশদ
নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের সমাবেশ হয়েছিল সদ্যসমাপ্ত মার্চ মাসে দু’দফায়। প্রথমটা ১৩ থেকে ১৫ মার্চ ও পরেরটা ২০-২১ মার্চ। যখন এই সমাবেশ চলছে তখন চীন পেরিয়ে শুধু ইউরোপ নয়, ইরানসহ একাধিক মুসলিমপ্রধান দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। মানুষ মারাও যাচ্ছেন। উপস্থিত ধর্মগুরুদের তা না জানার কথা নয়। এ দেশের সরকারের তরফেও ক্রমাগত সতর্ক করা হচ্ছে। এমনকী, জাতির উদ্দেশে পরপর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নানা কড়া পদক্ষেপের কথাও শুনিয়েছেন। অথচ সব জেনেও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ওই সমাবেশের পরও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মৌলবিরা অনেকেই সেখানে থেকে যান। খোলাখুলি মেলামেশাও করেন। সরকারিভাবে লোকসংখ্যাটা সাড়ে তিন হাজার বলা হলেও বেসরকারি হিসেব বলছে, ওখানে সবমিলিয়ে ৯ হাজার লোক ছিলেন। তাহলে কী দাঁড়াল? একটা ছোট্ট ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে গোটা দেশবাসীকে। ২১ দিনের লকডাউনের কষ্ট স্বীকারের পরেও গত কয়েক দিনের হিসেব থেকে পরিষ্কার, একদিনে দিল্লিতে যত লোক আক্রান্ত হয়েছে তার সিংহভাগই নিজামুদ্দিনের ওই তবলিগ-ই-জামাতের সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ছোঁয়া থেকেই। এককথায়, ওই একটা ভুল গোটা দেশের করোনা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। আরও তুলবে। যখন এই লেখা লিখছি তখনও পর্যন্ত ওই অবৈধ সমাবেশ থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে গিয়ে প্রায় ৬০০ লোকের শরীরে এরা করোনার বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে। সংখ্যাটা প্রতিমুহূর্তে শুধু বাড়ছেই না, একেবারে লাফিয়ে বাড়ছে। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কিছু হাল্কা ছেলেমানুষি মনোভাব আর ধর্মীয় গোঁড়ামির কাছে কি শেষে হার মানবে করোনা বিরোধী লড়াই? আজ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারীর সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
কথায় বলে, যা ধারণ করা হয়, তাহাই ধর্ম। মন্ত্রোচ্চারণ, আজান, ঈশ্বর-আল্লা যে নামেই তাঁকে ডাক না কেন, আসলে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সর্বশক্তিমানেরই পুজো করি আমরা। তাছাড়া আর কিছুই নয়। আজ গোটা পৃথিবী যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার শপথ নিয়েছে, তখন এই বেআইনি ধর্মীয় সমাবেশের উদ্দেশ্য কী? ধর্মপ্রচার না অন্যকিছু? আমাদের মতো ধর্মপ্রাণ দেশে এমন প্রশ্ন তোলাটা নিঃসন্দেহে কিছুটা বাড়াবাড়ি। কিন্তু পরিস্থিতিটা বিবেচনা করুন। যে ছোঁয়াচে মারণ ভাইরাসে ইতালি-স্পেন ধরাশায়ী। দু’টি দেশ মিলিয়েই ২২ হাজারের বেশি লোক মারা গিয়েছে। ৯/১১-এর ভয়ঙ্কর ঘটনাতেও আমেরিকায় এত মানুষের মৃত্যু হয়নি। ইতিমধ্যেই প্রাণহানি আগের বারের দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। লাদেন যা পারেনি, ভয়ঙ্কর আইএস যা পারেনি চীনের ভাইরাস তাই করে দেখাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের সর্বত্র মৃত্যু মিছিল চলছে। লাদেনকে পাকিস্তানে গিয়ে মেরে এসেছিল মার্কিন সেনা, কিন্তু করোনাকে কে মারবে? এ তো অদৃশ্য এক জৈব লড়াই চলছে। এত বড় ও ব্যাপক যুদ্ধের জন্য আগাম কোনও প্রস্তুতিও সেই অর্থে ছিল না মানবজাতির। বিজ্ঞানীরা শুধু মারণ ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছেন। পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম যুদ্ধবিমান তৈরিতে জোর দিয়েছেন, কিন্তু এখন তো এই বিশ্বব্যাপী মহাযুদ্ধে ওই সব আধুনিক অস্ত্রের কোনও প্রয়োজনই নেই। এখন তাই টনক নড়েছে। সবাই অতি সাধারণ ভেন্টিলেটর আর মাস্ক তৈরিতে মন দিয়েছে গোটা পৃথিবী। প্রথম বিশ্বেরই যদি অবস্থা এমন করুণ হয়, তাহলে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা তো সহজেই অনুমান করা যায়। এমনকী আইআইটির কৃতীরাও সব ছেড়ে আজ সাধারণ ভেন্টিলেটর তৈরিতে মন দিয়েছেন। গোটা বিশ্বকে যে অস্ত্র বিক্রি করে, একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব থেকে ফায়দা লোটে সেই আমেরিকাও চূড়ান্ত দিশাহারা! আর আমরা মনের সুখে রাস্তায় বসে আড্ডা মারছি, গুলতানি করছি, জোর করে চায়ের দোকান খোলাচ্ছি, রাজা উজির মারছি! কিন্তু এর পরিণাম কী ভয়ঙ্কর হতে পারে, সে ব্যাপারে মাথাও ঘামাচ্ছি না। ওই যে কথায় বলে, ‘ইগনোরেন্স ইজ ব্লিস’ বা অজ্ঞতা সতত সুখের, তাই প্রত্যক্ষ করছি সদা আনন্দে থাকা মনের সুখে রোজ সকালে বাজার করা বাঙালির আচরণেও।
মনে রাখতে হবে, যে তিনটি দেশের নাম করলাম, সেই আমেরিকা, ইতালি ও স্পেনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের চেয়েও উন্নত, লোকসংখ্যাও অনেক কম। পরিকাঠামোও ভালো। তাদেরই হিমশিম অবস্থা।
সেই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে যদি আমরা এখনও সতর্ক না হই, কথায় কথায় লকডাউন অমান্য করি, তাহলে সঙ্কট বাড়তে বাধ্য। আর একবার যদি আমাদের
মতো বিপুল জনঘনত্বের দেশে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, তাহলে শেষপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা গোনার লোক থাকবে তো?