এনআরসি: বাঙালির নয়া আতঙ্ক এবং অপমান
হারাধন চৌধুরী
বাঙালির যেন আতঙ্ক-লগ্নে জন্ম। একটা আতঙ্ক যায়, আবার একটা এসে জোটে। নতুন আতঙ্কের নাম এনআরসি। এনআরসি-আতঙ্ক গ্রাস করেছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকেও। বাঙালিকে নতুন করে নাগরিকত্বের পরীক্ষায় বসতে হবে। অনেকের আশঙ্কা, এ বোধহয় তাদের জীবনের কঠিনতম পরীক্ষা। ফেল করলে আর ভারতে থাকা যাবে না, নিজ দেশে পরবাসী, ফের উদ্বাস্তু, ঠিকানাহীন হয়ে যাবে। সরকারি ঘোষণা কিছু না-হওয়া সত্ত্বেও আতঙ্কটা জোর ছড়িয়েছে। দুটি কারণে: (এক) অসমের সদ্য এনআরসি-হেনস্তা। হেনস্তার শিকার হিন্দু, মুসলমান উভয়ই। (দুই) পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি কার্যকর করার ব্যাপারে দু-একজন আরএসএস এবং বিজেপি নেতার হুঙ্কার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় কোনোমতেই এনআরসি নয়। বিজেপি বা কেন্দ্র চাইলেও তাঁর সরকারি মেশিনারি এই কাজ করবে না। কেউ কোনোরকম ভয় পাবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নানাভাবে আশ্বস্ত করার পরেও চাপা আতঙ্ক কিন্তু রয়ে গিয়েছে। সেটা ভেতরে ভেতরে এতটাই প্রবল হয়েছে যে, সেপ্টেম্বরে জনা দশেক বাঙালি আত্মঘাতী হয়েছেন! ভারত রাষ্ট্রে বাঙালিকে যতবার যতভাবে আতঙ্কের শিকার করে তোলা হয়েছে, আর কোনও ভাষার মানুষকে এই দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হয়নি। অন্য ভাষার ক’জন মানুষ এই দুঃখ কতটা উপলব্ধি করতে পারবেন সংশয় হয়। অথচ, ভারত স্বাধীন হয়েছে মূলত বাঙালিরই রক্তের বিনিময়ে। আর সেই স্বাধীনতার ভাগে বাঙালিকেই বঞ্চনা চলছে ধারাবাহিকভাবে।
৩১ আগস্ট অসমে প্রকাশিত এনআরসি লিস্টে ১৯ লক্ষাধিক নারী-পুরুষের নাম বাদ গিয়েছে। তাঁদের এখন ফরেনার্স ট্রাইবুনালের ভরসায় ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানেও ফয়সালা নাহলে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে দৌড়তে হবে (সেটা কতজন পারবেন)! এতগুলো ধাপেও যদি শিকে না-ছেঁড়ে মানুষগুলির জন্য কী বরাদ্দ হবে, কেউ জানে না। কেউ কেউ ধরে নিচ্ছেন, চূড়ান্ত হতভাগ্যদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প অপেক্ষা করে থাকবে! কারণ, নাগরিকত্বের পরীক্ষায় ফেল মানুষগুলিকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ দেগে দিলেও, নিশ্চিত করেই বলা যায়, কোনও রাষ্ট্রই তাদের নেবে না।
আমরা জানি, অসমের এনআরসি খসড়া তালিকায় ৪২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছিল। তাঁদের প্রত্যেকের প্রবল আতঙ্কে কেটেছে দীর্ঘদিন। চূড়ান্ত তালিকায় চরম হতভাগ্য চিহ্নিত হয়েছেন ১৯ লক্ষাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে হিন্দু বাঙালি ১২ লক্ষাধিক। বাকিরা মূলত মুসলমান। কয়েক বছর আগে এই এনআরসি ধুয়ো ওঠার পর থেকেই অসমের বাংলাভাষীরা উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছিলেন। তার আগে অসমের বাঙালিরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ‘বঙ্গাল খেদা’ নামক এক উগ্র অমানবিক আন্দোলনের কারণে। বাংলাভাষার অধিকার রক্ষার লড়াইতে বাঙালি শিলচরে প্রাণও দিয়েছে। অথচ বাঙালি ঐতিহাসিকভাবেই অসমে অনুপ্রবেশকারী নয়। কারণ, বিংশ শতকের গোড়ায় পূর্ববঙ্গ ও অসম মিলে একটাই প্রদেশ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অসম-পূর্ববঙ্গ যুক্ত প্রদেশের বরাক উপত্যকা ভারতভুক্ত হয়। অর্থাৎ বাংলাভাষী অধ্যুষিত বিশাল এলাকাটি অসম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু উগ্র রাজনীতিক প্রচার করে দিল যে বাংলাভাষীরা তাদের অন্নে বাসস্থানে ভাগ বসাচ্ছে। অতএব, তাদের অসম থেকে খেদাতে হবে!
অন্যদিকে, দেশভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকেও বহু মানুষ পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে উদ্বাস্তু হিসেবে উঠে আসেন। সবাই টাকা পয়সা সোনাদানা আনতে পারেননি। সবার পক্ষে জমিজমা ভিটেমাটি বিনিময় করা সম্ভব হয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছেন বাস্তবিকই একবস্ত্রে। বলা বাহুল্য, এই হতভাগ্যরা মূলত হিন্দু, ভারতের স্বাধীনতার জন্য সমান লড়েছিলেন তাঁরাও। অনুরূপভাবে কিছু মুসলিম পরিবারও পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়া নিরাপদ মনে করেছিল। এখানে বহু মুসলিম যেমন রয়ে গিয়েছেন, তেমনি বহু হিন্দুও থেকে গিয়েছিলেন ওপারে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান তারপর দু-দু’বার বড় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৯৬৫-তে কিছু হিন্দু পরিবার মনে করল, আর পাকিস্তানে থাকা যাবে না; তারা ভারতে চলে এল। আমরা জানি, ১৯৭১-এর যুদ্ধটা যতটা-না ভারত-পাকিস্তানের, তার চেয়ে বেশি বাঙালি জাতিসত্তার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙালিকে জব্দ করার নামে পাক সেনারা নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারতে চলে এসেছিলেন সেবারই। শরণার্থীর প্রবল চাপটা পশ্চিমবঙ্গেই পড়েছিল সর্বাধিক। অসমসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এবং ওড়িশা, বিহার, আন্দামানসহ আরও কিছু জায়গায় একাংশ মানুষ ভাগ্যান্বেষণে চলে গিয়েছিলেন। উনবিংশ শতকের কিছুকাল বাংলা ও বিহার নিয়ে একটা প্রদেশ ছিল। স্বাধীনতার পরও বাংলা-বিহার সংযুক্তির খেলা চলেছিল কিছুকাল। সব মিলিয়ে বঙ্গভূমি এবং বাঙালি জাতিকে কারণে অকারণে গিনিপিগ বানানো হয়েছে। প্রদেশ কিংবা দেশভাগের জন্য বাঙালির মতামত কখনোই নেওয়া হয়নি; দেশবাসীর কতিপয় স্বঘোষিত গার্জেনই গদির লোভে বাঙালি জাতটাকে বার বার ক্ষমতার যূপকাষ্ঠে চড়িয়েছেন। বাঙালিকে নিয়ে সেই অমানবিক খেলা আজও অব্যাহত।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাঙালি হিন্দুর নিজস্ব মাটি বলে কিছু স্বীকৃত হয়নি। বাঙালি সেই বিংশ শতকের গোড়া থেকে খেদানি খেয়েই চলেছে। অসমে যখন এনআরসির হিড়িক উঠল পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা সেভাবে প্রতিবাদ জানালাম না। ভাবখানা এই—এটা নেহাতই অসমের ব্যাপার, আমাদের মাথাব্যথা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবে তা যে নয় সেটা আমরা পশ্চিমবঙ্গে বসেই টের পাচ্ছি কিছুদিন যাবৎ। ক’দিন ধরে এনআরসি আতঙ্কে অনেক পরিবার দিশেহারা। পূর্বপুরুষের জমির রেকর্ড খুঁজে পেতে ভূমি দপ্তরে, রেশন কার্ডের জন্য খাদ্য দপ্তরে, কোনও যুগের বার্থ সার্টিফিকেটের হদিশ পেতে পঞ্চায়েত/পুরসভায় হঠাৎ ভিড় জমে গিয়েছে। ভিড় জমেছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড জোগাড়ের জন্য। কিন্তু সব তোলপাড় করেও অনেকে ন্যূনতম নথি জোগাড় করতে না-পেতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে উঠছেন। এই মওকায় বিরাট দালাল ও অপরাধ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত লাগাতার করছেন মানলাম। কিন্তু সবার মনের জোর তো তাঁর মতো নয়। এছাড়া, মানুষ এটাও ভয় পাচ্ছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তো চিরকাল বাংলায় ক্ষমতায় থাকবে না। তাঁর অবর্তমানে কী হবে? যেমন আধার বাধ্যতামূলক হবে না, একসময় বলা হয়েছিল। বাস্তবে সেই আধারই এখন ভারতবাসীর সবকিছুর আধার হয়ে উঠেছে! অর্থাৎ অভিজ্ঞতা সুবিধের নয়। বিজেপি, আরএসএস নেতাদের হুঙ্কারের ভেতর তাই অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
