যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
এক বক আস্তে আস্তে একটা মাছ ধরতে যাচ্ছে, পিছনে এক ব্যাধ সেই বককে লক্ষ্য করছে; কিন্তু বক সে দিকে চেয়েও দেখছে না। অবধূত সেই বককে প্রণাম করে বললেন, “আমি যখন ধ্যানে বসবো তখন যেন ঐ রকম পিছনে চেয়ে না দেখি।”
একটা চিল মাছ মুখে করে যাচ্ছে, বহু কাক, চিল এসে তার পিছনে ঠুক্রে কামড়ে বিরক্ত করে কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে। সে যেদিকে যায়, সমস্ত কাক, চিলগুলো চেঁচাতে চেঁচাতে তার পিছনে পিছনে যায়। শেষে সে বিরক্ত হয়ে মাছটা ফেলে দিলো আর একটা চিল এসে সেটা নিলো, সমস্ত কাক, চিলগুলো চেঁচাতে চেঁচাতে তার পেছনে যেতে লাগলো। প্রথম চিলটি নিশ্চিন্ত হয়ে এক গাছে বসে রইলো। অবধূত সেই চিলের নিরাপদ অবস্থা দেখে প্রণাম করে বললেন, বুঝলুম সংসারের ভার ফেলে দিতে পারলেই শান্তি; নতুবা মহা বিপদ।
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়।
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।।
শিষ্য গুরুর কোন কাজ দেখবে না, তিনি যাহা আজ্ঞা করেন, নতশিরে তা পালন করবে।
মানুষ-গুরু মন্ত্র দেন কানে।
জগৎ-গুরু মন্ত্র দেন প্রাণে।।
তিন চার জন অন্ধ লোক হাতী দেখতে গেছে। তাদের ভিতর কেউ হাতীর পায়ে হাত দিয়ে এসে বললে যে, হাতী থামের মত; কেউ শুঁড়ে হাত দিয়ে এসে বললে যে, হাতী মোটা লাঠির মত; কেউ পেটে হাত দিয়ে এসে বললে যে, হাতী জালার মত; কেউ কানে হাত দিয়ে এসে বললে যে, হাতী কুলোর মত। এই রকম সবাই হাতীর চেহারা নিয়ে ঝগড়া আরম্ভ করলো। গোলমাল দেখে একজন এসে বললে, “তোমরা কি গোলমাল করছো? তারা সকলে তাকে মধ্যস্থ করলো, সে সমস্ত শুনে বললে, “তোমরা কেউই ঠিক হাতী দেখনি; হাতী থামের মত নয়—হাতীর পা থামের মত; মোটা লাঠির মত নয়—হাতীর শুঁড় লাঠির মত; জালার মত নয়—হাতীর পেট জালার মত; কুলোর মত নয়—হাতির কান কুলোর মত। এ সকল এক সঙ্গে করলে যা হয়, তাই হাতী।” সেই রকম ঈশ্বরের এক দিক যারা দেখেছে, তারা পরস্পর ঝগড়া করে।
ব্যাঙাচির ল্যাজ খসে গেলে ব্যাঙ্ হয়, তখন সে জলেও থাকতে পারে, ডাঙায়ও থাকতে পারে। অবিদ্যা রূপ ল্যাজ খসে গেলে মানুষ মুক্ত হয়। তখন সে সচ্চিদানন্দেও থাকতে পারে, সংসারেও থাকতে পারে।
বাহ্যিক চিহ্ন উপবীত রাখা ঠিক কি না?
আত্মজ্ঞান লাভ করলে আর কোন বন্ধন থাকে না; তখন তার সকল বন্ধন আপনি খসে যায়, তখন বামুন শুদ্দূর বোধ থাকে না, এ অবস্থায় পৈতে আপনি পড়ে যায়। যখন সে বোধ থাকে তখন জোর করে ফেলা উচিত নয়।
হাঁসের ঠোঁটে কি রকম রস আছে, সে দুধে জল মেশানো থাকলে জল রেখে দুধটুকু খায়, অন্য পাখীতে তা পারে না। সে রকম ঈশ্বর মায়ায় মিশিয়ে আছেন, অন্যে তাঁকে আলাদা করে দেখতে পারে না, যাঁরা পরমহংস তাঁরাই মায়াকে ফেলে ঈশ্বরকে নেন।
এ দেহ যখন অসার ও অনিত্য, তখন সাধু ভক্তেরা এ দেহের প্রতি এতো যত্ন করে কেন? খালি সিন্দুকের কেউ যত্ন করে না, যে সিন্দূকে মোহর, টাকা বা দামী জিনিস থাকে, সকলে তাকেই যত্ন করে রক্ষা করে। যে হৃদয়ে তিনি বিরাজ করছেন; সেখানে তাঁর নিত্য লীলা প্রকাশ পাচ্ছে, সাধু ভক্তগণ সেই দেহকে যত্ন না করে থাকতে পারেন না।
মেয়েরা রাত্রে স্বামীর সঙ্গে কি কথা কয়েছে, কারো কাছে বলে না—বলতে ইচ্ছাও হয় না, কোন রকমে প্রকাশ হলে লজ্জা পায় কিন্তু আপনার এক-বয়সীদের কাছে সমস্ত বলে—বলবার জন্য ব্যাকুল হয় ও বলে আনন্দ পায়। ঈশ্বরের ভক্তও যে ভাবে তাঁর সঙ্গে আলাপ করেন, আলাপ করে প্রাণে যে ভাব হয়, যার তার কাছে বলতে ইচ্ছা করেন না—বলে সুখ পান না, আর বলতে গেলে প্রাণে সে ভাব থাকে না। কিন্তু ভক্তের কাছে প্রাণ খুলে সব কথা বলেন—বলেও সুখ পান আর বলবার জন্য ব্যাকুল হন।
ভক্তেরা ভগবানের জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে দেন কেন?
পতঙ্গ একবার আলো দেখলে আর অন্ধকারে যায় না, পিঁপড়ে গুড়ে প্রাণ দেয়, তবুও ফেরে না। ভক্তও সেই রকম ঈশ্বরের জন্য প্রাণ দেয়, তবুও অন্য কিছু চায় না।