বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
মুম্বইয়ের কাছে পালাঘর জেলার জওহর এলাকার তিনটি গ্রামের মানুষ এবার সকাল থেকে ভোট দেননি। গ্রামবাসীর বেশিকিছু দাবি ছিল না। শুধু বলা হয়েছিল জলের ট্যাঙ্কার যেন সপ্তাহে তিনদিনের পরিবর্তে চারদিন আসে। অন্তত এই গরমের সময়টা। জওহর এলাকার তিনটি গ্রামের জলের সোর্স হল দুটো কুয়ো। তবে দুটোই শুকনো কুয়ো। কুয়োর নিজস্ব জল নেই। সপ্তাহে তিনদিন সরকারি ট্যাঙ্কার এসে সেই কুয়োয় জল ঢেলে যায়। নতুন ভারতে এটা অবশ্য চালু দৃশ্য। আরও ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখা যাবে নাসিকে। রামঘাটে মাঝেমধ্যে গোদাবরী নদীতে ট্যাঙ্কার এসে জল ঢেলে দিয়ে যায়। যাই হোক, যে তিনদিন গ্রামে ট্যাঙ্কার আসে, সেই তিনদিন ভোর সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠে গোটা গ্রামের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্য খাওয়া দাওয়া করে রেডি হয়ে যায় জল আনতে। দেখা যাবে দলে দলে মিছিলের মতো করে গ্রামবাসী যতরকম পাত্র আছে হাতে, মাথায় নিয়ে ওই কুয়োর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বুথে ভোটকর্মীরা বসে আছেন। ভোটার নেই। এই খবর যেতেই অবশেষে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার নিজে এলেন। প্রতিশ্রুতি নিয়ে নয়। ট্যাঙ্কার নিয়ে। তাঁর গাড়ির পিছনেই ছিল ট্যাঙ্কার। সেই ট্যাঙ্কার কুয়োয় জল ঢাললো। তারপর গ্রামবাসী ভোট দিতে গেলেন। পালাঘরের জলসংকটের যেখানে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা, সেখানে পালাঘর থেকে থানে জেলার এলাকার পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাকারী ম্যানগ্রোভ অরণ্য কেটে ফেলা হবে বলে স্থির হয়েছে। কারণ বুলেট ট্রেন। মুম্বই থেকে আমেদাবাদ ৫০৮ কিলোমিটার বুলেট ট্রেনের জন্য শুধু মহারাষ্ট্রের এই এলাকাগুলিতে ৫৪ হাজার ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুলেট ট্রেনের জন্য গুজরাত আর মহারাষ্ট্রের ১৪০০ হেক্টর জমি লাগবে। ১২টি স্টেশন লাগবে, ৩৫০ কিলোমিটার ঘণ্টায় স্পিড। মুম্বই থেকে আমেদাবাদ যেতে সময় কমে যাবে ২ ঘণ্টা। কোন কোন এলাকা পড়বে এই রুটে? সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে লেপার্ডের সংখ্যা সবথেকে বেশি, থানে ক্রিক ফ্লেমিঙ্গো স্যাংচুয়ারির যেটা মাইগ্রেটরি বার্ডসের চারণভূমি। গোটা প্রকল্পে প্রায় ৮০ হাজার গাছ কাটা হতে পারে। মহারাষ্ট্রে যেখানে সবথেকে বেশি খরা আর জলসংকট, সেখানে ঠিক সেই জেলাগুলির উপর দিয়েই বুলেট ট্রেন নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়ল কেন? যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সমস্যার কথা উপলব্ধি করে জলসংকট থেকে রক্ষা পেতে এবার বাজেটে সবথেকে জোর দিয়েছেন এবং বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে কেন এই সিদ্ধান্তগুলি পুনর্বিবেচনা করে দরকার হলে অন্য রুটে বুলেট ট্রেন নিয়ে যাওয়া হবে না? যাতে অন্তত প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পায়? সরকারের কথায় ও কাজে মিল দেখতে না পেলে দেশবাসী সেই সরকারকে সিরিয়াসলি নেবে কেন?
গুজরাতের ভাদোদরা জেলার চান্দোড়ে ৬০০ জন মাঝি প্রতিদিন নিজেদের নৌকা নিয়ে চোখের সামনে দেখতে পান একটু একটু করে এতদিনের চেনা নর্মদা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই মাঝিদের জীবিকা হল মাল্লারাও ঘাট থেকে ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যার্থীদের নিয়ে যাওয়া এবং সেই সঙ্গমে ডুব দিয়ে পুণ্যার্থীরা পিতামাতার অস্থি বিসর্জন করে আবার ফিরে আসে ঘাটে। নর্মদা, ওরসাং এবং গুপ্ত সরস্বতী। এই তিন নদীর মিলনস্থল। তাই সঙ্গম। একটা সময় এখানে নর্মদার বন্যায় আশেপাশের গ্রামে জল ঢুলে পড়ত। আর আজ এই মুহূর্তে অর্থাৎ এই বর্ষাতেও দেখা যায় চান্দোড়ের শুকনো নর্মদায় গাড়ি পার্ক করে পুণ্যার্থীরা কিছুটা হেঁটে হাঁটুজল পেরিয়ে সেই সঙ্গমে চলে যাচ্ছেন। চান্দোড়ের ৬০০ জন মাঝি আর তাঁদের নৌকাগুলি সারাদিন বসে থাকে। সর্দার সরোবর বাঁধ মাঝেমধ্যে যদি জল ছেড়ে দেয় তাহলে নর্মদার এই অংশে জল আবার পূর্ণ হয় কিছুটা। আর নচেৎ সারাবছর শুকনো। এর পরিণাম কী? চান্দোড় ছেড়ে দলে দলে মানুষ চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। ফুড মাইগ্রেশন, জব মাইগ্রেশন, ওয়াটার মাইগ্রেশন দেখছে ভারত অবিরত। এখন রিভার মাইগ্রেশন। নদীতে জল নেই। তাই কৃষি নেই। অর্থাৎ কাজ নেই। সুতরাং গ্রামে থেকে লাভ নেই। দেশের সর্বত্র এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। গুজরাত সরকার নিজেদের কোটা থেকে মাঝেমধ্যে বাঁধ থেকে জল রিলিজ করলেও সেটা স্থায়ী সমাধান নয়। একমাত্র ট্রাইবুনালকে একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলা করতে হবে। সেটাও করা হচ্ছে না। ভারত সরকারের অন্যতম প্রধান একটি প্রকল্পই হল নদী সংযোগ প্রকল্প। দেশের বিভিন্ন নদীকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। যাতে উদ্বৃত্ত জলসম্পন্ন নদী থেকে বাড়তি জল শুকনো নদীতে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বারংবার এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। গোটা প্রকল্প রূপায়ণ করতে অন্তত ১ লক্ষ কোটি টাকা দরকার। এদিকে আবার বুলেট ট্রেন করতেও ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে! আধুনিক রাষ্ট্রে অবশ্যই দুটোই চাই। কিন্তু বাস্তব প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিচার করলে? কোনটা বেশি জরুরি?