দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
সেই ২৭ সেপ্টেম্বরের পর ছ’বছর অতিক্রান্ত। রাহুল গান্ধী ২০১৭ সালে সভাপতি হলেন। পুরনোদের সরিয়ে নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বে আনার চেষ্টা করলেন। আবার ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর পদ ছেড়েও দিলেন। আর কংগ্রেস সেই তিমিরেই রয়ে গেল। শুধু কংগ্রেস বললে অর্ধেক বলা হবে। কারণ, বাকি অর্ধেক রাহুল নিজে। এখন শোনা যাচ্ছে, আগামী এপ্রিলের প্লেনারি অধিবেশনে নাকি রাহুল গান্ধী ফের কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসবেন। ভিতরে ভিতরে এমনই চর্চা এবং ঘুঁটি সাজানো চলছে। এখানে দু’টো মোক্ষম বিষয় রয়েছে। প্রথমত, তিনি এলেন, পালিয়ে গেলেন, আবার ফেরার কথা ভাবলেন। রাহুল গান্ধী যদি ফের দলের সভাপতি হিসেবে ফিরেও আসেন, তাহলে কিন্তু নিশ্চিতভাবে এই খামখেয়ালিপনা সঙ্গে নিয়েই ফিরবেন। এমনিতেই মাঝে মাঝে তাঁর কয়েকদিনের জন্য উধাও হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ছুটি কাটাতে। বেশ কঠিন সময়েও। তা সব মানুষই ছুটি চায়। এতে মন্দ কী? তবে নিন্দুকে তা নিয়ে কম রসিকতা করে না! সভাপতি থাকাকালীনও এমনটা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি দমে গিয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। মাঝের কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করায় খানিকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল কংগ্রেস। কিন্তু পরে আবিষ্কার করা গিয়েছে, তা রাহুলের জনপ্রিয়তার জন্য নয়। বরং এর নেপথ্যে ছিল বিজেপি-বিরোধিতা (যা মূলত বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেই চাক্ষুষ হয়েছে। লোকসভা ভোটে নয়)! কাজেই এই মানসিকতা আজ ডুবতে থাকা কংগ্রেসের বর্তমান (থুড়ি ভবিষ্যতের) পরিস্থিতির পক্ষে কি আদৌ কার্যকর হবে? দলকে নতুন তিনি কী দেবেন, যা আগে দিয়ে যেতে পারেননি?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, দল সর্বসম্মতভাবে তাঁকে আবার সভাপতি হিসেবে মানবে তো? একদিকে হরিশ রাওয়াতের মতো নেতারা দাবি করছেন, রাহুলেরই সভাপতি হওয়া উচিত। আবার অন্যদিকে, শশী থারুরের মতো একাংশ বলছেন, সভাপতি নির্বাচন হওয়া দরকার। গান্ধী পরিবারের কাউকেই যে সভাপতি হতে হবে, তার মানে কী?
সেক্ষেত্রে দু'টি উপায় হতে পারে... ১) নির্বাচন হল। গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হিসেবে ইনিংস শুরু করলেন। আর ২) রাহুল মাথার উপর থাকলেন। আর কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে অন্য কাউকে বসানো হল। এবার প্রশ্ন হল, কারা বসতে পারেন এমন আসনে? নাম আসছে শচীন পাইলট, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, অশোক গেহলট ও অবশ্যই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। এঁদের মধ্যে অশোক গেহলট ছাড়া বাকি তিনজনের ক্ষেত্রেই মাথার উপর বসে রাহুল ছড়ি ঘোরাতে পারবেন (তাতে অবশ্য কী কাজ দেবে বলা মুশকিল)। কিন্তু বর্ষীয়ান গেহলটের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না। কারণ গেহলট পুরনো জমানার কংগ্রেসি নেতা, সোনিয়া গান্ধীর অনুগত এবং আহমেদ প্যাটেলের খাস লোক। কংগ্রেসের এই অংশটার সঙ্গে রাহুলের নয়া বাহিনীর খুব একটা বনিবনা নেই। সোনিয়া নিজেও রাহুলের রাজনৈতিক রকম-সকমে মারাত্মক ভরসা করেন বলে মনে হয় না। করলে রাহুল পদত্যাগ করার পর তিনি যখন অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হিসেবে ফিরলেন, ছেলের বসানো লোকেদের সরিয়ে নিজের বিশ্বস্তদের পুনর্বহাল করতেন না!
তাই রাহুল গান্ধী যদি পদে ফিরে আসেন, সেই লড়াই আগের থেকে অনেক বেশি কঠিন হবে। শুধু তাঁর নিজের কাছে নয়, দলের কাছেও। সোনিয়া গান্ধী অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হওয়ার পর অনেকে ভেবেছিলেন, যাক এবার হয়তো কংগ্রেস ধুলোটুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াবে। আদৌ তা হয়নি। সোনিয়ার কাছে কোনও জাদুকাঠি ছিল না। কংগ্রেস তাই এখনও ধুঁকছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে দলের মধ্যের ফাটলও। পরের প্রজন্মের নেতারা মাঝে মাঝেই তোপ দাগছেন বর্ষীয়ানদের বিরুদ্ধে। বিরোধী হিসেবে সেই অর্থে কোনও জোরদার কর্মসূচি নেই। এরপরও তাদের টিকে থাকার একমাত্র কারণ হল, দলটার নাম কংগ্রেস। কিন্তু কতদিন? রাহুল গান্ধী হয়তো পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করবেন। ফিরে আসবেন ‘স্বমহিমায়’। তাও তিনি নরেন্দ্র মোদির যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারবেন না। তেমন কিছু হলে গত লোকসভা ভোটের আগেই একটা কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যেত। একের পর এক প্রকল্প-প্রতিশ্রুতির ঘোষণা রাহুল করেছেন। আর সবই বলতে গেলে ফ্লপ। এমনকী, গরিবদের জন্য ‘ন্যায়’ প্রকল্পও। সরকারে এলে রাহুল গান্ধী আদৌ কিছু করতে পারবেন, তা মানুষ বিশ্বাস করেনি। সেটা পরীক্ষিত। তাহলে কেন কংগ্রেস সেই পুরনো লাইনেই হাঁটবে? এই প্রশ্ন দলের অন্দরেই রয়েছে। এবং খুল্লামখুল্লা।
ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন। প্রমাণ করেছিলেন, তাঁকে ছাড়া, গান্ধী পদবি ছাড়া কংগ্রেসের অস্তিত্ব নেই। তাই তাঁর দলই স্বীকৃতি পেয়েছিল মূল কংগ্রেস হিসেবে। রাহুল নামটা
ইন্দিরার দেওয়া হতে পারে... কিন্তু রাজনৈতিক ক্যারিশমা এই নামের নেই। অন্তত এখনও না।
অর্থাৎ, আগামী দিনে কংগ্রেস যাঁকেই নেতৃত্বে
আনবে, সেই সিদ্ধান্তই হবে পথনির্দেশক। নেতৃত্বে এমন সঙ্কট বজায় থাকলে কংগ্রেস কিন্তু ধীরে
ধীরে সাইনবোর্ডেই পরিণত হবে।
মোদি সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন।