কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কিন্তু একেবারে শুরু থেকেই হোয়াইট হাউসের অফিসঘর গুলোতে ঢুকতে পারেননি সাংবাদিকরা। তাঁরা মূলত হোয়াইট হাউসের ভিতরে ইতস্তত ঘোরাফেরা করে সংবাদ সংগ্রহ করতেন। রুজভেল্টের সময়, ১৯০০ সালের দিকে সাংবাদিকরা প্রথম প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করে সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পান। অনেকেই বলেন, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট একদিন খেয়াল করেন সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে বৃষ্টিতে ভিজে নিউজের সোর্স খুঁজছেন। তারপরই রুজভেল্ট সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসের ভিতর অফিস তৈরি করার অনুমতি দেন। ওই সময় সাংবাদিকদের মাত্র একটি টেবিলের সামনে বসে কাজ করতে হতো, তাদের আলাদা কোনও অফিস বা ঘর ছিল না। প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারির অফিসের বাইরে টেবিলটা বসানো ছিল। সেক্রেটারি নিয়মিত রিপোর্টারদের ব্রিফ করতেন। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের নিজস্ব সংবাদ ঘর বরাদ্দ করা হয় হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে। যা এখনও পর্যন্ত ‘হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজকর্ম পরিচালনা করছে।
মূলত তিনটি কারণে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকরা স্থায়ীভাবে খবর সংগ্রহের কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। হোয়াইট হাউসে যখন সাংবাদিকরা প্রথম প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন, তখন থেকেই খবরের আশায় সবসময় সাংবাদিকদের ভিড় লেগেই থাকত সেখানে। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন ইভেন্টের খবর পরিবেশন করতেন। এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে সাংবাদিকরা নিয়ম করে উপস্থিত থাকতেন। ফলে, হোয়াইট হাউসের কর্তারা তাঁদের চারপাশে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে যান। ধীরে ধীরে সাংবাদিকতার দুনিয়া প্রশস্ত হয়। সংবাদের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। হোয়াইট হাউস নিয়ে পাঠকদের আগ্রহ দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়। তাঁদের সেই চাহিদা মেটাতে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের স্থায়িত্বকরণের দিকটিও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। মার্কিন জনগণ তাঁদের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও তার প্রয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়ে ওঠেন। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের কাছে জনগণের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বটা সাংবাদিকদের কাঁধে এসে পড়ে।
‘হোয়াইট হাউস প্রেস কোর’ হচ্ছে প্রায় ২৫০ জন সাংবাদিকের একটি দল, যাঁদের মূল কাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর আমলাদের কর্মকাণ্ড ও নীতিনির্ধারণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো। এই দলে পত্রিকা, ইলেকট্রনিক, রেডিও ও টেলিভিশনের সাংবাদিকদের পাশাপাশি রয়েছেন বিভিন্ন সংবাদসংস্থার নিয়োজিত ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফার। এই সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসের ভিতরের খবর যেমন সংগ্রহ ও সরবরাহ করেন, তেমনই আবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সব জায়গায় সফর করেন। আর প্রেসিডেন্টের হাঁড়ির খবর জানা ও জানানোর জন্যই গুচ্ছের পয়সা খরচ করে এসব সাংবাদিকদের নিয়োগ করে মিডিয়া হাউসগুলো। সাংবাদিকরা যে অঞ্চলে কাজ করেন বা যে বিষয় নিয়ে কাজ করেন, তাকে তাঁর বিট বলা হয়। যাঁরা রাজনৈতিক খবরাখবর সরবরাহ করেন, তাঁদের বিটকে বলা হয় পলিটিক্যাল বিট। হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক প্রতিনিধিরাও পলিটিক্যাল বিট রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন, তবে বাকি সব পলিটিক্যাল রিপোর্টারের চেয়ে তাঁদের স্থান যথেষ্ট উচ্চমার্গীয়। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের পরিচালনা কেন্দ্র ও তার পরিচালকদের পাশে থেকে কাজ করা মোটেই কোনও ছোটখাট ব্যাপার নয়। হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর প্রশাসনের খুব কাছে থাকার সুযোগ পান। হোয়াইট হাউসে কাজ করা নিয়ে একবার একজন সাংবাদিক মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা এমন একটা শহরে কাজ করি, যেখানে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারাটাই সবকিছু। হোয়াইট হাউসে কাজ করার জন্য অনেক সাংবাদিক ফুটবল মাঠের সমান আকৃতির ব্যক্তিগত অফিস ছেড়ে দিয়ে ওয়েস্ট উইংয়ে একটা ভাগ করা ছোট ঘরে কাজ করতেও দ্বিধা করেন না।’
হোয়াইট হাউসের বর্তমান সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্টের যতটা কাছে ঘেঁষতে পারেন, শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯০০ সালের দিকে তার চেয়েও বেশি কাছাকাছি যেতে পারতেন। ওইসময় এমনও হতো যে সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্টের অফিস রুমে গিয়ে তাঁর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে নিরবচ্ছিন্ন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতেন। এই ধরনের সাক্ষাৎকারে কোনও পরিকল্পনা বা স্ক্রিপ্ট থাকত না। ফলে অনেকসময় দেখা যেত একেবারে ভিতরের খবরও বের করে ফেলেছেন সাংবাদিকেরা। এই সাংবাদিকরাই ইতিহাসের একটি অংশ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসন ও সাংবাদিক, দু’পক্ষের সম্পর্ক বেশ করুণ। এখন আর সাংবাদিকেরা প্রেসিডেন্টকে কড়া প্রশ্ন করতে পারেন না। আর প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারির পক্ষ থেকেও খুব কম তথ্য পান তাঁরা। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সরাসরি সম্পর্ক অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রিত। বর্ষীয়ান সাংবাদিক সাইমুর হার্শ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এর আগে কখনও হোয়াইট হাউস প্রেস কোরকে এত দুর্বল অবস্থায় দেখিনি। অনেক সময় মনে হয়, খবর সংগ্রহের চেয়ে সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউস ডিনারের প্রতি আগ্রহ বেশি।’
নিক্সন, বুশ, ওবামা থেকে শুরু করে হালের ট্রাম্প, প্রত্যেকেই সাংবাদিকদের তথ্য অধিকারের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেছেন। নিক্সন সাংবাদিকের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, কারণ তাঁরা প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বেশ কড়া নিউজ করেছিলেন। বুশ তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে সাংবাদিকদের তথ্যাধিকার হরণ করেছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তো চেয়ারে বসার পর রিপোর্টারদের প্রেস রুম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের কাছে সাংবাদিকরা পৃথিবীর ‘অসৎ মানুষ’ বলে বিবেচিত। ট্রাম্প প্রশাসন মিডিয়াকে অঘোষিত বিরোধী দল হিসেবে বিবেচনা করে। তবে এখনও পর্যন্ত মিডিয়াকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার ধৃষ্টতা কোনও প্রেসিডেন্টই দেখাননি।