২১ সেপ্টেম্বর শিলচরে এক অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতা রামমাধব বলেছেন, এনআরসিতে ভুল থাকা স্বাভাবিক। হিন্দু বাঙালিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আরও বলেছেন, ধর্মীয় ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যাঁরা ভারতে এসেছেন তাঁদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে সারা দেশে এনআরসি হয়েছে, শুধু অসমকে বাদ দিয়ে। তৎকালীন সরকারের ভুলে প্রক্রিয়াটি অসমে সাত দশক পিছিয়ে গিয়ে আকারে বড় হয়ে গিয়েছে। সেটার বাস্তবায়নে ছোটখাটো সমস্যা হতেই পারে। এটাকে তিনি স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন! তিনি বলেছেন, আমি কথা দিচ্ছি, এগুলো ধীরে ধীরে শুধরে নেওয়া হবে। পরদিন আরএসএস নেতা মোহন ভাগবতও কলকাতায় এসে হিন্দুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু অনেকগুলি প্রশ্ন ওঠে: আধুনিক রাষ্ট্র, বিশেষ করে ভারত, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র কি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করতে পারে? রাষ্ট্র একচক্ষু হতে পারে না। ‘অনুপ্রবেশ’ যদি ঘটেই থাকে, তার দায় মানুষের একতরফা হবে কেন? অনুপ্রবেশ রুখতে না-পারার দায়টা রাষ্ট্রকেও সমানভাবে নিতে হবে। দায়ী সীমান্তরক্ষী থেকে রাজনীতির কারবারি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও একাংশ। কোন যুগে কে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যা রাষ্ট্র রুখতে পারেনি, তার দায় এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নেবেন কেন? পৃথিবীকে আমরা চেনাব যে আসলে এটাই রামের দেশ, বুদ্ধের দেশ, রবীন্দ্রনাথের দেশ, গান্ধীর দেশ! মানুষের এত অপমান কিন্তু প্রাপ্য নয়। এতে রাষ্ট্রের সম্মানবৃদ্ধি হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুল বার্তা দিচ্ছি আমরা। একদিকে বলছি, ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে যথার্থ ভারতভুক্ত করলাম আর সেইসঙ্গে দেশেরই কিছু মানুষকে বাইরে বার করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছি! আমরা যদি কিছু মানুষের সঙ্গে জঞ্জালের মতো আচরণ করি অন্য কোন দেশ তাদের নেবে? এবং, কেন নেবে? বৈরি হয়ে উঠতে পারে নিকট বন্ধু বাংলাদেশও। আমাদের ভাবতে হবে—সেদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের জীবন বিপন্ন হবে না তো এই ঘটনার তিক্ত প্রতিক্রিয়ায়? আজ ‘মুসলিম অনুপ্রবেশ’ নিয়ে বিজেপি যে-কথা বলছে, কাল কংগ্রেস বা অন্য কোনও দল বা জোট এসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই নিয়ম বদলে দেবে না তার কী গ্যারান্টি আছে? এনআরসি বাস্তবায়নের ধারা মেনে নিয়ে তারা যদি বলে, রাষ্ট্র কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না—হিন্দুদেরকেও একই পরীক্ষায় পাশ করে আসতে হবে! তখন তাকে অন্যায় বলা যাবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপ হিন্দুদের পক্ষে কতখানি স্বস্তিদায়ক হবে, তা ভেবে রাখা দরকার।
