যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
পুরুষ হইতেছেন শক্তিমান্। প্রকৃতি শক্তিরই নামান্তর। শক্তি হইতেই শক্তিমান্ কিংবা শক্তিমানেরই শক্তি? শক্তিবাদী বলেন, ধন আছে বলিয়াই ধনবান্। শক্তি আছে বলিয়াই শক্তিমান্। আগে ধন, পরে ধনশালী। আগে শক্তি, পরে তারা হইতে শক্তিবিশিষ্ট শক্তিমান্। পুরুষবাদী বলেন, ধন তো ধনবানেরই করায়ত্ত সম্পদ্। শক্তি তো শক্তিমানের অধীন তত্ত্ব। যে অধীন, সে তো গুণীভূত, যাহার অধীন সে-ই বস্তু, সে-ই স্বাধীন। স্বাধীন, স্বরাট্ বস্তুই প্রধান। অতএব শক্তিমান্ বা পুরুষতত্ত্বই মৌলিক। এখানেই সমস্যা। সকল শাস্ত্রেই এই সমস্যা-সমাধানের প্রচেষ্টা। আদি-তত্ত্ব কে? অনাদি চরম বস্তু কোন্টি? শক্তিমান্, না শক্তি? পুরুষ না প্রকৃতি? ভগবান্, না ভগবতী? কৃষ্ণ, না কালী? তন্ত্রবাদ শক্তিকে প্রধান প্রধান স্থান দিয়াছেন, তদ্বিপরিত অদ্বৈত-বেদান্ত শক্তির কোন স্থানই রাখেন নাই। অদ্বৈত-বেদান্তমতে পরব্রহ্ম নির্ব্বিশেষ, সুতরাং নিঃশক্তিক। শক্তির কার্য্য হইল ক্রিয়া। অদ্বৈত মতে ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয়। ব্রহ্ম শক্তি-সম্পর্কবর্জ্জিত পুরুষ। বস্তুতঃ অদ্বৈত ব্রহ্ম পুরুষও নহেন, প্রকৃতিও নহেন। ব্রহ্ম শব্দ ক্লীবলিঙ্গ। শক্তির ক্রিয়া ছাড়া তো জগৎ চলিতে পারে না। ব্রহ্ম যদি নিঃশক্তিক, তাহা হইলে জগতের কি গতি? ইহার উত্তরে অদ্বৈতবাদী বলেন, জগৎ কোন বস্তু নহে। ইহা মিথ্যা। মিথ্যা পদে অলীক নহে, সতে অসতের ভান। রজ্জুতে সর্পভ্রম।
অদ্বৈতমতে শক্তি মায়া। মায়া সদ্বস্তু নহে। ব্রহ্মই সদ্বস্তু। মায়া সৎ হইলে দুইটি সৎ বস্তুর আশঙ্কা হয়, অদ্বৈতবাদই বিপন্ন হয়। মায়া সর্ব্বতোভাবে অসৎও নহে, কারণ অসতের ভান হয় না। সুতরাং মায়া বা শক্তি সৎ ও অসতের মধ্যবর্ত্তী কোন অনির্ব্বচনীয় স্থিতি। এই মতে শক্তি উপেক্ষিত, মিথ্যা বলিয়া গৃহীত। অনিত্য বস্তুতেই শক্তি খেলা। নিত্য সত্য ব্রহ্মে শক্তির বিদ্যমানতা নাই। সাংখ্যদর্শন পুরুষ-প্রকৃতি উভয়কেই সমান মূল্য দেওয়ায় দ্বৈতবাদী। এই মতে পুরুষের ঈক্ষণে প্রকৃতি ক্রিয়াবতী। প্রকৃতির পরিমাপই জগৎপ্রপঞ্চ। প্রকৃতির বন্ধনে পুরুষ বদ্ধ। প্রকৃতি বন্ধন খুলিলে পুরুষ মুক্ত। এই সমাধান সুন্দর, কিন্তু সুদৃঢ় নহে। দুইটি দুর্ব্বলতায় এই মত অদৃঢ়। (১) পুরুষের বহুত্ব। (২) প্রকৃতির জড়ত্ব। সাংখ্যে পুরুষ এক নহে, বহু। অসংখ্য পুরুষ, প্রত্যেকেই কেমন করিয়া নিত্য ও চরম বস্তু, ইহা ভাবিতে বুদ্ধি বিদ্রোহী হয়। সাংখ্যে পুরুষ চৈতন্যময়। প্রকৃতি কিন্তু অচেতনা, জড়া। জড়ের কর্ত্তৃত্ব থাকিতে পারে না। সুতরাং প্রকৃতি অকর্ত্তা। এই দুই অকর্ত্তার মিলেন অন্ধ-খঞ্জ ন্যায়ে অদ্ভূতভাবে জগৎকর্ত্তৃত্ব হয়, ইহা বুঝিয়া লইতে বুদ্ধি বিভ্রান্ত হইয়া পড়ে। বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ মতে চরম তত্ত্ব পরব্রহ্ম পুরুষোত্তম। তিনি প্রকৃতি সম্পর্কহীন নহেন। তিনি প্রকৃতি দ্বারা বিশেষিত।