বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
সাধারণত যে কোনও সংক্রমণের দু’টি গাণিতিক নিয়ম রয়েছে— অ্যারিথমেটিক প্রোগ্রেশন এবং জিওমেট্রিক প্রোগ্রেশন। পাটিগণিতের নিয়মে আক্রান্তের সংখ্যা নির্দিষ্ট হারে যোগ হতে হতে যায়। যেমন— ৩, ৬, ৯, ১২, ১৫। প্রতিবারই আক্রান্তের সংখ্যা তিন করে বাড়ছে। কিন্তু জিওমেট্রিক প্রোগ্রেশনে আক্রান্তের সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়ে। অর্থাৎ ৩, ৯, ২৭, ৮১, ২৪৩, ৭২৯। এভাবে কিছুদিনের মধ্যেই তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। নোবেল করোনা এই দ্বিতীয় নিয়ম, অর্থাৎ জিওমেট্রিক প্রোগ্রেশনে এগচ্ছে। তাই এই ভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্বের এত মাথাব্যথা।
ভেবে দেখুন, গত বছরের ডিসেম্বরের কোনও এক সময় মাত্র একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আজ মাত্র তিন মাসের কম সময়ে পৃথিবীর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই বিশাল অঙ্কের মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার হিসেবটা বুঝে নেওয়া যাক। ধরুন, একজন করোনা আক্রান্ত ৫০ জনের সঙ্গে মিশলেন। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি যদি পাঁচজন লোকের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে থাকেন, তাহলে এক্ষেত্রে সংক্রমণের অঙ্কটি ৫-এর গুণিতক হবে। প্রথমে একজন থেকে পাঁচজনে ছড়াল। সেই ৫ জন থেকে হবে ২৫ জন। আবার ২৫ জনের থেকে বেড়ে হবে ১২৫। সেখান থেকে ৬২৫। এভাবে মাত্র ক’দিনেই সংখ্যাটা বিশাল আকার ধারণ করবে। হঠাৎ করে এত বিশাল রোগীর চাপ বেড়ে গেলে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। ইতালির হাল দেখলেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সেখানে এত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাও করোনার কাছে হার মানছে। রোজ হচ্ছে মৃত্যুমিছিল। তাই ইতালির মারণলীলা দেখেই ভারতকে শিক্ষা নিতে হবে।
‘লকডাউন’ হল এই ভাইরাসের গতিকে স্তব্ধ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি থাকবেন। করোনা আক্রান্ত মানুষ বেশি লোকের সংস্পর্শে আসবেন না। ধরা যাক, লকডাউন না হলে একজন করোনা আক্রান্ত ৫০ জনের সংস্পর্শে এসে ১০ শতাংশ হারে পাঁচজন মানুষকে আক্রান্ত করত। কিন্তু লকডাউন হওয়ায় তিনি কেবলমাত্র তাঁর পরিবারের বড়জোর তিন-চারজন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসবেন। সেক্ষেত্রে পরিবারের একজন ব্যক্তি নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা নাগালে থাকবে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে না। এই পদ্ধতিকে ‘হ্যামার অ্যান্ড ড্যান্স’ বলে। প্রথমে লকডাউনের মাধ্যমে হাতুড়ির জোরালো ঘা মেরে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো হয়। তারপর আসে ‘ড্যান্স’। হাতে বেশ কিছুটা সময় পেয়ে গুছিয়ে নেওয়া।
আমাদের দেশে ২১ দিন লকডাউন করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও রয়েছে নির্ভেজাল বিজ্ঞান। নোভেল করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড মোটামুটি সাতদিন। অনেক সময় সর্বাধিক ১৪ দিনও দেখা গিয়েছে। তাই কমপক্ষে ১৪ দিন লকডাউন কররতেই হতো। এই সময়ে কারও করোনার লক্ষণ দেখা দিলে বাড়িতেই থাকতে হতো। নিজের অজান্তে বাইরের মানুষের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারতেন না। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার আরও বেশি সতর্ক থাকতে ১৪ দিনের পাশাপাশি আরও সাতদিনের আরও একটি ইনকিউবেশন লকডাউন যোগ করেছে।
লেখক বিভাগীয় প্রধান
মেডিসিন, পিজি হাসপাতাল