আর যদি ডিটেনশন ক্যাম্পের বিভীষিকা দেখানোর চেষ্টা করে সরকার, তবে তা হয়ে উঠবে কিন্তু নতুন নতুন উগ্রপন্থী সৃষ্টির আঁতুড়ঘর! কিছু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর অর্থ, তাঁদের সমস্ত নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। তাঁদের কাছ থেকে কোনও কাজ এবং আয় পাওয়া যাবে না। উপরন্তু কোষাগারের বিপুল অর্থ খরচ করতে হবে তাঁদের অনির্দিষ্টকাল খাওয়াতে পরাতে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রের যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা অপরিমেয়।
কোনও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্মাতা নন। নাগরিকরাই রাষ্ট্র গড়েন। সেখানে এনআরসি আতঙ্কে বহু মানুষ ভালোভাবে ঘুমোতে পারছেন না। ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। এতে অর্থনৈতিক প্রগতি ব্যাহত হচ্ছে না কি? দুর্বল অর্থনীতির একটি দেশের পক্ষে এই বিলাসিতা সাজে না। ভুলে যাচ্ছি—কত ছেলেমেয়ের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। তাঁদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশযাত্রা, চাকরিতে যোগদান থমকে যেতে পারে। আটকে যেতে পারে জরুরি চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, গৃহনির্মাণ। কোনোটাই শান্তিমতো করতে পারছেন না অনেকে।
ব্রিটিশের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তারা। বাংলাদেশ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের সিদ্ধান্ত কত বড় ভুল ছিল। তারপরেও আমাদের চৈতন্য হল না। আমরা এখনও ছক কষে যাচ্ছি এপারে শুধু হিন্দুরা এবং পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে মুসলমানরা ‘ভালো থাকব’ বলে। তার মানে তো ভ্রান্ত প্রমাণিত দ্বিজাতিতত্ত্বেই সিলমোহর সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা! কার স্বার্থে? এইভাবে ভালো থাকা যায় না। ভালো থাকতে হবে সবাইকে নিয়ে। শরীরের কোনও কোনও অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন সবসময় বোঝা যায় না। যখনই সেটা বাদ দেওয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে, তখনই টের পাওয়া যায় সেটারও সমান প্রয়োজন ছিল।
মানুষ শুধু মুখ নিয়ে জন্মায় না, তার দুটি হাতও থাকে, যা সম্পদ সৃষ্টি করে। দুটি হাত যত সম্পদ সৃষ্টি করে, তার সবটা সে একা ভোগ করে না। প্রত্যেকের উদ্বৃত্ত সম্পদে দেশ গড়ে ওঠে। বিজেপি আরএসএস নেতারা যে রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে এসে গরম গরম ভাষণ দিচ্ছেন—তাঁরা হয়তো জানেন না ওই রাস্তাটা তাঁরাই তৈরি করেছেন, যাঁদের ভারতছাড়া করার ছক কষা হচ্ছে! যে ভাত বা রুটি খেয়ে তাঁদের এত গলার জোর, সেসবও হয়তো ওই হতভাগ্য মানুষগুলির ফলানো ফসল থেকেই তৈরি হয়েছে! তাঁরা যাঁদের চিকিৎসা নিয়ে এত ফিট আছেন, সেই ডাক্তার, নার্স, ওষুধ প্রস্তুতকারকরাও হয়তো ওই গোত্রে পড়েন!
এসব দেখে মানুষের মনে হবে যে পীড়নের কনসেপ্ট থেকেই রাষ্ট্র ধারণার জন্ম। কিন্তু বাস্তবে তা তো নয়। রাষ্ট্রনেতাদের মানবিক আচরণ দিয়েই এই ভুল ভাঙাতে হবে। তা নাহলে ‘মেরা ভারত মহান’ কিংবা ‘ভারত মাতা কি জয়’ উচ্চারণের নৈতিক অধিকার হারাব আমরা।
01st October, 2019